Thank you for trying Sticky AMP!!

জৌলুশ হারাচ্ছে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান

গহিনের গান অনুষ্ঠানে ডলি সায়ন্তনী, কলের গানে হাসান, মিউজিক ফেস্টে বাপ্পা মজুমদার

অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় বাজেট না থাকা, মানসম্পন্ন পর্যাপ্ত শিল্পীর অভাব, অদক্ষ প্রযোজক ও পৃষ্ঠপোষকদের চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাওয়ার কারণে টেলিভিশনের সরাসরি অনুষ্ঠান তার জৌলুশ হারাচ্ছে। দিন দিন এই সমস্যা প্রকট হচ্ছে বলে মনে করছেন সরাসরি গানের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রযোজকেরা। প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের অনেকের মতে, সব চ্যানেলে বলতে গেলে মাসের প্রতিটি দিন সরাসরি অনুষ্ঠান প্রচারের কারণে একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে অনুষ্ঠান, তাতে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। একই সঙ্গে লম্বা সময় ধরে চলতে থাকা অনুষ্ঠানের জন্য বাদ্যযন্ত্রী ও শিল্পীদের সেই অর্থে ভালো সম্মানী না থাকায় তাঁরাও সেসব অনুষ্ঠানে যেতে খুব একটা আগ্রহী হন না।

এক যুগ আগে টেলিভিশনে শুরু হওয়া সরাসরি গানের অনুষ্ঠানে এখন আর আগের সেই আমেজ পাওয়া যায় না। মাঝেমধ্যে প্রতিষ্ঠিত ও প্রতিভাবান শিল্পীদের গান গাইতে দেখা গেলেও বেশির ভাগ সময় আনকোরা শিল্পীদের দিয়ে এসব অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়।

বাপ্পা মজুমদার বলছেন, ‘সরাসরি গানের অনুষ্ঠান যে জৌলুশ হারাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশে যেসংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেল, সরাসরি গানের অনুষ্ঠান করার মতো তত শিল্পীই তো নাই।’ একুশে টেলিভিশনে ২০০৭ সালে প্রথম ফোনোলাইভ স্টুডিও কনসার্টের ভাবনা যাঁর মাথা থেকে এসেছিল, সেই আলমগীর হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, ‘বাজেটস্বল্পতা ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে চাইলেও সব সময় প্রতিষ্ঠিত শিল্পীদের দিয়ে গান গাওয়ানো সম্ভব হয় না। তাই তো নতুনদের ওপর নির্ভর করতে হয় বেশি।’

নিউজ চ্যানেল ছাড়া কমবেশি সব চ্যানেলে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়। কোনো চ্যানেলে সপ্তাহের ছয় দিনই চলে সরাসরি গানের অনুষ্ঠান। কোনো চ্যানেলে আবার একাধিক সরাসরি গানের অনুষ্ঠানও হয়।

চ্যানেল আই, একুশে টেলিভিশন, এনটিভি, আরটিভি, বাংলাভিশন, দেশ টিভি, বৈশাখী টেলিভিশন, মাছরাঙা, এশিয়ান, নাগরিক টিভি, মাই টিভি এমনকি বাংলাদেশ টেলিভিশনও সরাসরি গানের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। টেলিভিশন চ্যানেলে বাজেট অপেক্ষাকৃত অনেক কম থাকায় প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় শিল্পীরা সব সময় অনুষ্ঠান করেন না। বিশেষ দিবসে ভালো বাজেট থাকলে তখন প্রযোজকেরা তাঁদের আমন্ত্রণ জানান। বছরের বাকিটা সময় নতুনদের দিয়ে কাজটা সেরে নেওয়া হয়।

এস এ টিভিতে ‘গহীনের গান’ ও ‘এসএ লাইভ স্টুডিও’ নামে দুটি অনুষ্ঠান প্রযোজনা করতেন কামরুজ্জামান রঞ্জু। স্পনসর না থাকায় এখন দুটি অনুষ্ঠানই বন্ধ আছে। তিনি বলেন, ‘দর্শকের দিক থেকেও আগের মতো সেই ভালো লাগা নেই যেমন, ঠিক তেমনি গান বোঝা ভালো প্রযোজকও নেই।’

আলমগীর হোসেন এখন দেশ টিভির নির্বাহী প্রযোজক। তিনি বলেন, ‘শুরুর দিকে শিল্পীরাও অনেক সিরিয়াস ছিলেন। কয়েক দফা মহড়া করে তারপর অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। এখন বিভিন্ন টেলিভিশন শুধু নয়, অনেক রেডিও সরাসরি গানের অনুষ্ঠান করছে। সবকিছু মিলিয়ে আগের মতো সেই অবস্থা নেই। এখন তো শুনি, অনুষ্ঠানের ঠিক দুদিন আগেও শিল্পীকে বললে তিনি নাকি রাজিও হয়ে যান! অথচ এমন একটি অনুষ্ঠানের জন্য বাদ্যযন্ত্রশিল্পীসহ কয়েকবার মহড়া করতে হয়।’

দেশবরেণ্য শিল্পীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘একটা সময় গানের লাইভ দেখতাম, এখন আর দেখি না। বর্তমানে এটা বিরক্তিকর একটা ব্যাপার হয়ে গেছে। আমার অনেক গান শুনে আমিই ঠিক ধরতে পারি না, আমার ওই গানটা গাইল কি না! গানের সুর তো ভুল করেই, কথাও ভুল করে। নতুনদের অনেকে ফ্যাশনে যতটা সচেতন, গাওয়ার প্রতি ততটা সচেতন হলে এ রকমটা হতো না।’

ফোয়াদ নাসের বাবু বলেন, ‘এই ধরনের অনুষ্ঠানে শিল্পী নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটা ফিল্টারিং করাও দরকার।’