Thank you for trying Sticky AMP!!

তাঁদের জন্য মন খারাপ দিলারা জামানের

‘আহারে! রাত নাই দিন নাই, প্রোডাকশনের অল্প আয়ের ছেলেগুলো কত কষ্ট করে শুটিং করে। এক দিন কাজ না থাকলে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটায়। তারা সবার আগে শুটিংয়ে এসে সবার পরে বাসায় যায়। কিছু অভিনয়শিল্পী পুরোপুরি শুটিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। লকডাউনে কাজ বন্ধ হলে এবার তাদের ভয়ানক দুর্গতি হবে।’ কথাগুলো বললেন ৭৯ বছর বয়স্ক অভিনেত্রী দিলারা জামান। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নিজের চেয়ে শুটিংয়ের লাইট-ক্যামেরা সহকারী, প্রোডাকশন বয় ও সহকর্মীদের কথা ভেবেই তাঁর মন খারাপ।

দিলারা জামান। ছবি: প্রথম আলো

করোনার গত মাস থেকেই কোনো শুটিংয়ে অংশ নেননি তিনি। সচেতনতায় বাসায় নিজের কাজ নিজেই করছেন। বেশির ভাগ সময় বাসায় একাই থাকেন। টেলিভিশন দেখে, পত্রিকা পড়ে ও মোবাইল ফোনে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁর সময় কাটে। করোনা এবার যে হারে বাড়ছে, তাতে আপাতত তাঁর ঘরের বাইরে যাওয়া একদমই নিষেধ পরিবার থেকে। প্রতিদিন ২০ মিনিট সতর্কতার সঙ্গে বাইরে হাঁটতে বের হতেন, সেটাও লকডাউনে বন্ধ হয়ে গেছে। সুস্থ থাকতে বাধ্য হয়ে ঘর ও ছাদে হাঁটতে হচ্ছে তাঁকে।

দিলারা জামান জানান, সচেতন থাকলে করোনায় আক্রান্তের সম্ভাবনা কম। সে জন্য সব সময় সতর্ক থাকার চেষ্টা করেন। করোনা হতে পারে, এমন কোনো কিছুর সংস্পর্শ থেকে সব সময় দূরে থাকছেন। শুটিং ছাড়া আরও একাকী সময় কাটে। এ পরিস্থিতিতে শুটিংয়ের স্বল্প আয়ের কলাকুশলী ও অভিনয়শিল্পীর জন্য তাঁর মন খারাপ।

শুটিংয়ের লাইট-ক্যামেরা সহকারী, প্রোডাকশন বয় ও সহকর্মীদের কথা ভেবেই দিলারা জামানের মন খারাপ

দিলারা জামান বলেন, ‘করোনায় গত বছর অনেক দিন শুটিং বন্ধ ছিল। সে সময় অনেকে কষ্ট করেছেন, খেয়েপরে বেঁচে ছিলেন। এবার তো পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। দেশের এমন অবস্থায় আমরা শুটিং না করলেও কিছুদিন চলতে পারব, কিন্তু আমাদের সঙ্গে আরও যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা কীভাবে জীবন–জীবিকা চালাবেন? সমস্যা বাড়লে তাঁদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হবে। তাঁরা কীভাবে পরিবার, বাচ্চাদের নিয়ে চলবেন, সেটা নিয়েই খুব দুশ্চিন্তায় আছি। সব সময় চাই আমার সহকর্মীরা ভালো থাকুন।’

দিলারা জামান

শৈশবে রাজকাপুর, দিলীপ কুমার, বৈজন্তি মালা, নার্গিসসহ আরও অনেকের ছবি দেখে তিনি বড় হয়েছেন। এই প্রিয় তারকাদের জন্যই তিনি প্রথম চিনেছেন মুম্বাই শহরকে। সেই শহরে কোনো দিন শুটিং করতে পারবেন, সেটা কখনোই ভাবেননি দিলারা জামান। গত মাসে তিনি ফিরেছেন মুম্বাই থেকে শুটিং শেষ করে। সুযোগটা পেয়ে তিনি খুবই খুশি।

দিলারা জামান, বঙ্গবন্ধুর মা সাহেরা খাতুনের ভূমিকায় অভিনয় করছেন তিনি। করোনার জন্য কঠোর নিরাপত্তায় তাঁদের শুটিং করতে হয়েছে। ৪ দিনের প্রয়োজনে তাঁকে ১০ দিন অতিরিক্ত সময় থাকতে হয়েছিল। এই সময় হোটেল রুমেই তাঁর সময় কেটেছে। ছবির শুটিংয়ের জন্য মুম্বাই ফিল্ম সিটিতে বানানো হয়েছিল টুঙ্গিপাড়ার বাড়ি। সেই বাড়ি শুটিংয়ের গল্পে একসময় গ্রেনেড হামলা করে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। বাড়িটি পুড়তে দেখা মন খারাপ হয় এই অভিনেত্রীর। তিনি বলেন, ‘সেই সময়ের সত্য ঘটনা পর্দায় তুলে ধরতেই বঙ্গবন্ধুর বাড়ি পোড়ানো হয়। এত সুন্দর একটি বাড়ি পুড়তে দেখে খুবই মন খারাপ হয়েছিল। এমন গোছানো একটি কাজের সঙ্গে নাম জড়াতে পেরে খুবই ভালো লেগেছে।’

মনপক্ষী ছবির একটি দৃশ্যে কাকের সঙ্গে দিলারা জামান

করোনার কারণে একবার ভেবেছিলেন শুটিং করতে যাবেন না। পরে কথা রক্ষায় ঝুঁকি নিয়ে শুটিং করেছেন। প্রতিদিন গাড়ির মধ্যেই মেকআপ নিয়েছেন। শুটিং শেষ করেই গাড়ির মধ্যে খাবার, পোশাক পরিবর্তন থেকে শুরু করে শুটিং–পরবর্তী কাজ শেষ করেছেন।

আপাতত করোনার মধ্যে কোনো শুটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন না। পরিস্থিতি বুঝেই শুটিং শুরু করবেন তিনি। তাঁর হাতে ছিল দুটি ধারাবাহিক নাটকের কাজ। সেগুলো আপাতত করছেন। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলেই আবার নিয়মিত ধারাবাহিক ও একক নাটকে অংশ নেবেন।