Thank you for trying Sticky AMP!!

ফরীদির চশমা বিক্রি হলো ৩ লাখ ২৫ হাজার ১২ টাকায়

অনলাইনে নিলামে বিক্রি হলো হুমায়ুন ফরীদির চশমাটি। ছবি: সংগৃহীত

আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ‘অকশন ফর অ্যাকশন’–এর মাধ্যমে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় নিলামে উঠছে সব্যসাচী অভিনয় ব্যক্তিত্ব হুমায়ুন ফরীদির চশমাটি। তাঁর রেখে যাওয়া প্রিয় সামগ্রী, অর্থাৎ তাঁর ব্যবহার করা চশমা তাঁর পরিবার নিলামের জন্য দিয়েছে। যথাসময়ে নিলাম হলোও। সেখানে প্রতিযোগিতা করে গুণী অভিনেতার সে চশমা কিনে নিয়েছেন হাঙ্গেরিপ্রবাসী এক বাংলাদেশি।

জমজমাট অনলাইন নিলাম আয়োজনে অংশ নিয়ে জিতে নেওয়া সে প্রবাসী বাংলাদেশির নিলামের মূল্যটি চোখে পড়ার মতো, ৩ লাখ ২৫ হাজার ১২ টাকা। এর কারণ অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি, ‘আমার দুই মেয়ে। এক মেয়ের জন্মদিন ২৫ তারিখ, আরেক মেয়ের ১২ তারিখ। তাই দুই মেয়েকে উপহারটি দিলাম।’ তাঁর দুই মেয়েকে চশমাটি উপহার হিসেবে দেবেন তিনি। কিন্তু নাম প্রকাশ করতে চান না। পরিচয় না দিলেও এটা জানালেন, তিনি হুমায়ুন ফরীদির অনুরাগী। ১২ বছর ধরে তিনি বাংলাদেশে থাকেন না। চশমাটি এত দিন সংরক্ষিত ছিল হুমায়ুন ফরীদির মেয়ে শারারাত ইসলাম দেবযানীর কাছে। তিনি নিলামে চূড়ান্ত মূল্য ঘোষণার পর বলেন, ‘এটা কোনো কাকতাল কি না জানি না। নাকি প্রকৃতির কোনো খেলা। আমার বাবার চশমা, মানে একজন মেয়ে তাঁর বাবার চশমা দিচ্ছেন আরেকজন বাবা তার মেয়েদের জন্য চশমাটা কিনছেন—এর থেকে সুন্দর আর কিছু হতে পারে না।’

অকশন ফর অ্যাকশনের ফেসবুক পেজে রাত সাড়ে ১০টায় শুরু হওয়া লাইভটি শেষ হয় ১২টার দিকে। সংস্থাটির উদ্যোক্তা প্রীত রেজা ও আরিফ আর হোসনের সঞ্চালনায় এতে অংশ নেন আফজাল হোসেন, আফসানা মিমি, তারিক আনাম খান, সাজু খাদেম, মিশা সওদাগর, ইরেশ যাকের, দেবযানী ও তাঁর স্বামী কাজী সাবির। নিলাম চলাকালে বারবার ফিরে আসেন ফরীদি। কথায়, স্মৃতিতে। উঠে আসে গুণী এ অভিনয়শিল্পীর অভিনয়জীবন, তাঁর মমত্ব, রসবোধ ও ভালোবাসার গল্প।

দেবযানী জানান, তিনি কখনো বাবার কাছ থেকে বকা খাননি। তবে রয়ে গেছে অসংখ্য স্মৃতি। জানালেন বাবাকে চমকে দেওয়ার গল্প। ছোটবেলা থেকেই বাবা সব সময় ফোন করে জানতে চাইতেন, কী লাগবে? কিন্তু সব সময় কিছু লাগবে না বলতেন দেবযানী। তখন মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। এ রকম ফোন পাওয়ার পর তিনি লাল শাড়ি চাইলেন, যেহেতু কিছু না চাইলে বাবা কষ্ট পান। এরপর দিন তিনি বাসায় ঢুকে কয়েকটা প্যাকেটে ৮টি লাল রঙের শাড়ি পান বিভিন্ন শেডের। এ শাড়িগুলো তিনি অভিনেত্রী আফসানা মিমিকে দিয়ে কিনে পাঠিয়ে ছিলেন। এত শাড়ি কেন, বাবাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন দেবযানী। উত্তর ফরীদি বলেছিলেন, ‘তুমি লাল শাড়ি চেয়েছ। কিন্তু কোন ধরনের লাল তা তো বলোনি।’

অনলাইনে নিলামে বিক্রি হলো হুমায়ুন ফরীদির চশমাটি। ছবি: সংগৃহীত

আফজাল হোসেন তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফরীদি সম্পর্কে বলেন, ‘ফরীদি যখন অভিনেতা হয়ে ওঠেনি, তখন থেকে আমরা বন্ধু। বাংলাদেশের যেমন অনেক গৌরবগাথা রয়েছে। সেসব অনেক গৌরবগাথার সমতুল্য যোগ্যতা এ অভিনেতার ছিল।’

স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, ‘তখন মতিঝিল কলোনির এক বাসায় থাকতাম। মাঝেমধ্যে আমার বাসায় এসে থাকত। একদিন রাতে এসে মন খারাপ করে অনেক গল্প বলতে লাগল। আমারও মন খারাপ হয়েছিল। সকালে উঠে আমার দিকে হেসে বলল, তুই কি আমার সব কথা বিশ্বাস করেছিস?’

তারিক আনাম খান বলেন, ‘এই সময়ে ফরীদি বেঁচে থাকলে যে কী করত সেটা ভাবছি। এসব আয়োজনে হয়তো নিজেই অংশ নিত। আমার মনে হয় এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মানুষের পাশে আছে ফরীদি। একবার রাতের বেলায় হুট করে ডাকাত দেখার জন্য তারিক আনামকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ফরীদি। কিছু দূর যাওয়ার পরে মনে হলো ডাকাতের পাল্লায় পড়লে কী হবে। তখন বহু কষ্টে তাকে অর্ধেক পথ থেকে ফিরিয়ে এনেছিলেন তারিক আনাম।’

তারিক আনাম খান জানান, ফরীদি অভিনয়ে তৎক্ষণাৎ নতুন কিছু যোগ করতেন।

আফসানা মিমি জানান তাঁর ঈদে হুমায়ুন ফরীদির ১০ হাজার টাকা সেলামি দেওয়ার গল্প। এরপর আর কোনো ঈদে তাঁর কাছ থেকে সেলামি পাননি মিমি। ইরেশ যাকের শুনিয়েছেন কীভাবে ফরীদির শেষ ছবিগুলো তুলেছিলেন। জানালেন তাঁর প্রথম নাটকে হুমায়ুন ফরীদির অভিনয় অনুসরণ করেছিলেন। সাজু খাদেমকে রাতে বহুবার ফোন দিতেন ফরীদি। সাজুও তাঁর কণ্ঠ নকল করে অন্য শিল্পীদের ভড়কে দিতেন। কিন্তু দুঃখ করে বলেন, ‘ফরীদি ভাই মরে যাওয়ার পর একজন আমাকে বলেছিল, এখন তো তুই কাউকে ভড়কে দিতে পারবি না তাঁর কথা বলে। আসলেই কেউ এখন বিশ্বাস করবে না, আমি যদি বলি—আমি ফরীদি বলছি, আমার জন্য এটা রান্না করে পাঠাও।’

সাজু খাদেম বলেন, ‘ফরীদি ভাই কখনো বলতেন না এভাবে অভিনয় করো, ওভাবে করো। তিনি বলতেন, তোমার অভিনয় করার দরকার নেই। তুমি তোমার কমনসেন্স বাড়াও।’

অনলাইন আড্ডায় সাজু খাদেম, আফসানা মিমি ও তারিক আনাম খান। ছবি। ফেসবুক

হুমায়ুন ফরীদিকে অনেক মিস করেন তাঁর পরিবার ও সহশিল্পীরা। বাংলাদেশের মানুষও হুমায়ুন ফরীদিকে অনেক মিস করে। করোনায় আক্রান্ত মানুষের সহায়তা করার জন্য এ আয়োজন করছে অকশন ফর অ্যাকশন'। অকশন ফর অ্যাকশন নামের নিলামের এই নতুন প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষ ইতিমধ্যে পরিচিত হয়ে গেছে। ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে সাকিব আল হাসানের ব্যবহৃত সেই স্মরণীয় ব্যাট দিয়েই শুরু হয় নিলাম।
আয়োজকেরা জানিয়েছেন, এই নিলাম যেসব দর্শক সরাসরি দেখেন, তাঁরাও অবদান রাখতে পারেন তাঁদের নিয়মিত খরচের একটা অংশ সাশ্রয় করে অকশান ফর অ্যাকশনকে দিয়ে। সবার সহযোগিতায় সংগৃহীত অর্থে কিছু অভুক্ত মানুষের খাবারের সংস্থান করবে অকশান ফর অ্যাকশন, স্বীকৃত কোনো স্বেচ্ছাসেবামূলক সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। অকশন ফর অ্যাকশনের চমক আছে এরপরও। কারণ, হুমায়ূন আহমেদের হলুদ পাঞ্জাবিও উঠবে নিলামে। এই তালিকা বেশ হৃদয়গ্রাহী। কেবল সামগ্রী নয়, আছে অন্য রকম বিষয়। সময় ভালো হলে বাকের ভাইয়ের সঙ্গে কোনো গলির মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা, অনন্ত জলিলের সঙ্গে লং ড্রাইভ, মাইলসের সদস্যদের সঙ্গে ঘাড়ে হাত দিয়ে ছবি তোলা, মোশাররফ করিমকে বাসায় দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোর মতো চমৎকার কিছু বিষয়, যা উঠবে নিলামে। উঠবে জেমসের ‘তোরাই বল কী চাস’। তবে অন্য কিছুও আছে সাকিবের ব্যাটের মতো। যেমন নির্মলেন্দু গ‌ুণের কবিতা, চিরকুটের সুমির নথ, ইমনের গিটার, পাভেলের ড্রামস কিট। তালিকা এতটা ক্ষুদ্র নয়; বরং আরও আছেন অনেক তারকা, যাঁরা তাঁদের সৃষ্টি কিংবা সঙ্গ নিলামে দিতে এগিয়ে এসেছেন। দীর্ঘ তালিকায় আছেন আলী যাকের, পার্থ বড়ুয়া, সৌম্য সরকার, মাশরাফি বিন মুর্তজা, তিশা, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীসহ আরও অনেকে।

পর্যায়ক্রমে নিলামে উঠবে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা মুশফিকুর রহিমের ব্যাট, এশিয়া কাপে ১১৭ বলে ১২১ রান করা লিটন দাসের সেই ব্যাট।