Thank you for trying Sticky AMP!!

বক্তার নাম ফেরদৌসী মজুমদার

এক বক্তার বৈঠকে নিজের অভিনয়, জীবন ও শিল্পযাত্রা নিয়ে কথা বললেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার। গতকাল রাজধানীর বেইলি রোডে মহিলা সমিতি মঞ্চে। ছবি: আবদুস সালাম

এক বক্তার বৈঠক। নামটাই বলে দেয়, এখানে একজনই কথা বলবেন। যদিও সঞ্চালক ছিলেন আপন আহসান, স্বাগত ভাষণ দেন রামেন্দু মজুমদার, কিন্ত অনুষ্ঠানজুড়ে ছিলেন একজনই—ফেরদৌসী মজুমদার।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মহিলা সমিতি মিলনায়তনে তাঁর অভিনীত কোনো নাটক ছিল না। তিনি স্মৃতিচারণা করেন নিজের জীবনের। যতক্ষণ কথা বলেছেন তিনি, ততক্ষণই দর্শকেরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলেন তাঁর কথা। বৈঠকটিকে তাঁর একক অভিনয় বললে ভুল হবে না। গল্পচ্ছলে উঠে এল নিজের অভিনয়, পরিবার, প্রেমসহ বর্ণাঢ্য জীবনের নানা দিক। তারই কিছু অংশ আমরা তাঁরই বয়ানে তুলে আনতে পারি।

অভিনয়জীবন
আমার ভাই মুনীর চৌধুরী নাটক করবেন। তাঁদের একটি নাটকে একজন অনুপস্থিত। সেখানে একজনকে লাগবে। তিনি আমাকে অভিনয় করতে বললেন। আমি বললাম বাবার কথা। তিনি বললেন, বাবাকে তিনি ম্যানেজ করবেন। তখন আমি বললাম, আমি তো অভিনয় পারি না। তিনি বললেন, রোবট মানবের চরিত্র। কিছু করতে হবে না। বাবাকে তিনি রাজি করালেন। সেই প্রথম অভিনয়। তা ছাড়া বাড়ির সবাইকে আমি নকল করতে পারতাম। তাই বলা যায় অভিনয়টা ভেতরেই ছিল। এভাবেই যাত্রা শুরু।

কোকিলারা
কোকিলারা আমার জীবনের একটা অন্য রকম নাটক। ভাবতেই পারিনি এটি কখনো করতে পারব। আবদুল্লাহ আল–মামুন যথার্থ সময়ে আমার মূল্যায়ন করেছিলেন। আমি নাটকটি করতে পেরেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, আপনি পারবেন। আগে মুখস্থ করে ফেলুন। আমি মুখস্থ করে ফেলি। আজও ভুলিনি। অভিনয়ের প্রথম শর্তই হলো, মুখস্থ করতে হবে সংলাপ।

১৮ জুন ১৯৪৩ ও ১৮ জুন ১৯৭২
এটা হলো আমার আর আমার মেয়ে ত্রপার জন্মদিন। একই দিনে আমাদের জন্ম। তাই নিজেদের সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য দুজনেই মুখিয়ে থাকতাম। দেখা গেছে দুজনকে দুজনেই সারপ্রাইজ দিয়েছি। ও আমাকে জড়িয়ে ধরে বলত, মা, শুভ জন্মদিন।

অসাধারণ ছেলে ফরীদি
ফরীদির সঙ্গে আমি নাটক ও সিনেমায় কাজ করেছি। ও প্রচুর মজা করত। খুবই ভালো অভিনেতা ছিল ফরীদি। মাঝেমধ্যে আমাদের জোকস বলে হাসাত। সংশপ্তক-এর সেটে মামুন ভাই অনেক সময় বকা দিতেন ফরীদিকে।

চলচ্চিত্র নিয়ে
আমি মায়ের অধিকার চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে গেলাম। সালমান শাহর দাদি আর আলমগীরের মা আমি। মেকআপ নিতে গিয়ে দেখি, চড়া মেকআপ বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। মঞ্চে বা টেলিভিশনে তো এ রকম চড়া মেকআপ আমি নিই না। ভেবে দেখুন, সালমান শাহর দাদি নিচ্ছে কড়া মেকআপ। ছবির পরিচালক শিবলী সাদিক বললেন, সিনেমার এটাই রীতি। ফলে সেভাবেই মেকআপ নিতে হয়েছিল।
দৃশ্যটা ছিল এ রকম—আমি সিঁড়ি দিয়ে নামব। আমাকে সংলাপ দেওয়া হলো। ঘরের মধ্যে আলমগীর ববিতাকে নিয়ে ঢুকবে। ববিতা হলো বস্তির মেয়ে। আমাকে বলতে হবে, ‘দাঁড়াও’। কিন্তু আমি সাবলীলভাবে অভিনয় করায় সে দৃশ্য কিছুতেই ধারণ করা যাচ্ছে না। শিবলী সাদিক বললেন, এভাবে না। জোরে বলুন, ‘দাঁড়াও’। তাঁর কথা আমি রেখেছিলাম এবং তাঁর নির্দেশমতোই অভিনয় করেছিলাম।
সিনেমা নিয়ে আমার আরেকটা স্মৃতি আছে। এটা একটু আক্ষেপের। কলকাতায় সত্যজিৎ সাহেবের সঙ্গে একবার দেখা। তিনি আমাকে তখন ফিল্মের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আমি অভিনয় করব কি না। তখন আমি সিনেমার ব্যাপারে ততটা আগ্রহী ছিলাম না। তাই বললাম, না, আমি এখনো সিনেমার জন্য প্রস্তুত নই। এটা নিয়ে আমার একটা আক্ষেপ রয়ে গেছে।
সূর্য দীঘল বাড়ীতে আমাকে জয়গুনের চরিত্রে অভিনয় করার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু ত্রপা তখন ছোট। সিনেমায় অনেক সময় দিতে হয়। এত সময় দিতে পারব না বলে আর সে ছবিতে অভিনয় করিনি। তখন ডলি ইব্রাহিমের নাম আমিই প্রস্তাব করেছিলাম।
এরপর ছিল দর্শকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব। তাতেও উঠে আসে নানা অজানা কথা।
এক বক্তার বৈঠকের আয়োজক আবদুল্লাহ আল–মামুন থিয়েটার স্কুল। সহযোগিতায় ছিল থিয়েটার পত্রিকা।