Thank you for trying Sticky AMP!!

নতুন পরিচয়ে তাঁরা

সজল, মম ও ফারিণ—টেলিভিশনের তিন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী। গত বুধবার বিকেলে মগবাজারের একটি স্টুডিওতে তাঁদের দেখা গেল। এই সময়টায় সাধারণত পুবাইল, উত্তরা কিংবা অন্য কোনো শুটিং স্পটেই তাঁদের দেখা পাওয়া যায়। তাহলে এই সময়ে এসব স্টুডিওতে কী করছেন তাঁরা? জানা গেল, তাঁরা সবাই এখানে ডাবিং করছেন। দুজন বিদেশি ভাষার সিরিয়ালের, একজন চলচ্চিত্রের।

টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্রের কয়েকজন অভিনয়শিল্পীকে কিছুদিন ধরে বিদেশি ভাষার বিভিন্ন কনটেন্টে ডাবিং করতে দেখা যাচ্ছে। দেশের টেলিভিশন চ্যানেল ও ওটিটিতে বিদেশি সিনেমা, ধারাবাহিক, অ্যানিমেশনের প্রচার বেড়ে যাওয়ায় এ ক্ষেত্রে কাজের পরিসরও বাড়ছে। একাধিক টেলিভিশন চ্যানেলের রয়েছে আলাদা ডাবিং দল। বিভিন্ন ডাবিং স্টুডিওতেও কাজ করেন অনেক নাট্যশিল্পী। সেখানে স্থায়ী ও অস্থায়ী ভিত্তিতে কাজ করেন পাঁচ শতাধিক ডাবিং শিল্পী। বেশির ভাগই থিয়েটার থেকে আসা। টিভি চ্যানেলের বাইরে ডাবিং নিয়ে কাজ করছে এসআরকে স্টুডিও। সেখানেও কাজ করছেন অনেক নাট্যকর্মী। স্টুডিও সূত্র জানায়, ডাবিং শিল্পের সঙ্গে জড়িত ১০০ জনের বেশি ব্যক্তি এখানে কাজ করছেন। তাঁদের বেশির ভাগই মঞ্চ থেকে আসা। এই শিল্পীরা নিজেদের ভয়েস আর্টিস্ট বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

এবারই প্রথম কোরিয়ান সিরিজের ডাবিং করলেন সজল। ডাবিংয়ের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে তিনি বলেন, ‘লি মিন হো আমার পছন্দের অভিনেতা। পছন্দের অভিনেতার জন্য প্রথমবার কোরিয়ান কোনো কাজের ডাবিং করতে রাজি হয়েছি

সজল, মম ও ফারিণের সঙ্গে কথা হলো। তাঁরা মগবাজারের এসআরকে স্টুডিওতে ডাবিংয়ে ব্যস্ত সময় পার করেছিলেন। সজলের সঙ্গে ডাবিং করছিলেন হালের জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী তাসনিয়া ফারিণ। তাঁরা দুজন কোরিয়ান সিরিজ লিজেন্ড অব দ্য ব্লু সির ডাবিং করছিলেন। সজল কোরিয়ান অভিনয়শিল্পী লি মিন হো আর ফারিণ জুন জি-হিউনের চরিত্রে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন।

দেড় দশকের বেশি অভিনয়ের সঙ্গে আছেন সজল। এই দীর্ঘ সময়ে নাটক, টেলিছবি ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি মডেলিংও করেছেন। এবারই প্রথম কোরিয়ান সিরিজের ডাবিং করলেন। ডাবিংয়ের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে তিনি বলেন, ‘লি মিন হো আমার পছন্দের অভিনেতা। পছন্দের অভিনেতার জন্য প্রথমবার কোরিয়ান কোনো কাজের ডাবিং করতে রাজি হয়েছি। তা ছাড়া ডাবিং সিরিজগুলো দেশের দর্শক দেখছেন। এর মধ্য দিয়েও অন্য দর্শকদের সঙ্গে থাকতে পেরে ভালো লাগছে।’

প্রথমবার ডাবিং শিল্পী হিসেবে কাজ করা ফারিণ জানান, এত দিন তো অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু ভয়েস অ্যাকটিং করা হয়নি। তাই নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই এটা করা

প্রথমবার ডাবিং শিল্পী হিসেবে কাজ করা ফারিণ জানান, এত দিন তো অনেক কিছুই করেছেন। কিন্তু ভয়েস অ্যাকটিং করা হয়নি। তাই নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবেই এটা করা। বেশ ভালো লেগেছে।

‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ চলচ্চিত্রের ডাবিং করছিলেন মম। এই চলচ্চিত্রের সেলিন চরিত্রে বাংলায় কণ্ঠ মিলিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, ডাবিংয়ের কাজটি তিনি ভীষণ উপভোগ করছেন। এটি তাঁর দ্বিতীয় ডাবিং। এর আগে হলিউডের জনপ্রিয় ভৌতিক সিনেমা ‘রেসিডেন্ট এভিল’-এর বাংলা ডাবিং ভার্সনে অ্যালিস চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছেন। মম বলেন, ‘আগে নিজের চরিত্রে ডাবিং করেছি। কিন্তু অন্য একটা চরিত্রে, তার মতো করে, তার আবেগ ধারণ করে, তার চোখের চাহনি, তার শরীরের ভাষা বুঝে ডাবিং করাটা চ্যালেঞ্জিং। প্রতিটি ডায়ালগ ধরে ধরে আমরা এগিয়েছি। স্ক্রিপ্টের বাইরেও ইম্প্রোভাইস করেছি। আমি আর আমার ভয়েস অ্যাকটিং পরিচালক সতর্ক থেকে কাজটা করেছি।’

‘আন্ডারওয়ার্ল্ড’ চলচ্চিত্রের ডাবিং করছিলেন মম। এই চলচ্চিত্রের সেলিন চরিত্রে বাংলায় কণ্ঠ মিলিয়েছেন তিনি

আগে শুধু ভয়েস আর্টিস্টরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র, ধারাবাহিক নাটক, অ্যানিমেশন ও ওয়েব সিরিজে কণ্ঠ দিলেও এখন যুক্ত হচ্ছেন তারকা শিল্পীরা। একসময়ের জনপ্রিয় মডেল ও অভিনেতা সজল যেমন ভিন্ন ভাষায় সিরিজে ডাবিং করছেন, তেমনি হালের জনপ্রিয় নায়ক শরীফুল রাজকেও এই কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। নতুন পরিচয়ে ভক্তদের সামনে হাজির হওয়ার এই বিষয় ভীষণ উপভোগ করছেন তাঁরা।

সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত জনপ্রিয় তুর্কি সিরিজ ‘মেহমেদ’-এ প্রথমবার কণ্ঠ অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন রওনক হাসান। এই সিরিজের সুলতান মেহমেদ চরিত্রে বাংলায় কণ্ঠ মিলিয়েছেন তিনি

সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত জনপ্রিয় তুর্কি সিরিজ ‘মেহমেদ’-এ প্রথমবার কণ্ঠ অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছেন রওনক হাসান। এই সিরিজের সুলতান মেহমেদ চরিত্রে বাংলায় কণ্ঠ মিলিয়েছেন তিনি। কঠিন মনে হলেও কাজটি উপভোগ করছেন রওনক। তিনি বলেন, ‘ভীষণ কঠিন কাজ! এ যেন হাত-পা বেঁধে অভিনয়। অন্য একটি ভাষায় অন্য একজন অভিনেতার অভিনয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কণ্ঠ–অভিনয় করতে হয়েছে। পুরো ব্যাপারটা ভীষণ কষ্টকর। তবে ডাবিং শেষে যখন দেখি, তখন তৃপ্তি লাগে। কাজটা করে খুব আনন্দ পেয়েছি।’ রওনক হাসানের সঙ্গে এই কাজে ভয়েস অ্যাকটিং ডিরেক্টর ছিলেন সামিউল জীবন।

হলিউডের জনপ্রিয় দুই চরিত্র টিনটিন ও স্পাইডার চরিত্রে বাংলা কণ্ঠ দিয়েছেন ইয়াশ রোহান। তাঁর মতে, ডাবিংয়ের কাজটা সহজ নয়। তবে যাঁরা নিয়মিত এ কাজ করেন, তাঁদের জন্য হয়তো সহজ। তবে বিষয়টি তাঁর জন্য খুব উপভোগ্য ছিল।

বাংলাদেশের তরুণ নাট্যকর্মীরা বিকল্প উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে ডাবিং শিল্প বা কণ্ঠ–অভিনয়ে যুক্ত হন। অনেকে স্থায়ী পেশা হিসেবেও শিল্পটিকে গ্রহণ করছেন। বিদেশি সিরিয়াল, কার্টুন, অ্যানিমেশন, বিদেশি সিনেমা, বিজ্ঞাপনসহ ডাবিং কিংবা কণ্ঠ–অভিনয়সংশ্লিষ্ট নানা কিছুর সঙ্গে কাজ করছেন পাঁচ শতাধিক তরুণ নাট্যকর্মী।