বাবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে চাই

পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।

মিতি সানজানা

প্রশ্ন: আমার মাকে আমার বাবা শুধু শুধু প্রায়ই মারে। এমনকি ঝগড়া করে মাকে ঘরে ঢুকতে দেয় না। আমি পরিবারের বড় ছেলে। বয়স ২২ বছর। আমার একটি ছোট বোন উচ্চমাধ্যমিকে পড়ে, আর ছোট ভাই সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। আমি ছোটখাটো একটা চাকরি করি। মায়ের প্রতি বাবার আচরণের কথা স্থানীয় চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাইনি। মা সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে নেয়, শুধু আমাদের কথা চিন্তা করে। একবার তো মা আত্মহত্যা করতেও গিয়েছিল। কিন্তু আমি দেখে ফেলেছি, এ অবস্থায় আমি নিজেও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। এই সমস্যা সমাধানের কি কোনো আইনগত বিধান আছে?

অভি দাস, চট্টগ্রাম।

উত্তর: পারিবারিক সহিংসতা বলতে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক পরিবারের অপর কোনো নারী সদস্যের ওপর শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন অথবা আর্থিক ক্ষতিকে বোঝাবে।

আপনি যে অভিযোগটি করছেন, আপনার বাবা আপনার মাকে মারধর করেন, এ বিষয়টি পারিবারিক সহিংসতার সংজ্ঞায় পড়বে। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯ ও শিশু অধিকার সনদ, ১৯৮৯ সালে এতে সই করা রাষ্ট্র হিসেবে এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত নারী ও শিশুর সম–অধিকার প্রতিষ্ঠার নিমিত্ত পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ, পারিবারিক সহিংসতা থেকে নারী ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ প্রণীত হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০-এ প্রথমবারের মতো পারিবারিক সহিংসতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা, ২০১৩ প্রণীত হয়েছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ, ১৯৭৯–এ বলা হয়েছে, শারীরিক ও মানসিকভাবে একজন নারীকে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত করলে, তা পারিবারিক সহিংসতা হিসেবে বিবেচিত করা হবে।

একজন নারী, যিনি পারিবারিক সম্পর্ক থাকার কারণে পরিবারের অপর কোনো সদস্য কর্তৃক পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন বা হচ্ছেন বা সহিংসতার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন, দেশের আইন অনুযায়ী প্রতিকার চাইতে পারবেন। আইনের অধীনে আপনার মা যেসব প্রতিকার চাইতে পারবেন—

  • এই আইন অনুসারে প্রতিকার পাওয়ার অধিকার;

  • চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তির সুযোগ;

  • আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে সেবাপ্রাপ্তির সুযোগ;

  • প্রযোজ্য ক্ষেত্রে, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ অনুসারে বিনা খরচে আইনগত পরামর্শ ও সহায়তাপ্রাপ্তি বা অন্য কোনো আইন অনুসারে প্রতিকারপ্রাপ্তির উপায়।

আদালতে আবেদন: আপনার মা বা তাঁর পক্ষে কোনো আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা, সেবা প্রদানকারী বা অন্য কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন প্রতিকার পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপ্রাপ্তির সাত কার্যদিবসের মধ্যে আদালত আবেদন শুনানির জন্য তারিখ নির্ধারণ করবেন।

অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ: আবেদনপ্রাপ্তির পর আদালত যদি আবেদনপত্রের সঙ্গে উপস্থাপিত তথ্য পর্যালোচনা করে এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে প্রতিপক্ষ কর্তৃক বা তার প্ররোচনায় কোনোরূপ পারিবারিক সহিংসতা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, তবে আদালত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে একতরফাভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সুরক্ষা আদেশ প্রদান করতে পারবেন। আপনার মা যেহেতু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখোমুখি হচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে আদালতে ক্ষতিপূরণের আবেদন করতে পারেন।

ঘোষণা

পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর

আইন, ডায়েটএবংমন–সংক্রান্তযেকোনোপ্রশ্নপাঠকপাঠাতেপারেন।

প্রশ্নপাঠানোযাবেই–মেইলে, ডাকেএবংপ্রঅধুনারফেসবুকপেজেরইনবক্সে।

ই–মেইলঠিকানা: adhuna@prothomalo.com

(সাবজেক্টহিসেবেলিখুন ‘পাঠকেরপ্রশ্ন’)

ডাকঠিকানা: প্রঅধুনা, প্রথমআলো, প্রগতিইনস্যুরেন্সভবন, ২০–২১কারওয়ানবাজার,

ঢাকা১২১৫। (খামেরওপরলিখুন ‘পাঠকেরপ্রশ্ন’)

ফেসবুকপেজ: fb.com/Adhuna.PA