Thank you for trying Sticky AMP!!

স্ত্রী যখন স্বামীর অবৈধ অর্থের ঢাল

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

স্বাভাবিক বা বৈধ পথে নয়, অবৈধভাবে অনেকেই প্রচুর সম্পদ, বিপুল পরিমাণ অর্থের মালিক হয়ে যান। দেখা যায় অনেকেই আয়বহির্ভূত এসব অর্থসম্পদ রাখেন স্ত্রীর নামে। সম্পত্তিও কেনেন স্ত্রীর নামে। দুর্নীতির অপরাধে কখনো এসব প্রকাশ পেলে স্ত্রীর নামও চলে আসে স্বামীর সঙ্গে। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই স্ত্রীর কোনো ভূমিকাই থাকে না দুর্নীতি বা সেই অপরাধের ব্যাপারে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় অবৈধ আয় সম্পর্কে জানার পরও স্ত্রী প্রতিবাদ করতে পারেন না। স্ত্রী হয়ে ওঠেন স্বামীর ঢাল।

দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ ও সম্পদ রক্ষা করার উদ্দেশ্যে আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অর্জিত সম্পত্তি নিজের নামে না রেখে পরিবারের অন্য সদস্য বা স্ত্রীর নামে রাখার কৌশল অবলম্বন করা আইনের চোখে মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়। স্ত্রী জানুন বা না জানুন। মানি লন্ডারিংয়ের ক্ষেত্রে অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ বা সম্পদ গোপন করা বা লুকানোর উদ্দেশ্যে সম্পদের রূপান্তর বা হস্তান্তর করা হয়।

মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ অনুযায়ী কেউ যদি অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ গোপন বা ছদ্মাবৃত্ত করা কিংবা অপরাধ থেকে অর্জিত অর্থসম্পদ সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও এই ধরনের সম্পত্তি গ্রহণ, দখলে নেয়, ভোগ করে বা এমন কিছু করে, যার দ্বারা অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করা হয় এবং এসব উদ্দেশ্যে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত সম্পত্তি জেনেশুনে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করেন তাহলে তিনি মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধে অপরাধী হবে।

অনেক সময় স্ত্রীর অজান্তে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্ত্রী এ সম্পর্কে জানেন ও তাঁর পূর্ণ সম্মতি থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার স্ত্রী চাইলেও প্রতিবাদ করতে পারেন না। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয় ও সম্পদের দায় অনেক ক্ষেত্রেই বিনা দোষে নারীর ওপর বর্তায়। যদি দোষ না–ও থাকে ওই অবৈধ আয় ও সম্পদের হিসাব দেওয়ার জন্য স্ত্রীকে অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করে আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা যায়।

বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নারীরা স্বামীর কথামতো কাগজে সই করেই সম্পদের মালিক হয়ে যান, অর্থসম্পদের সব হিসাব পরিচালনা করেন স্বামী। ফলে স্বামীর অবৈধ সম্পদ বা আয়ের উৎস স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে বেশির ভাগ স্ত্রী জবাব দিতে পারেন না। অনেক ক্ষেত্রে স্বামীকে বাঁচানোর জন্য নীরব থাকতে বাধ্য হন এবং নিজেও সাজা ভোগ করেন।

এমনও দেখা যায়, স্ত্রীকে রক্ষা করার বদলে স্বামী নিজেকে বাঁচাতে দাবি করেন যে স্ত্রীর সম্পদের হিসাব তিনি জানেন না। দেশের অর্থনীতি এবং নারীর জীবনযাত্রায় এটি গুরুতর প্রভাব ফেলে। সজ্ঞানে জড়িত না থেকেও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক ও ব্যক্তিগত দায় নারীকে বহন করতে হচ্ছে। সামাজিক অবস্থার কারণে অনেকে সবকিছু জেনেও প্রতিবাদ করতে পারেন না।

আমাদের সমাজব্যবস্থা ও কাঠামো আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছে যে নারীমাত্রই দুর্বল ও শোষণযোগ্য। এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ আমাদের ভাবতে শিখিয়েছে, নারীমাত্রই ভোগের বস্তু, নারীমাত্রই পুরুষের সম্পত্তি। পুরুষ তাকে যেমন খুশি তেমন ব্যবহার করবে। এমনকি অপরাধ ও দুর্নীতি আড়াল করার এবং অবৈধ সম্পদ বৈধ করার ঢাল হিসেবে।

নারীকে ঢাল, কখনোবা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা থেকে রক্ষা করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এতে মানি লন্ডারিং অপরাধও প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে নারীদের সচেতন করার গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখার স্বার্থেই নয় বরং নারীর প্রতি অবমাননা এবং সহিংসতা বন্ধ করার জন্যও এটি প্রয়োজন। কেননা নারীর প্রতি এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ সহিংসতার পর্যায়েই পড়ে।