Thank you for trying Sticky AMP!!

আজটেকরা কেন নৃশংসভাবে নরবলি দিত

টেমপ্লো মেয়রের বর্তমান অবস্থা

হলিউড অভিনেতা ও নির্মাতা মেল গিবসন পরিচালিত আলোচিত সিনেমা অ্যাপোক্যালিপ্টো। সেই সিনেমায় প্রাচীন যুগে ঈশ্বরের নামে নরহত্যার বিষয়টি উঠে এসেছিল। সিনেমা হলেও এমনটা কিন্তু সত্যিই হতো। সিনেমায় যেমন দেখানো হয়েছে, প্রায় একই রকম বর্বরতা বাস্তবেও ছিল। হত্যা তো করা হতোই, তারপর ভুক্তভোগীর হৃৎপিণ্ড বের করে দেবতাকে উৎসর্গ করা হতো এবং রক্ত ছড়িয়ে দেওয়া হতো মন্দিরের বেদিতে।

এভাবেই মন্দিরের চূড়ায় নরবলি দেওয়া হতো

এমন নরবলির ঘটনা ঘটত আজটেক সভ্যতায়। এ সভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল বর্তমান মেক্সিকোতে। ১৫২১ সালে আজটেক দখল করেন এরনান কর্তেজ। রাজধানী তেনোশতিতলানে পৌঁছানোর পর এই স্প্যানিশ যোদ্ধা ও তাঁর সহযাত্রীরা দেখতে পান, টেমপ্লো মেয়রের (তখনকার প্রধান মন্দির) পুরোহিত ধারালো অস্ত্র দিয়ে একজনের বুক কেটে হৃৎপিণ্ড বের করে ফেলেছেন। তারপর ধুকধুক করতে থাকা হৃৎপিণ্ডটা দেবতার কাছে তুলে ধরা হয় অর্ঘ্য হিসেবে। পরে বলি দেওয়া মানুষটির দেহ মন্দিরের উঁচু বেদি থেকে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। কোথাও কোথাও বলা হয়, মন্দিরের একটি অংশ তৈরি করা হয়েছিল মানুষের খুলি দিয়ে!

তবে শত শত বছর পর অনেক ইতিহাসবিদ ওই বয়ানকে নাকচ করে দিয়েছিলেন। তাঁরা বলেছিলেন, আজটেক সম্রাট মকতেজুমা হত্যাকাণ্ড এবং এই সভ্যতা ধ্বংসকে যৌক্তিক দেখাতেই স্প্যানিশরা এসব গল্প ফেঁদেছে। কিন্তু তাঁদের সেই দাবি ধোপে টেকেনি; কারণ, ২০১৫ ও ২০১৮ সালে মেক্সিকো সিটির টেমপ্লো মেয়র মন্দির এলাকায় প্রত্নতাত্ত্বিক খননে বেরিয়ে আসে খুলি আর খুলি। স্প্যানিশ ইতিহাসবিদ দিয়েগো দুরান দাবি করেছেন, এই মন্দির উদ্বোধনের সময় ৮০ হাজার ৪০০ নারী, পুরুষ, শিশুকে বলি দেওয়া হয়েছিল। মন্দিরের ম্যুরাল ও খোদাই করা নকশা থেকে তিনি এই তথ্য উদ্ধার করেন।

টেমপ্লো মেয়রে আবিষ্কৃত অসংখ্য মানুষের খুলি

যুক্তরাষ্ট্রের টুলেন ইউনিভার্সিটির নৃতাত্ত্বিক জন ভেরানোর মতে, আধ্যাত্মিকতার জায়গা থেকে আজটেকরা এই বর্বর আচার পালন করত। তিনি বলেন, ‘এই আচার আজটেকদের জন্য ছিল খুবই ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ।’

ছোট–বড় নরবলি অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো আজটেক দিনপঞ্জি অনুসারে। তিনি আরও জানান, খরা ও মন্বন্তর দূর করার উদ্দেশ্যই মন্দিরে নিয়মিত এই বলির আয়োজন করা হতো। আর আজটেকদের বিশ্বাস ছিল, সূর্যদেবতা অন্ধকারের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়াই করে যাচ্ছেন। এই লড়াইয়ে সূর্য যদি হেরে যায়, তাহলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই সূর্যের হাতকে শক্তিশালী করতে তাকে উপহার হিসেবে দিতে হবে মানুষের রক্ত ও হৃৎপিণ্ড!

আজটেক সাম্রাজ্য যে ১৫ থেকে ১৬ শতক পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারল, তার পেছনেও এই নরবলির ভূমিকা আছে। এই বলির মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখানো হতো। ভয়ে মানুষ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে কোনো প্রশ্ন তুলত না। প্রত্নখননে পাওয়া খুলিগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা গেছে, নিহত বেশির ভাগ মানুষই বাইরে থেকে আসা। ধারণা করা হয়, তাদের বেশির ভাগই ছিল যুদ্ধবন্দী বা ক্রীতদাস। যুদ্ধবন্দীদেরও বলি দেওয়া হতো, যাতে ভয়টা ছড়িয়ে পড়ে।

ধারণা করা হয়, অনেকে স্বেচ্ছায়ও বলি হতেন। স্বেচ্ছাসেবীরা বিশ্বাস করতেন, এটি একটি পবিত্র ও গর্বের কাজ। তাঁরা এ–ও মনে করতেন, আত্মাহুতির মাধ্যমে পরজন্মে সূর্যদেবতার সৈন্যশিবিরে স্থান পাওয়া যায়।

তথ্যসূত্র: হিস্ট্রি ডটকম

Also Read: আসল ড্রাকুলার রোমহর্ষ কাহিনি