Thank you for trying Sticky AMP!!

ইঁদুর যেভাবে বোমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল

এভাবেই মরা ইঁদুরের চামড়ার ভেতরে বিস্ফোরক দ্রব্য ভরে সেলাই করে দেওয়া হতো

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এক পক্ষ আরেক পক্ষকে শেষ করে দিতে যা পেরেছে তা–ই করেছে। সরাসরি অস্ত্র ব্যবহার যেমন করা হয়েছে, তেমনই অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে সাবান, জুতা, বোতল, বাইসাইকেল পাম্প, স্যুটকেস ইত্যাদি। শুধু তা–ই নয়, অস্ত্র হিসেবে কাজে লেগেছে ইঁদুরও!

১৯৪০ সালের মধ্যে জার্মানরা ইউরোপের প্রায় অর্ধেকটা দখল করে নেয়। গোটা ব্রিটেনে তখন বৃষ্টির মতো বোমা পড়ছে। পাশের ফ্রান্স দখল হয়ে গেছে। জার্মান নৌবাহিনী ব্রিটিশ জলসীমার মধ্যে যেকোনো সময় ঢুকে পড়তে পারে। কী করবে ব্রিটেন! তখন আসলে ব্রিটেনের একটি নতুন অস্ত্রের প্রয়োজন ছিল। এমন এক মারণাস্ত্র, যা আগে কেউ দেখেনি, ব্যবহার করেনি। এমন একটি অস্ত্র কে তৈরি করতে পারে, যা জার্মান প্রশাসনকে নাস্তানাবুদ করে রাখবে?

দায়িত্ব পড়ল সে সময়ের ব্রিটেনের সিক্রেট অপারেশন্স এক্সিকিউটিভের (এসওই) কর্মী চার্লস ফ্রেজার–স্মিথের ওপর। এসওই ছিল ব্রিটেনের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধবিষয়ক এক গোপন সংস্থা, যা গঠিত হয় ১৯৪০ সালে, ব্রিটিশ আইনসভাকে অন্ধকারে রেখে প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিলের নির্দেশে। এই সংস্থার অধীনে ‘সেকশন ১৫’ নামের একটি বিভাগ ছিল। ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার অভিযানে ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন অস্ত্র তৈরি করাই ছিল এই বিভাগের দায়িত্ব। এই বিভাগে উৎপাদিত অস্ত্রগুলোকে বলা হতো ‘কিউ–ডিভাইস’। এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, জেমস বন্ড সিরিজের ‘কিউ’ চরিত্রটি এই চার্লস ফ্রেজার–স্মিথ থেকেই অনুপ্রাণিত। যাহোক, ফ্রেজার–স্মিথের নেতৃত্বে ১৯৪১ সালে তৈরি করা হলো ইঁদুরবোমা! যদিও ইতিমধ্যে মার্কিন বিড়ালবোমা ব্যর্থ হয়েছে। আর বাদুড়বোমা তখনো উদ্ভাবিত হয়নি।

২০১৭ সালে নিলামে ওঠা একটি ইঁদুরবোমা

ইঁদুর মানে ইঁদুরের মমি। মরা ইঁদুরের চামড়ার ভেতরে বিস্ফোরক দ্রব্য, ডেটোনেটর ও ফিউজ ভরে সেলাই করে দেওয়া হবে। দেখলে বোঝার উপায় থাকবে না আসলে তা একটি বোমা। আশা করা হয়েছিল, এই ইঁদুরবোমাগুলো কয়লার সঙ্গে জার্মানদের বয়লারগুলোতে ঢুকে পড়বে। কেননা, তখন ইঁদুরবাহিত রোগের প্রকোপ ছিল, তাই মরা ইঁদুর দেখলেই আগুনে ফেলে দেওয়া হতো। উচ্চ তাপমাত্রায় ইঁদুরবোমা বিস্ফোরিত হলে বিস্ফোরিত হবে বয়লারগুলোও। এই বিস্ফোরণের ফলে ধ্বংস হয়ে যাবে ফ্রান্সে থাকা জার্মান সামরিক ব্যারাক ও বাষ্পচালিত ইঞ্জিনগুলো। তখন ইঁদুরবোমা সফল হলে জার্মানদের অস্ত্র ও রসদ সরবরাহ সীমিত হয়ে যেত এবং লাভবান হতো ব্রিটেন।

কিন্তু বোমা ব্যর্থ হলো। ১৯৪২ সালে ১০০টি ইঁদুরবোমার চালান জার্মান সেনাদের হাতে ধরা পড়ে। সতর্ক হয়ে যায় জার্মান প্রশাসন। অভিযান বাতিল করতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সরকার। তবে জার্মানরা কিন্তু এই ইঁদুরবোমা দেখে ভীষণ অবাকই হয়। তারা এই বিশেষ ইঁদুরবোমা মাউন্ট করে তাদের স্কুল–কলেজগুলোতে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছিল। বিড়াল ও বাদুড়বোমার মতো ইঁদুরবোমার পরীক্ষা হলো না, জানাও গেল না কতটা বিধ্বংসী ছিল মরা ইঁদুর। ২০১৭ সালে নিলামে উঠেছিল সেই ইঁদুরগুলোর একটি। সর্বনিম্ন দাম ধরা হয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি, ডেইলি মেইলমিলিটারি হিস্ট্রি ম্যাটার্স

Also Read: তিনি ছিলেন ১৪০ সন্তানের বাবা