Thank you for trying Sticky AMP!!

ডানায় ভর করে ঘণ্টায় ১৮৬ মাইল

উইংস্যুট গায়ে চড়িয়ে ঘণ্টায় ১৮৬ মাইল বেগে উড়ে যান পিটার সল্‌জম্যান

বসে বসে ভিডিও দেখছিলাম ইউটিউবে। অস্ট্রীয় স্কাইডাইভার পিটার সল্‌জম্যানের। আল্পস পর্বতমালার দ্রাই ব্রুদার চূড়ার কাছাকাছি কোথাও ১০ হাজার ফুট উঁচুতে হেলিকপ্টার থেকে লাফ দিলেন তিনি। পেছনে আরও দুজন। এরপর পোশাকের ডানা (উইংস্যুট) মেলে ভেসে যান পর্বতসারির মধ্য দিয়ে। সবকিছু যেন ছন্দমাফিক। খানিক বাদে কোথায় যে কী করলেন! ছন্দে পতন ঘটল। বাকিদের ছাড়িয়ে সাঁই করে এগিয়ে গেলেন পিটার। পেলেন অনন্যগতি।

পিটার সল্‌জম্যান

ওয়েব ঘেঁটেঘুঁটে পিটারের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম ই-মেইলে। কোন মন্ত্রবলে এমন অনন্যগতি পেলেন, প্রশ্ন রাখলাম। সঙ্গে জুড়ে দিলাম, ঠিক করে বলুন তো, কী করেন আপনি?

‘আমি উড়তে ভালোবাসি। স্কাইডাইভিং, বেসজাম্পিং, প্যারাগ্লাইডিং এবং হ্যাং গ্লাইডিং করি। মোট কথা, উইংস্যুটের ডানা মেলে বাতাস কেটে এগিয়ে যাওয়া আমার সবচেয়ে পছন্দের। এর বাইরে প্যারাগ্লাইডিং প্রশিক্ষক এবং ট্যানডেম পাইলট হিসেবেও কাজ করি।’

যেন পরিচয় জানালেন। সিভিতে নিজের সম্পর্কে দুলাইন লেখেন যেভাবে, ঠিক তেমন। অবশ্য খোলাসাও করলেন খানিক বাদে।

বিএমডব্লিউয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বৈদ্যুতিক উইংস্যুট পরে লাফ দেন পিটার সল্‌জম্যান

জোট বাঁধলেন বিএমডব্লিউয়ের সঙ্গে

উইংস্যুট জাম্পিং একধরনের খেলা। ‘এক্সট্রিম স্পোর্টস’ ঘরানার। রক্তে অ্যাড্রেনালিনের স্রোত বইয়ে দেয়। বিশেষ পোশাক পরে কৌশল মেনে উঁচু কোথাও, হয়তো পাহাড়চূড়া থেকে লাফিয়ে পড়তে হয়। এরপর বাতাস কেটে এগিয়ে যাওয়ার পালা। অবতরণ করতে হয় প্যারাস্যুটের সাহায্যে।

পিটার সেখানেই থামেননি। উইংস্যুটে লাগিয়েছেন বৈদ্যুতিক প্রপেলার। জার্মান গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান বিএমডব্লিউয়ের সঙ্গে জোট বেঁধে তৈরি করেন বিশ্বের প্রথম বৈদ্যুতিক উইংস্যুট, যার প্রথম চালক তিনি।

উইংস্যুট পরে আগেই উড়তে পারতেন আর এখন পারেন ‘সুপারম্যানে’র মতো। অবশ্য ২০২০ সাল বলে কথা। চলচ্চিত্রের যেসব দৃশ্য একসময় হতবাক করে দিত, এখন বাস্তবে তার দেখা তো মিলবেই।

দুই সঙ্গীকে নিয়ে ভেসে যাচ্ছেন পিটার সল্‌জম্যান (মধ্যে)

পিটার সল্‌জম্যানের মাথায় বৈদ্যুতিক উইংস্যুটের ধারণা আসে প্রথম। বিএমডব্লিউ তার নকশার বাস্তব রূপ দিয়েছে। তবে এক দিনে হয়নি। তিন বছর ধরে তারা এ নিয়ে গবেষণা করেছে। অসংখ্যবার ওড়ার চেষ্টা করেছেন পিটার। অবশেষে ১০ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে ঘণ্টায় ১৮৬ মাইল বেগে উড়ে দেখিয়েছেন।

তবে বৈদ্যুতিক উইংস্যুটের ধারণা এল কীভাবে?

‘আমি নতুন ধরনের কিছু করতে চেয়েছিলাম। এমন কিছু, যা সাধারণ উইংস্যুটে সম্ভব না। সম্ভাব্য নানা উপায় নিয়ে ভাবলাম। এরপর যোগাযোগ হলো বিএমডব্লিউয়ের সঙ্গে। বেশ কয়েক দফা বৈঠক আর ধারণা নিয়ে ভাবতে ভাবতে বৈদ্যুতিক উইংস্যুটের কথা মাথায় এল।’

বাকিদের ছাড়িয়ে বাতাস কেটে এগিয়ে যাচ্ছেন পিটার

বড়জোর পাঁচ মিনিট

পিটারের উইংস্যুটের সামনের দিকে, বুকের কাছে সাড়ে সাত কিলোওয়াটের দুটি কার্বন প্রপেলার জুড়ে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত বোতাম চেপে প্রপেলারগুলো চালু করতে হয়। সেগুলো মিনিটে প্রায় ২৫ হাজার বার ঘোরে। সমস্যা একটাই, টানা মিনিট পাঁচেকের বেশি ওগুলো চলে না।

লাফঝাঁপ কিন্তু পিটারের ছোটবেলার অভ্যাস। কখনো সিঁড়ির ধাপ থেকে লাফিয়ে পড়েন তো কখনো খাট থেকে ঝাঁপ দেন। একটু বড় হলে নিরাপত্তা বজায় রেখে ছাদ থেকে লাফ দেওয়াও শুরু করলেন। তবে পাহাড় থেকে প্রথম কবে লাফিয়ে পড়লেন, মনে আছে সে কথা?

‘দিব্যি মনে আছে। প্রথম বেসজাম্পের জন্য কোমর বেঁধেই প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। স্কাইডাইভিংয়ের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে ব্রিজ থেকে প্রথম বেসজাম্প করেছিলাম। এরপর যেদিন পাহাড় থেকে লাফিয়ে পড়ার সময় এল, নিজেকে প্রস্তুত বলেই মনে হয়েছিল। তবু উত্তেজনার কোনো কমতি ছিল না।’

হেলিকপ্টার থেকে লাফিয়ে পড়ার আগ মুহূর্তে

এখনো কি দুরু দুরু বুকে লাফ দেন? বাতাসে ভেসে যেতে ভয় লাগে না?

‘যখন ভয় লাগে, তখন আমি লাফ দিই না। আর ভয় পাওয়া একদিক থেকে ভালোই। নির্বোধের মতো কিছু করা থেকে আপনাকে বাঁচাবে। নিজের অনুভূতিকে গুরুত্ব দেওয়া, মনের কথা শোনা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় এমন হয়েছে যে একটু এদিক-ওদিক হলেই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত। সে মুহূর্তগুলোতে অবশ্য ভয় পাওয়ার কোনো অবকাশ থাকে না। আপনাকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং সঠিক পথে না এগোলে বিপদ অনিবার্য। আর সে কারণেই সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হয়।’

মধ্য আকাশে উল্টো হয়ে খেলা দেখাচ্ছেন পিটার। দুবাইয়ের পাম আইল্যান্ডে

উড্ডয়ন তো বোঝা গেল। অবতরণ কীভাবে হয়?

‘আমি সব সময় প্যারাস্যুটের সাহায্যে অবতরণ করি। স্কাইডাইভিংয়ের সময় সঙ্গে অলটিমিটার থাকে। এর সাহায্যে উচ্চতা বোঝা যায়। অলটিমিটার দেখে ঠিক করতে হয় কখন প্যারাস্যুট খুলতে হবে। আর বেসজাম্পের বেলায় আশপাশটা দেখে আপনাকেই ঠিক করতে হবে কখন নামতে হবে। প্রত্যেকের অবতরণ আলাদা।’

আর অবসরে? তখন কী করেন?

‘পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সময় কাটাই। আমাকে ক্রীড়ামোদি বলতে পারেন। কোনো না কোনো খেলায় মেতে থাকি। পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াই।’

বিএমডব্লিউয়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

‘ওরা সব সময় ভবিষ্যতের প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। আমাদের প্রকল্পটি তো সফল হলো। এবার আমরা পরবর্তী ধাপের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

যে নতুন সম্ভাবনার শুরু করলেন পিটার, তার পরবর্তী ধাপের জন্য শুভকামনা জানিয়ে আমাদের আলাপ শেষ হলো সেখানেই।

বিএমডব্লিউয়ের সঙ্গে বৈদ্যুতিক উইংস্যুটে পিটার সল্‌জম্যানের প্রথম উড্ডয়ন