Thank you for trying Sticky AMP!!

অদ্রির অনুপ্রেরণা

যুক্তরাষ্ট্রের বল স্টেট ইউনিভার্সিটির ছাত্র অদ্রি হাসান। ছবি: সংগৃহীত

‘আমি একটু লাজুক স্বভাবের ছিলাম। মানুষের সঙ্গে মিশতে সংকোচ হতো। একসময় বুঝতে পারলাম, যদি আমি নিজের ওপর বিশ্বাস না রাখি, অন্য কেউ আমাকে বিশ্বাস করবে কেন?’ অদ্রি হাসান এত সুন্দর করে গুছিয়ে লিখলেন; বোঝা গেল, এখন আর তিনি সেই লাজুক ছেলেটি নেই।

অদ্রির সঙ্গে কথা হচ্ছিল ই–মেইলের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের বল স্টেট ইউনিভার্সিটিতে পড়ছেন এই বাংলাদেশি তরুণ। ক্যাম্পাসের আলফা কাপ্পা পিএসআই (একেপিএসআই) সংগঠনের প্রেসিডেন্ট তিনি। একেপিএসআই বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ও সবচেয়ে বড় ব্যবসাভিত্তিক ছাত্রসংগঠন, যা মূলত পেশার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মেলবন্ধন গড়ে দেয়। বিশ্বের তিন শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একেপিএসআইয়ের শাখা আছে। সংগঠনটির সাবেক সদস্যরা কাজ করছেন অ্যাপল, গুগল, ওরাকল, আমাজনের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে। তাঁরাই মূলত অনুজদের পথ দেখান। শিক্ষার্থীদের মধ্যে পেশাগত দক্ষতা তৈরির জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কর্মশালা, সভা আয়োজন করে একেপিএসআই। বর্তমানে বিশ্বের আনাচকানাচে ছড়িয়ে থাকা এর সদস্যসংখ্যা পাঁচ হাজারের বেশি।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো অনেকটা পরিবারের মতো। ক্যাম্পাসের বড়রা ছোটদের আগলে রাখেন, আবার ছোটরাও ভাইয়া বা আপুদের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। একেপিএসআইয়ের সংস্কৃতিও কি একই রকম? অদ্রি বললেন, ‘নিশ্চয়ই। নতুন একজন সদস্য এলে তাকে পুরোনো একজন সদস্যের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়, যিনি কিনা একজন মেন্টরের মতো কাজ করেন। আমরা একসঙ্গে রেস্তোরাঁয় যাই, একজন আরেকজনের বাসায় যাই। যখন আমি নতুন এসেছিলাম, বড়রা আমাকে ছোট ভাইয়ের মতোই দেখেছে, কখনো কখনো বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছে; যা পড়ালেখায় বা পড়ালেখার বাইরে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।’

কেমন করে প্রেসিডেন্টের পদটা আপনার হলো? জানতে চাই ফিন্যান্সের এই ছাত্রের কাছে। অদ্রি বললেন, ‘শুরুতে আমি ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলাম। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি নিজে থেকেই একটা উদ্যোগ নিলাম। জেইকো—যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির সবচেয়ে বড় ইনস্যুরেন্স কোম্পানি। তারা সব সময় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা অনুষ্ঠান আয়োজন করতে চেয়েছিল, কিন্তু কেন যেন হয়ে উঠছিল না। জেইকোকে প্রস্তাব দিলাম, চাইলে আমাদের সংগঠনের সঙ্গে তোমরা ক্যাম্পাসে একটা অনুষ্ঠান করতে পারো।’ জেইকো রাজি হলো। তবে শর্ত জুড়ে দিল, অদ্রিকে ২০ দিনের মধ্যে পুরো আয়োজনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। অদ্রিও চ্যালেঞ্জটা লুফে নিলেন। 

শুরু হলো বিশাল মহাযজ্ঞ। ঘুরে ঘুরে বিজনেস স্কুলের বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বললেন অদ্রি। সংগঠনের সদস্যদের ছোট ছোট দলে ভাগ করে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিলেন। পোস্টার বানানো, অনলাইনে প্রচারণা চালানো, খাবারের দেখভাল করা, রুম বরাদ্দ দেওয়া—কত কাজ! শেষ পর্যন্ত সফলভাবে ক্যাম্পাসে একটি প্রতিযোগিতা আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছিলেন অদ্রি। সেই সুবাদে এপ্রিল মাসে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে অনুষ্ঠিত একেপিএসআইয়ের বার্ষিক সম্মেলনে ‘মোস্ট আউটস্ট্যান্ডিং লিডার’–এর খেতাবও পেয়েছেন তিনি। এত সব কাজে ব্যস্ত থাকার পরও সেই সেমিস্টারে ডিন সম্মাননার তালিকায় ছিল অদ্রির নাম। শুধু একেপিএসআই নয়, ক্যাম্পাসের ফিন্যান্স সোসাইটির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।

লেখালেখিতে আগ্রহ আছে অদ্রি হাসানের। দ্য সিক্রেটস অব পাইরেট আইল্যান্ড ও মিনেস বিনিথ দ্য মাইনস নামে দুটো বই লিখেছেন তিনি। বাংলাদেশে পড়ালেখা করেছেন রাজশাহীর প্যারামাউন্ট স্কুলে।

সম্প্রতি ভীষণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে জেইকোতে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেয়েছেন অদ্রি। চাকরিদাতারা কেন আপনাকে বেছে নিল? প্রশ্নের উত্তরে বললেন, ‘সহশিক্ষা কার্যক্রমে আমার যুক্ততা তারা পছন্দ করেছে। এ ছাড়া ইন্টারভিউর সময় আমি ঠিকঠাক তাঁদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি, পাল্টা প্রশ্নও করেছি। বোধ হয় আমার যোগাযোগের দক্ষতাই অন্যদের চেয়ে আমাকে এগিয়ে রেখেছে।’ অদ্রি মনে করেন, মা-বাবাই তাকে তাঁর সেরাটা ঢেলে দিতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছেন। তাই সব শেষে যোগ করলেন, ‘আশা করি একদিন আমি তাঁদের গর্বিত করতে পারব।’