Thank you for trying Sticky AMP!!

অনিশ্চয়তা দিয়ে শুরু, পরে বিশ্বজয়

বাঁ থেকে রাফি আদনান, কাজী মঈনুল, সাব্বির হাসান, আবু সাবিক। ছবি: অস্মিত নন্দী মজুমদার

বিকেল চারটার দিকে প্রেজেন্টেশন। ভিডিও তৈরি প্রায় শেষ। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন সাব্বির হাসান। তাঁকে এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠিয়ে দলের বাকি তিন সদস্য থেকে যান হ্যাকাথনে, মনোযোগ দেন ভিডিও উপস্থাপনার দিকে। ভিডিও তৈরি করা হয়েছিল সাব্বিরের ল্যাপটপে। সেই ল্যাপটপ চালু করতে গিয়ে দেখা যায়, চার্জ শেষ। আবার চার্জ দেওয়ার পর দেখা গেল, ল্যাপটপে পাসওয়ার্ড দেওয়া। ফোন দেওয়া হলো সাব্বিরকে, কিন্তু সাব্বির আর ফোন ধরেন না! তখন বাকি আর মাত্র এক ঘণ্টা!
এ রকম অনিশ্চয়তা দিয়ে শুরু করার পরও যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা আয়োজিত অ্যাপস চ্যালেঞ্জে জয় পেয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) তরুণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দল অলীক—এস এম রাফি আদনান, কাজী মঈনুল ইসলাম, আবু সাবিক মাহদী, সাব্বির হাসান ও দলটির মেন্টর, সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বিশ্বপ্রিয় চক্রবর্তী। গত বুধবার বিকেলে স্বপ্ন নিয়ের পক্ষ থেকে কথা হয় তাঁদের সঙ্গে।

নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জ কী?
পৃথিবী ও মহাকাশবিষয়ক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ (সমস্যা) নিয়ে সারা বিশ্বের বিজ্ঞানী, কম্পিউটার প্রোগ্রামার (কোডার), বৈজ্ঞানিক গল্পকার, প্রযুক্তিবিদসহ আগ্রহীদের জন্য টানা ৩ থেকে ৪ দিনের প্রতিযোগিতার (হ্যাকাথন) আয়োজন করে নাসা। প্রাথমিক পর্যায়ে নানা দেশের ভিন্ন ভিন্ন শহরে আয়োজন করা হয় প্রতিযোগিতা। নির্বাচিতরা আসেন জাতীয় হ্যাকাথনে। জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীরা পরে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রকল্প উপস্থাপন করেন। বাছাই করে সাধারণত ছয়টি বিভাগে ২৫টি দলকে ফাইনালিস্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে প্রতিটি বিভাগে একটি দলকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
২০১৮ সালে বিশ্বের ৭৫টি দেশের ২০০টি শহরে প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য ২ হাজার ৭২৯টি দল অংশ নেয়। পরে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরেকটি বাছাইয়ের পর শীর্ষ ২৫ নির্বাচিত করা হয়। শীর্ষ ২৫ থেকে ছয়টি বিভাগে ছয়টি দল অ্যাওয়ার্ড পায়, যার মধ্যে একটি হলো শাবিপ্রবির অলীক। গত বছরের ১৯ থেকে ২১ অক্টোবর জাতীয় পর্যায়ে ৩৬ ঘণ্টার হ্যাকাথনে নির্বাচিত হয়ে অলীকের প্রকল্প গিয়েছিল মূল প্রতিযোগিতায়।

আমরা জিতে গেছি!
ডিসেম্বরের প্রথম দিকে ঘোষণা করা হয়েছিল ছয় ক্যাটাগরির ২৫ ফাইনালিস্ট দলের নাম। বেস্ট ইউজ অব ডেটা ক্যাটাগরিতে অলীক স্থান করে নেয় শীর্ষ চারে। এরপর অপেক্ষার পালা। প্রায় প্রতিদিনই ওয়েবসাইটে খবর দেখার চেষ্টা করেন। কোনো ই-মেইল আসে কি না দেখেন।
১৫ ফেব্রুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে দলের কনিষ্ঠ সদস্য সাব্বিরের চিত্কারে সবার ঘুম ভাঙে। সাব্বির ই–মেইল চেক করে দেখেন, আয়োজকেরা তাঁদের অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার খবর দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিশ্বজয়ের আনন্দে সাব্বিরের কথা জড়িয়ে যাচ্ছিল। বারবার শুধু বলছিলেন, ‘আমরা জিতে গেছি ভাই!’ সবাই ঘুম থেকে উঠে বিস্ময় নিয়ে ই–মেইলটি দেখেন। আর চিত্কার করতে থাকেন। এমন আনন্দের খবর তাঁরা মেন্টরকে জানাতে দেরি করতে চান না। মঈনুলের ভাষায়, ‘এত রাতে ফোন দিলে স্যার ঘুমে থাকেন কি না, ডিস্টার্ব করব কি না—এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। কিন্তু এমন খুশির খবর না বলে থাকা যায়? স্যারকে এসএমএস দিলাম। মুহূর্তেই সাড়া পেলাম।’
বাংলাদেশে নাসা অ্যাপস চ্যালেঞ্জের যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল হাসান বলেন, চূড়ান্ত পর্বে বিচারক হিসেবে থাকেন নাসার প্রধান বিজ্ঞানী, প্রধান কারিগরি কর্মকর্তাসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। তাঁদের বিচারে বাংলাদেশের তরুণদের লুনার ভিআর যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ বিশ্বের সেরা প্রতিষ্ঠানে কাজ করা লোকদের প্রকল্পকে পেছনে ফেলে বিশ্বসেরা হওয়া অনেক গৌরবের ব্যাপার।

যে প্রকল্পের জন্য বিশ্বজয়
পৃথিবী ও মহাকাশের বিভিন্ন সমস্যা দিয়ে নাসা অ্যাপস চ্যালেঞ্জে তা সমাধানের আহ্বান জানানো হয়। ২০১৮ সালে ‘ভার্চ্যুয়াল স্পেস এক্সপ্লোরেশন’–সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান করে অলীক ‘বেস্ট ইউজ অব ডেটা’ ক্যাটাগরিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়। সাধারণত মহাকাশযানে চড়ে চাঁদে অবতরণ করা খুবই ব্যয়বহুল। এখন পর্যন্ত মাত্র ১১ জন চাঁদে গেছেন। তবে তাঁদের অবতরণের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত নাসার কাছে আছে। ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে সাধারণ মানুষের চাঁদে অবতরণের একধরনের অভিজ্ঞতা নেওয়ার প্রকল্প হচ্ছে লুনার: ভিআর। এখানে একটি মুঠোফোন অ্যাপস ও ত্রিমাত্রিক মডেলের সাহায্যে চাঁদে অবতরণের অভিজ্ঞতা পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নাসার মূল কার্যালয় ঘুরে দেখার সুযোগ পাবেন অলীকের পাঁচ সদস্য। তবে যেতে হবে নিজ খরচে। কীভাবে সেই খরচের টাকা জোগাড় হবে, এখন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বিশ্বপ্রিয়, রাফি, সাব্বির, মাহদী ও মঈনুল। বিশ্বজয়ের পর অলীকের সদস্যরা দেখা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে। তিনি যথাসম্ভব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সহায়তা করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন।