Thank you for trying Sticky AMP!!

অপর্ণার অগ্রযাত্রা

অভিনয় নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন অপর্ণা ঘোষ l ছবি: প্রথম আলো

ৃত্তিকা মায়া চলচ্চিত্রের সেই ফাহমিদার কথা মনে আছে? বিক্রির হাতবদলে নিষিদ্ধ জগতে আসে মেয়েটি। একসময় ভালোবাসার মানুষের হাত ধরে সমাজের মূলস্রোতে মেশার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে কপালের লিখন! সেখানেও প্রতারণা। ভালোবাসার মানুষটিই তাকে বিক্রি করে দেয় আরেকজনের হাতে। শেষে নিজেই হয়ে ওঠে মানুষটির হন্তারক। চরিত্রটি দাগ কাটে দর্শকের মনে। শুধু তা–ই নয়, অভিনেত্রীর হাতে ওঠে ২০১৩ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (সেরা পার্শ্বঅভিনেত্রী)। তিনি অপর্ণা ঘোষ।
আবার সুতপার ঠিকানায় নারীর নানা বয়সের ভূমিকায় তাঁর অনন্য অভিনয়। চরিত্রের প্রতিটি স্তরে নিজেকে মেলে ধরেছেন। মেঘমল্লার ছবিতে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীর চরিত্রেও সমান পারদর্শিতা। প্রতিটি চরিত্রেই এমনভাবে তাঁর মিশে যাওয়া মুগ্ধ করে পরিচালকদের। এ তো গেল চলচ্চিত্রের কথা। তবে নাটক ও টেলিফিল্মেই তাঁর বিচরণ বেশি।
চট্টগ্রামের মেয়েটি ঢাকায় থিতু হয়েছেন ২০০৮ সালে। এর মধ্যেই অভিনেত্রী হিসেবে খ্যাতি দেশজুড়ে। জাতীয় অঙ্গনে পোক্ত অবস্থান। হবেই তো, অভিনয় যে তাঁর রক্তে। বাবা অলোক ঘোষ মঞ্চের মানুষ। সেই সুবাদে পুতুলখেলার বয়স থেকেই মঞ্চের আলোছায়ার সঙ্গে পরিচয়।
তাঁরা উঠে আসার গল্প শোনান অপর্ণা। ব্যস্ততার কারণে মুঠোফোনেই হয় কথা। অপর্ণা বলেন, ‘ছোটবেলায় মায়ের চাকরির সুবাদে আমরা থাকতাম রাঙামাটি শহরে। আর বাবার চাকরি চট্টগ্রাম শহরে। তিনি রাঙামাটি আসতেন প্রতি বৃহস্পতিবার। বাবা বৃহস্পতিবার এলে থাকতেন শুক্র ও শনিবার। এই দুই দিন সবকিছু বাদ, শুধু বাবার সঙ্গে ঘোরাঘুরি। এর মধ্যে বাবার হাত ধরে মঞ্চে আসা-যাওয়া শুরু হয়েছে। বাবা ছিলেন চট্টগ্রামের নাট্যদল নান্দিকারের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। পঞ্চম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকে নিয়মিত আমি বাবার সঙ্গে নাটকের শো দেখতে চলে আসতাম। চট্টগ্রাম শহরে তো বটেই, ঢাকার বেইলি রোডসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও গিয়েছি। আমিও কাজ করতাম টুকটাক। যেমন মঞ্চে ঢোকার আগে শিল্পীর পোশাকটা এগিয়ে দেওয়া, তাঁদের পানি খাওয়ানো। বেশ মজা পেতাম এসব করে। এরপর কলেজে ভর্তি হলাম চট্টগ্রামে। তখন থেকেই বাবার সঙ্গে থাকা শুরু। এবার আমি নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হলাম। প্রথম অভিনয় করি কোর্ট মার্শাল নাটকে। বাবা-মেয়ে একসঙ্গে অভিনয় করেছি নাটকে। প্রথমবার মঞ্চে উঠে তো আমার কাঁপা কাঁপি অবস্থা! সংলাপ বলার সময় ভীষণ ভয় লাগছে। তখন বাবাও মঞ্চে ছিলেন। ঠিকই তিনি আমাকে এগিয়ে দিয়েছেন। বাবার সাহায্যে সেই যাত্রায় বেঁচে যাই। অবশ্য পরবর্তী নাটক পাপ পুণ্যতে সেই জড়তা কেটে যায়।’
অপর্ণা অভিনীত টেলিভিশন নাটক মেড ইন চিটাগাং বেশ সাড়া জাগায় চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার সংলাপের নাটকটির নূরজাহান চরিত্রে অপর্ণা নজর কাড়েন। নাটকের কিছু সংলাপ তো এখনো সবার মুখে মুখে।
অপর্ণার ঢাকায় আসা শুরু ২০০৬ সালে, লাক্স-চ্যানেল আই সুপার স্টার প্রতিযোগিতায়। সেরা চারে ছিলেন। এর মধ্যে নাটকে ডাক। ঢাকা-চট্টগ্রাম আসা-যাওয়া চলল বছর খানেক। এরপর তো পাকাপাকিভাবেই রাজধানীতে।
চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা। অবস্থান গড়া চাট্টিখানি কথা নয়, কীভাবে এগিয়ে নিয়েছেন নিজেকে? অপর্ণার কণ্ঠে বিনয়ের সুর। বললেন, ‘অবস্থানের বিচার দর্শকের হাতে। তবে আমি মনে করি ভালো কাজের মূল্যায়ন সব জায়গায় হয়। সেখানে চট্টগ্রাম-ঢাকা মুখ্য হয় না। আর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমার প্রেরণা বাবা। তিনি সব সময় বলেন, “নিজের ওপর বিশ্বাস রাখো। তুমি পারবে।” এ কথাটি বারবার আমার কানে বাজে। যে প্রেরণা আমাকে শক্তি জোগায়। যেকোনো কিছু মোকাবিলা করতে পারি।’
ভবিষ্যতে কোন অবস্থানে দেখতে চান, চলচ্চিত্র নাকি নাটক? তিনটি শব্দে সেই উত্তর, ‘সময় বলে দেবে।’