Thank you for trying Sticky AMP!!

অপুষ্টিতে ভুগছে নারী

মিনা আক্তার প্রতিদিন কারওয়ান বাজারে পুষ্টিসমৃদ্ধ নানা সবজি বিক্রি করেন। কিন্তু দেশের আরও বহু নারীর মতো তিনিও ভুগছেন অপুষ্টিতে l ছবি: প্রথম আ​েলা

ফুলমতি বিবি (৩৫) দুপুর হতে না হতেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভাতের টিফিন বাক্স সংগ্রহ করেন। এরপর পৌঁছে দেন রাজধানীর সিদ্দিক বাজারের দোকানে দোকানে। দোকান মালিকদের খাওয়া শেষ হয়ে গেলে আবার সেগুলো সংগ্রহ করেন। কিন্তু তক্ষুনি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেন না বাক্সগুলো। বাক্সে বাক্সে যেটুকু উচ্ছিষ্ট পড়ে থাকে, তা-ই দিয়ে ফুলমতি দুপুরের খাবার সেরে নেন। কিছুটা পরিবারের সদস্যদের জন্য বাঁচিয়েও রাখেন। ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে এমন করেই দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন তিনি। কী দিয়ে খাচ্ছেন, জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ‘ডাইল দিয়া ভাত খাই। তয় মাঝেমইদ্যে একটু-আকটু মাছও পাই কোনো কোনো টিফিন বাটিতে। পেট ভরান নিয়া হইছে কথা। এত মাছ-মাংসের কী দরকার কন!’ কথায় কথায় ফুলমতি জানান, দুই মেয়ে আর অসুস্থ স্বামী আছেন পরিবারে। তাঁর একার রোজগারে সংসার প্রায় অচল। তাই এক কাপ চা আর একটা পরোটাতেই সকালবেলাটা চালিয়ে নেন। রাতেও ভাত আর ডাল অথবা কোনো কোনো দিন ডিম ভুনা, শুঁটকি বা আলুভর্তা।
দারিদ্র্যের কারণে পুষ্টিকর খাবার মেলে না ফুলমতির। কিন্তু গৃহবধূ আফসারা ইসলামের (২৭) অপুষ্টির কারণ দারিদ্র্য নয়। তিনি বলেন, ‘দুই বছরের ছোট আমার ভাই। কিন্তু ওকে সব সময়ই আলাদা যত্ন করা হতো। মাছের মাথা বা মাংসের বড় টুকরোটা ওর জন্যই তুলে রাখা হতো। এমনকি আমার বয়ঃসন্ধির পর ডিম খাওয়াও বারণ ছিল। এখন আমার বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আমার বাচ্চার বয়স সাত মাস। ও প্রায়ই অসুস্থ থাকে। জন্মের সময় ওজনও খুব কম ছিল। ডাক্তার বলেছেন, ছোটবেলা থেকে আমি অপুষ্টিতে ভুগেছি। এ জন্যই বাচ্চা ও আমার এত শারীরিক সমস্যা।’নারীর পুষ্টিহীনতার কারণে নারী ও তাঁর পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যও সংকটে থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডি ‘বাংলাদেশের নারী ও শিশুস্বাস্থ্য-২০১১’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছে, এ দেশে মায়েদের এক-তৃতীয়াংশ অপুষ্টির শিকার। উচ্চতার তুলনায় তাঁদের ওজন কম। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) ‘পুষ্টি জরিপ-২০১১’-তে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে নারীর পুষ্টিহীনতার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। এতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৫০ শতাংশের বেশি নারীই পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইিতমধ্যে বড় ধরনের একাধিক পুষ্টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এর একটি বাংলাদেশ সমন্বিত পুষ্টি প্রকল্প এবং অন্যটি জাতীয় পুষ্টি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কার্যক্রম সাফল্য পেলেও এখনও আমাদের দেশের বহু নারী পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। ফুড সিিকউরিটি নিউট্রিশনাল সার্ভেলেন্স প্রোগ্রাম (এফএসএনএসপি) ২০১১ এর এক জরিপে দেখা গেছে, বয়সের তুলনায় খর্বাকৃতির কিশোরীর হার ৩২ শতাংশ, বয়সের তুলনায় খর্বাকৃতির নারীর হার ৪২ শতাংশ, খাদ্যে কম অনুপুষ্টি উপাদান গ্রহণকারী নারীর হার ৬০ শতাংশ। দীর্ঘমেয়াদে শক্তির ঘাটতি আছে এমন নারীর হার ২৫ শতাংশ।

দেশে নারীর পুষ্টি পরিস্থিতি

নারীর অপুষ্টির সূত্রপাত জন্মের আগে থেকেই। এমনটাই মনে করেন পুষ্টিবিদ তাহমিদ আহমেদ। তিনি আইসিডিডিআরবির পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক। তাহমিদ বলেন, শিশুর যখন জন্ম হয়, তার ওজন অনেক কম হয়। অপুষ্টির কারণে খর্বকায় হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। এরপর কিশোরী বয়সে সে নারী-পুরুষের বৈষম্য ও অজ্ঞানতার জন্য অপুষ্টিতে ভোগে। সেই সঙ্গে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিও অন্যতম কারণ। খাবারের দাম দরিদ্র ব্যক্তিদের ক্রয়সীমার মধ্যে থাকে না বলেই দরিদ্র পরিবার সুষম খাবার গ্রহণ করতে পারে না। আবার সেই পরিবারে নারীরা খাবার পান আরও কম। এজন্য সরকারকে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারীর স্বাস্থ্য রক্ষায় বয়ঃসন্ধিকাল, যৌবনকালসহ সব বয়সে শরীরের প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। তাহলেই নারীর পুষ্টিহীনতার হার কমবে।