Thank you for trying Sticky AMP!!

আমাকে নিয়েও গুজব ছড়ানো হচ্ছে

দেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্ব উপজেলার সরকারি হাসপাতালের একজন চিকিৎসক আমি। মার্চের প্রথম দিকে সুইজারল্যান্ডে গিয়েছিলাম একটি সম্মেলনে অংশ নিতে। ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যেদিন উড়োজাহাজে উঠি, সেদিনই জানতে পারি, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সম্মেলনটি বাতিল করা হয়েছে। সে সময় যাত্রা বাতিল করার কোনো মানে হয় না। কারণ, করোনাভাইরাসের প্রকোপ তখনো সুইজারল্যান্ডে তেমন দেখা দেয়নি। আমার সুইস চিকিৎসক বন্ধুও আশ্বাস দিল। তারই বাসায় উঠলাম গিয়ে। সে আরও অভয় দিয়ে বলল, তারা এখনো জুরিখে কোনো আক্রান্ত রোগী পায়নি। 

আমার দেশে ফেরার টিকিট কাটা ছিল। সম্মেলন যেহেতু হচ্ছে না, ফেরার দিনের আগের সময়টুকু কাজে লাগাতে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলাম। চলে গেলাম গ্রিসে। যেদিন গ্রিসে পৌঁছাই, সমগ্র গ্রিসে তখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৫৫ জন। সেখানকার কাউন্সিলরের আতিথেয়তা পেলাম। ফাঁকা রাস্তাঘাট ও শপিং মলে ঘুরে বেড়ালাম ইচ্ছেমতো। 

ফেরার আগের দিনই জানলাম ইতালি অবরুদ্ধ। আমার টিকিট কাটা ছিল এথেন্স থেকে রোম-জেনেভা-জেদ্দা হয়ে ঢাকায় আসার। কী আর করা, টিকিট পরিবর্তন করে এথেন্স থেকে জেনেভার সরাসরি টিকিট কেটে উড়োজাহাজে উঠি। জেনেভা বিমানবন্দরে নামার পর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হলাম। সন্তোষজনক উত্তর দিতে পেরেছি বলেই সৌদি এয়ারলাইনসে ওঠার অনুমতি দিল। এদিকে জেদ্দায় পৌঁছে অনুভব করলাম, সৌদি আরবে করোনা নিয়ে খুবই কড়াকড়ি। তারা ৩০ মিনিট ধরে শুধু জিজ্ঞাসাবাদই করল না, চেকআপও করল। একটা হেলথ ডিক্লারেশন ফরমও জমা নিল। এভাবেই ফিরে এলাম ঢাকায়, বিমানবন্দরে। কথা বলে জানতে পারলাম, আমার মধ্যে যেহেতু করোনার কোনো লক্ষণ নেই, করোনায় আক্রান্ত কোনো মানুষের সরাসরি সংস্পর্শে আসিনি, তাই কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে না।

চলে আসি আমার কর্মস্থলে। এরই মধ্যে সরকার আদেশ দেয় বিদেশ থেকে ফিরলেই সেলফ-কোয়ারেন্টিনে থাকার। কোনো উপসর্গ না থাকা সত্ত্বেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে নিজেকে গৃহবন্দী করি। 

আমি ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করি। আমার মতো ঘুরে বেড়ানো মানুষ একটি দিন ঘরের মধ্যে থাকতে পারে, সেটা পরিচিত কেউ বিশ্বাস করবে না। যে কারণে আমার অধিকাংশ সহকর্মী খুব ভয়ে আছেন, পাছে না আমি বের হয়ে পড়ি। আমি নিজেও বুঝতে পারছি একা একা ঘরবন্দী থাকা সত্যি কষ্টের। আমি যেহেতু পরিবার ছেড়ে একা থাকি, তাই রান্নাও (পারি না তেমন) করতে হচ্ছে। খাওয়া, ঘুমানো ছাড়া তাই দিন কাটছে উপন্যাস পড়ে আর সিনেমা দেখে। 

এদিকে ভিন্ন অভিজ্ঞতার মুখোমুখিও হয়েছি। অনেকের ধারণা, আমার সঙ্গে ফোনে কথা বললেও করোনা ছড়াবে। আমার কোয়ারেন্টিন নিয়ে গুজবও ছড়িয়েছে। অনেকে কল করে জানাল, বাইরে প্রচার হয়েছে আমি নাকি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। একজন তো সরাসরি কলই করলে বললেন। তিনি আমার এক পুরোনো রোগী। সেদিন ফোন করে প্রশ্ন করলেন, ‘আফা, আফনি নাকি বিদেশ থেকে ভাইরাস আনছেন?’

 কীভাবে বোঝাই, আমি সুস্থ। সেলফ-কোয়ারেন্টিন শেষে কাজে ফিরেও এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হব হয়তো। তাদের কীভাবে বোঝাব, গত দিনগুলোতে আমি একবারও হাঁচি-কাশি দিইনি, আমার ভেতর জ্বরসহ অন্য কোনো উপসর্গ নেই। 

যখন লিখছি, তখন ১৮ মার্চ, কোয়ারেন্টিনে আছি সাত দিন হলো। সাত দিন খোলা আকাশ দেখছি না। আমার শিশুরোগীদের দেখছি না। মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। বাকি সাত দিন কেটে গেলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। কিন্তু একটা সংশয় মনের ভেতর উঁকি দিচ্ছে, আমি মুক্ত হলেও এখানকার লোকজন কি মানবে যে আমি পুরোপুরি সুস্থ ছিলাম! 

১৮ মার্চ ২০২০