Thank you for trying Sticky AMP!!

আমাদের লাল বাস কিংবা নীল দিঘির আয়না

বৃষ্টিস্নাত নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য অন্য রকম। ছবিটি তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজীববিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র তামজিদ অনিক।

মানুষের হইচই, গাড়ির হর্ন ও বাজারের জায়গাটা পেরিয়ে পিচঢালা রাস্তা চলে যাবে দূর সুবর্ণচরের দিকে। কিন্তু এরই মধ্যে আঁকাবাঁকা খালটাকে সঙ্গে নিয়ে লাল বাসগুলো পৌঁছে যাবে এই ভূখণ্ডের অন্যতম উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের পথেই চোখে পড়বে একে একে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, ফাউন্টেন পেন আকারের শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিসৌধ ও গোলচত্বর।

দেশে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে সরকার ১৯৯৮ সালে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার প্রকল্প হাতে নেয়। ২২ জুন, ২০০৬ সালে ৪টি বিভাগ নিয়ে দেশের ২৭তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৫ম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বর্তমানে ৬টি অনুষদ, ২৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট নিয়ে চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। অনুষদগুলো হলো প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ, বিজ্ঞান অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, আইন অনুষদ ও শিক্ষা অনুষদ এবং ইনস্টিটিউটের মধ্যে আছে তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউট ও তথ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫টি আবাসিক হল, ২টি একাডেমিক ভবন, একটি মিলনায়তন, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য পৃথক আবাসিক ভবন। এ ছাড়া বিশাল একাডেমিক ও ল্যাব ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে একটি বিশ্বমানের সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার প্রস্তাব করা হয়েছে। গ্রিনহাউস গবেষণাগারসহ নানা রকম প্রকল্প নিয়ে আলোচনা চলছে।

‘নিউমেনিয়া নোবিপ্রবিয়া’ নামের একটি অমেরুদণ্ডী প্রাণী আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, তাই নামকরণও করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে। সেমিনার, কনফারেন্স ও বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার আয়োজন হয় নিয়মিত। তা ছাড়া নোবিপ্রবি বিজনেস ক্লাব, নোবিপ্রবি ফটোগ্রাফি ক্লাব, নোবিপ্রবি ছায়া জাতিসংঘসহ অনেক সংগঠন রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ ও দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।

মনে আছে ক্যাম্পাসে কোনো একটি অনুষ্ঠানে একবার লোকজন কম হয়েছিল। এক বড় ভাই মজা করে বলেছিলেন, ‘শুধু জার্মানিতে অধ্যয়নরত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা একটি মিলনমেলার আয়োজন করলে এর থেকে বেশি মানুষ হবে।’ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কাজ করছে বাংলাদেশ কর্মকমিশন থেকে শুরু করে সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে। ১০১ একরের এই ক্যাম্পাসের সঙ্গে রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীর আত্মার বন্ধন।

দিন শেষে এই ক্যাম্পাসের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্লান্তি দূর করে দেয়। হলের ছাদ থেকে দেখা ওপারের গ্রামের ঘরগুলো কিংবা মেঘ বয়ে গিয়ে আলোছায়ার অদ্ভুত সুন্দর খেলা মুগ্ধ করবে যে কাউকে। মেঘের দিনে ছাতা হাতে হলরোড ধরে আসা একদল প্রফুল্ল মুখ অথবা শরতে মাঠ মোড়ানো কাশফুল কিংবা শীতকালে এই ক্যাম্পাসের জলাশয়ে মাছ খুঁজতে থাকা অতিথি পাখিগুলো মন ভরিয়ে দেয়। কখনো আকাশটা গাঢ় নীল দেখাবে ক্যাম্পাসের প্রাণ—নীল দিঘির আয়নায়, কখনো সূর্যমুখীর হলুদের দেশে আটকে যাবে তোমার চোখ।

দিন শেষে লাল বাসগুলো যখন আবার শহরের উদ্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়বে, তখন লাল সূর্যটা ঠিক তোমার গালে হাসবে আর আঁকাবাঁকা সবুজ রাস্তাটা শ্রান্ত মনকে জাগিয়ে তুলবে, বুনবে স্বপ্নের বীজ। ঝাউগাছের অদ্ভুত শব্দ করা এই প্রাঙ্গণে রইল তোমাদের আমন্ত্রণ।

পরিসংখ্যান বিভাগ, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়