Thank you for trying Sticky AMP!!

আমিরাতে প্রধানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র প্রবাসীদের ভাবনা

জিনাত রেজা খান

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবদান দ্বিতীয় শীর্ষে। আবার এই দেশ তেল উৎপাদনে পৃথিবীতে অষ্টম। আরব অর্থনীতিতেও এর অবদান দ্বিতীয়।
নির্মাণ সেক্টরে এ বছর এ দেশ বিনিয়োগ করেছে ৩১৫ বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে দুবাইতে ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০-এর ৩০ বিলিয়ন ডলারের কর্মযজ্ঞ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। এই প্রকল্পে তিন লাখ লোকের নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে অক্টোবরে এই দেশে বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধের ২৬ মাস পূরণ হলো। ভিসা সংকটে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নির্মাণ সেক্টর, হোটেল ও গ্যারেজের মালিক ও শ্রমকর্মীরা। সমস্যায় পড়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগকারী বাংলাদেশিরা।
এ নিয়ে দূতিয়ালি হয়েছে। চিঠিপত্র চালাচালি হয়েছে। প্রবাসীরা ভিসাসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের আশা করেছেন প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার চলতি সফরের মাধ্যমে। তিনি আজ শনিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতে এসেছেন। এখন কথা হচ্ছে তাঁর সফরের মূল কার্যসূচি কী? যতটুকু জানা যায়, বন্দিবিনিময় চুক্তি, নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে চুক্তি হবে। হতে পারে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিনিয়োগ নিয়ে কথা। শ্রমিক রপ্তানির চুক্তিও হতে পারে। ভিসা জটিলতা নিয়ে আলোচনা হবে। বিষয়টি ধরে দুবাই আবুধানিতে এখন আলোচনা চলছে। চায়ের দোকান, রেস্তোরাঁয় এ নিয়ে প্রবাসীরা তাঁদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করছেন। কোনো কোনো অফিসেও বিষয়টির ওপর তাঁদের মতামত ব্যক্ত করতে দেখা যাচ্ছে। আমিরাতের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের বাংলাদেশি শিক্ষকেরাও প্রধানমন্ত্রীর সফরের ওপর বেশ মনোযোগী।

তইমুর শরীফ

আনন্দযাত্রা সাংস্কৃতিক মঞ্চ আবুধাবি এবং আনন্দধারা সাংস্কৃতিক মঞ্চ দুবাইয়ের মাধ্যমে আমিরাতপ্রবাসী বিশিষ্ট চার ব্যক্তির সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়।
তারা হলেন রাবদান একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক জমির চৌধুরী, বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যাপক আবু তাহের, আল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তইমুর শরীফ এবং উলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক জিনাত রেজা খান। উল্লেখ্য, প্রথম তিনজনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবুধাবিতে আর শেষজনের দুবাইতে।
জমির চৌধুরী বন্দিবিনিময়ে একটি সম্মানজনক চুক্তি আশা করেন। অপরাধীকে দেশে নিয়ে শাস্তি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর হতে পারে বলে ধারণা করেন তিনি। তাঁর কথা, ‘এতে কিছুটা হলেও আমাদের সম্মান বাঁচবে। অন্যদিকে এদেরও অর্থের সাশ্রয় হবে।’
ভিসা ট্রান্সফার না হওয়াতে হিলটন গেটে কর্মীদের মানবেতর জীবনের চিত্র তুলে ধরেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সফরে বন্দিবিনিময়সহ অন্যান্য ব্যাপারে একটি সুবাতাস বইয়ে আনবে বলে প্রত্যাশা তাঁর।
অধ্যাপক আবু তাহের শ্রমিকদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেন। তিনি বলেন, তীর্থের কাকের মতো বসে আছেন প্রবাসীরা। ভাবমূর্তি সংকটে শ্রমিকদের সংলগ্নতার পেছনে এক ধরনের বাস্তবতাকে দায়ী করেন তিনি। তাঁর ধারণা দূতাবাসকে নিয়ে প্রবাসীরা ভাবমূর্তি সংকট নিরসনে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে। তিনি বলেন, এখনকার চাওয়া, এখানকার সরকারকে বুঝিয়ে ভিসাপ্রক্রিয়া চালুর ব্যবস্থা করা।
তইমুর শরীফ মানবসম্পদ নিয়ে গবেষণা করেন। শ্রমিকদের সম্পর্কে তিনি ব্যখ্যা দেন। আর্থিক অনটন আর প্রতারণার শিকার হয়ে শ্রমিকরা অপরাধ কর্মে জড়িত হয়ে পড়েন। তিনি জনশক্তি রপ্তানিতে এজেন্ট নিয়োগে সতর্কতা, শ্রমিকদের জীবনবৃত্তান্ত অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।

জমির চৌধুরী

তইমুর শরীফ দক্ষ জনশক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, ব্যাংকার, হিসাববিদদের মতো পেশাজীবীরা এদেশে চাকরি করলে দুই দেশেরই কল্যাণ হবে। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে বিষয়টি উঠে আসবে, এমন আরজি জানালেন তিনি।
তইমুর শরীফ বলেন, অদক্ষ শ্রমবাজারে বাংলাদেশি নারী শ্রমিকেরা অনেক বেশি প্রতারণা আর নির্যাতনের শিকার হন। তিনি জোরের সঙ্গে উল্লেখ করেন, নির্মাণসহ স্বাস্থ্যহানিকর ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ধার্য করার দাবিটি খুবই প্রাসঙ্গিক।

অধ্যাপক আবু তাহের

প্রভাষক জিনাত রেজা খান তার ছাত্রদের সম্পর্কে কথা বলতে বেশি স্বচ্ছন্দ। মেধাবী ছাত্ররা বিশাল বিশাল কোম্পানিতে চাকরি পাওয়ার পরও সে সুযোগ গ্রহণ করতে পারছে না। কারণ ওই ভিসা সমস্যা। তিনি বলেন, তাদের সামনে কোনো বিকল্প থাকে না। হয় পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, নয় বাধ্য হয়ে দেশে ফেরা।
আবার ১৮ বছর বয়সোর্ধ্ব ছেলে বাবার ভিসায় থাকতে পারে না। জিনাত বলেন, কিছুসংখ্যক ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসা পেলেও সিংহভাগ ছাত্রই পড়ে বিপদে। বয়স বিবেচনায় এবং আর্থিক সমস্যায় অনেকেই তাদের বিদেশে পাঠান না। এ ক্ষেত্রেও ফিরতে হয় দেশে। এতে ভাগ হয়ে যাচ্ছে পরিবার। তিনি সন্তান ছাড়া এই সংসারকে কারাগার বলে আখ্যা দেন। জিনাত বলেন, প্রবাসীরা এই অবস্থার পরিত্রাণ চায়।
বন্দিবিনিময় চুক্তি, নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি—এসব কি ভিসা সমস্যা সমাধানে প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর ওপর আশা রাখে। সেজন্য তাঁরা সবই চায়। তবে সবচেয়ে আগে চায় ভিসা জটিলতার নিরসন। আমরাও আশা করছি, প্রধানমন্ত্রী সফল হবেন এক্ষেত্রে।
নিমাই সরকার
আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত