Thank you for trying Sticky AMP!!

আর দুষ্টুমি নয়

চৈত্র মাস শেষ হয়ে আসছিল তখন। পরীক্ষা শেষ স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। আশপাশের বন্ধুরা সবাই বেড়াতে গেল যার যার আত্মীয় বাড়ি। আমি মায়ের কাছে বায়না ধরলাম নানুর বাড়ি যাওয়ার। মা কখনো আমাকে একা ছাড়তে চাইত না। কারণ, আমার ছোটাছুটি আর পানিতে ডোবাডুবির কোনো সীমা নেই। নানুর বাড়িও যেতে হয় শ্মশান ঘাটের পাশ দিয়ে, তাই মায়ের ভয় আরেকটু বেশি, রাতবিরাতে বের হলে আবার কি-না–কি হয়। আবার পানিতে নামলে কে ডেকে ওঠাবে, মায়ের এমন কত চিন্তা। কিন্তু আমার নানুর বাড়ি যেতেই হবে বৈশাখের আগে। পয়লা বৈশাখে সেখানে বড় মেলা হয়। আর আমার অন্য খালাতো ভাইয়েরাও নানুর বাড়িতে এসে হাজির হয়েছে। অনেক কষ্ট করে পানিতে না নামার শর্তে মা যেতে দিতে রাজি হলো। আর আমাকে পায় কে, পরদিন সকালে সাইকেলে চেপে তুফানের বেগে ছুটলাম। 

আমার সাইকেলের আওয়াজ পেয়েই সুমন, রিসেল, নিলয় বেরিয়ে এল। এ যেন চিরচেনা শব্দ। আমরা চারজন এক জায়গায় হলে নানু বেশ ভয় পান। কারণ, কোন সময় কী করে বসি, তা কেউ জানে না। রিসেল তো একবার আমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিল। আমিও রাগ করে তার হাত ভেঙে দিয়েছিলাম। তাই নানু আমাদের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে রাখেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। একদিন চারজন পুকুরে গোসল করতে নেমেছি। ডুব দিয়ে কে কতক্ষণ পানির নিচে থাকতে পারি, সেই প্রতিযোগিতা। সুমন ডুব দিয়ে আমাদের সবার চেয়ে বেশি সময় থাকতে পারে। কিন্তু সেদিন অনেক সময় হয়ে গেলেও সুমন উঠছিল না। আমরা তখনো ভাবছি, সে হয়তো ডুব দিয়ে পাড়ের ঝোপে আমাদের চোখ ফাঁকি দিচ্ছে।

কিন্তু না, অনেক সময় পার হয়ে গেছে, আমরাও হইচই, ডাকাডাকি শুরু করি। মামা, নানা, বাড়ির আরও অনেকে পানিতে লাফিয়ে পড়ে। ডুব দিয়ে দিয়ে সবাই হয়রান। বেশ খানিক বাদে মামার পায়ে লাগে একজন মানুষের দেহ। তিনি ডুব দিয়ে বুঝতে পারেন, সুমন গুটি মেরে বসে আছে। তাকে ধরে পানি থেকে ওঠানো হয়। পানিতে তার পেট ফুলে ঢোল হয়ে গেছে। ওঠানোর পর, মানুষের ভিড় পড়ে গেল। পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করা হলো। কাকে যেন দেখলাম ডাক্তার ডাকতে গেলেন। 

ঘটনার আকস্মিকতায় আমরা যখন হতভম্ব, নানু কোনো কথা না বলে আমাদের তিনজনকে জালি বেত দিয়ে বেদম পেটাতে শুরু করলেন। আর বলতে থাকলেন, ‘তোদের জন্য আমার চোখে ঘুম নাই আজ কত দিন। কবে তোরা দুষ্টুমি ছাড়বি? আজকে তোদের মারতে মারতে শেষ করে ফেলব।’

সুমনের জ্ঞান না ফিরলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমরা সবাই ভয়ে অস্থির। পাশের বাড়ি ডঙ্গির মা বলে চলে, ‘এই পুকুরটা এমনি ভালো না। বছরখানেক আগে করিমের পোলাডা মারা গেছে, তবুও পোলাপানের কলিজাত ডর নাই।’ আমরা আতঙ্কগ্রস্ত মন নিয়ে সবাই অপেক্ষা করি হাসপাতাল থেকে কী খবর আসে। 

সেদিন ছয় ঘণ্টা পর জ্ঞান ফেরে সুমনের। মামা যখন ফোন করে খবরটা জানাল, আমরা তিনজন শপথ করলাম দুষ্টুমি না করার।  

মাসুম আলভী

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।