Thank you for trying Sticky AMP!!

উৎসবের রং বাড়াতে

বৈশাখ উপলক্ষে হাতে অাঁকা শাড়ি বানান শামীমা

বাংলা নববর্ষ আসার সময় হলেই ব্যস্ততা বাড়ে শামীমা আক্তার ও আলাভী তাসনিমের। সেই ব্যস্ততা সৃজনশীল কাজের। দুজনই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ছাত্রী। তাই বৈশাখের রঙিন উৎসবে উপকরণ তৈরি করেন তাঁরা। একজন শাড়িতে আঁকেন আলপনা, আরেকজন টোপর কিংবা মুখোশে নকশা আঁকেন। শোভাযাত্রাসহ বৈশাখের নানা আয়োজনে যে সাধারণ মানুষেরা অংশ নেন, তাঁরা শামীমা ও আলাভীর তৈরি শাড়ি ও টোপর কেনেন।

পাবনার ঈশ্বরদীর মেয়ে শামীমা আক্তারের ডাকনাম বন্যা। পড়ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রইং ও পেইন্টিং বিভাগে। শাড়ি তৈরির জন্য একটা প্রতিষ্ঠানও তৈরি করেছেন তিনি। নাম ‘সুঁই ফড়িং’।
চারুকলা অনুষদের মৃৎশিল্প বিভাগের ছাত্রী আলাভী তাসনিম বৈশাখ উপলক্ষে মুখোশ ও টোপর তৈরি করছেন। বগুড়ায় বাড়ি তাঁর। তিনিও চালু করেছেন নিজের প্রতিষ্ঠান—‘আটপৌরে’।

আগে চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে নববর্ষের শোভাযাত্রার জন্য নিজেরা মুখোশ তৈরি করতেন। কয়েক বছর হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও শোভাযাত্রা বের করছেন। তাঁরা তো আর নিজেরা মুখোশ বানাতে পারেন না, তাই তাঁদের মুখোশ বানিয়ে দেন চারুকলার অনেকেই। আলাভী ও শামীমা—নিজেদের শোভাযাত্রার জন্য এমনিতেই আগে মুখোশ বানাতেন। পরে অন্য বিভাগের শোভাযাত্রার জন্য ফরমাশ পেয়ে মুখোশ তৈরি শুরু করেন। এ থেকে আয়ও করছেন তাঁরা। গত বছর সরকারিভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ পরে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ হওয়ার পর আলাভী তাসনিম ফেস্টুনে ব্যবহারের জন্য মুখোশ তৈরি করেন। আর শামীমা শাড়িতে আল্পনা আঁকতে শুরু করলেন।

রাজশাহী নগরের মেহেরচণ্ডী খড়খড়ি এলাকার একটি বাড়িতে বৈশাখের জন্য শাড়ি তৈরি করছেন শামীমা। ৭ এপ্রিল বিকেলে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির ছাদে লম্বা একটি কাঠের ফ্রেমে টানটান করে শাড়ি আটকে তুলি দিয়ে ছবি আঁকছেন শামীমা। শাড়িগুলো সুতি আর সিল্কের। শাড়িতে লোকজ মোটিফ, কৃষ্ণচূড়া, শিমুল, পলাশ, পারুলসহ বিভিন্ন ফুল ও জ্যামিতিক নকশা ফুটিয়ে তুলছেন অ্যাক্রিলিক রং দিয়ে। সহযোগিতা করছেন সুভাষ পালসহ কয়েকজন সহপাঠী।

শামীমা জানালেন, ফরমাশ দিলে তবেই তাঁরা শাড়ি তৈরি করেন। ‘নববর্ষ ছাড়াও বসন্ত উৎসব ও ঈদে শাড়ির ফরমাশ পাই। নববর্ষের আগে দু-তিন দিন রাত জেগে কাজ করি। এই কাজে আনন্দটাই পাই বেশি।’ বললেন শামীমা। পড়াশোনা শেষ করে চাকরি না খুঁজে নিজের প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাতেই চান তিনি। ঢাকায় একটি ব্যাংকে কর্মরত আছেন রিজভী তান্নী। তাঁর শ্বশুরবাড়ি রাজশাহীতে। এই সুবাদে তিনি শামীমার খোঁজ পেয়ে যান। তিনি পয়লা ফাল্গুনে শামীমার আঁকা শাড়ি কিনে পরেছিলেন। এবারের পয়লা বৈশাখেও শাড়ি তৈরি করে নিচ্ছেন। বললেন, ‘ওর আঁকা খুবই সুন্দর।’

৮ এপ্রিল বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে গিয়ে দেখা যায়, মাঠে বসে টোপর তৈরি করছেন আলাভী তাসনিম। এরপর টোপরের গায়ে আল্পনা আঁকা হচ্ছে। পাশাপাশি রঙিন কাগজ কেটে নকশা করে আল্পনার মধ্যে বসিয়ে মুখোশের আকৃতি দেওয়া হচ্ছে। জানালেন, এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের টোপর তৈরির ফরমাশ পেয়েছেন। গত ৩১ মার্চ থেকে কাজ শুরু করেছেন। প্রথম বর্ষের দুজন ছাত্রী তাঁকে সহযোগিতা করছেন। আলাভী বললেন, ‘টোপর ও মুখোশ বানিয়ে আনন্দ পাই। পড়াশোনা শেষ করে আমার “আটপৌরে”কে দাঁড় করানোর চেষ্টা করব।’
শামীমা ও আলাভী নিজেদের সৃজনশীলতায় যেমন আনন্দ পান, তেমনি উৎসবের রং বাড়িয়ে দিতেও রাখছেন ভূমিকা।