Thank you for trying Sticky AMP!!

এই দুটি দিন হোক পরিবারের

পয়লা বৈশাখে পরিবারের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটুক। মডেল: বাপ্পী, মাহি ও আমায়রা। ছবি: খালেদ সরকার

এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে শুভ (ছদ্মনাম)। একরকম অখণ্ড অবসরই তার হাতে। ঘুরে বেড়ানোর একটি ফেসবুক গ্রুপের সদস্য সে। গ্রুপ থেকে একটি আয়োজনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, কুয়াকাটায় বাংলা বর্ষবরণ। শুভর খুবই ইচ্ছা কুয়াকাটায় পয়লা বৈশাখ কাটানোর এই আয়োজনে যাওয়ার।

মা-বাবার কাছে মনের ইচ্ছার এই কথা পাড়তেই দুজনে বললেন, ‘যেতে পারো, কিন্তু পয়লা বৈশাখের দিন আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে পরিবার কি আলাদা আলাদা থাকতে পারে?’

শুভর মনে আছে গত বছর চৈত্র মাসের শেষ দুই-তিন দিন বোনকে রেখে মা-বাবাসহ তারা তিনজন গিয়েছিল খাগড়াছড়ি। পার্বত্য অঞ্চলের বেশ কটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বৈসাবি উৎসব দেখতে। পানি ছিটানো খেলা, ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, বর্ণিল শোভাযাত্রা দেখে দারুণ লেগেছিল তার। পয়লা বৈশাখও খাগড়াছড়িতে কাটানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল শুভ। বাবার সেই কথা বছরের প্রথম দিন, উৎসবের দিন, পুরো পরিবার থাকতে হবে একসঙ্গে। তাই আবার ঢাকায় ফিরে আসা।

পয়লা বৈশাখ ভোর থেকেই ঢাকা শহর বর্ণিল হয়ে ওঠে। রমনার বটমূলে ছায়ানটের আয়োজন, সকাল আটটায় চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা, শিশুপার্কের সামনে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী ওদিকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সুরের ধারার বর্ষবরণ কত না আয়োজন বাঙালির নববর্ষ উদ্‌যাপনে। রাস্তায় কাঁচা আমভর্তা, পেয়ারা মাখা, কাঁঠালের মুচিভর্তা, গজা, খাজা, পান্তা, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, এয়ারগান দিয়ে বেলুন ফুটানো-সবই তো উৎসবের অনুষঙ্গ। শুভদের পরিবার ভোর থেকে বেলা দশটা-এগারোটা পর্যন্ত শাহবাগ-রমনায় কাটিয়ে বাসায় ফিরে আসে। পান্তা বসানো থাকে আগের রাতেই। মরিচ, শুঁটকি, ডালভর্তা আরও কয়েক পদ দিয়ে চলে খাওয়াদাওয়া। এরপর আবার বিকেলে বেরোনো।

ঢাকায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎসবের আয়োজনও বাড়তে থাকে। ধানমন্ডি লেক, বনানী, কলাবাগান খেলার মাঠ নানা জায়গায় কনসার্ট, বৈশাখী মেলা-আয়োজনের শেষ নেই। খোলামেলা অনেক জায়গায় অনুষ্ঠান না থাকলেও মানুষের কমতি নেই। শুধু কি ঢাকায় এমন? বাংলা নববর্ষ এমনই এক উৎসব যা সবার জন্য। সব জায়গার জন্য। বৈশাখী মেলা, রঙিন মঙ্গল শোভাযাত্রা, ঘুড়ি উৎসব, নগরদোলা-দেশের সব স্থানেই পয়লা বৈশাখ উৎসবের রঙিন।

ফ্যাশন উদ্যোক্তারা বলছেন বেশ কবছর হলো বাংলা নববর্ষে নতুন কাপড় কেনা ও পরার চল বেশ বেড়েছে; দিন দিন তা বাড়ছেই। এখানেও চলে আসছে পরিবার। পরিবারের সব সদস্যের জন্যই চাই পয়লা বৈশাখের পোশাক। বাজারের হিসাবে ঈদের পরেই নতুন পোশাকের বিক্রি এখন বৈশাখ কেন্দ্র করে। বাঙালি ঐতিহ্যের পোশাকই বেশি দেখা যায় এই সর্বজনীন উৎসবে।

শুধুই কি পয়লা বৈশাখ! চৈত্রসংক্রান্তির উদ্‌যাপনও কম নয়। নববর্ষের বেশ কদিন আগে থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শুরু হয়ে যায় মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রস্তুতি। প্রমাণ আকারের বড় বড় পুতুল, মুখোশ বানানো চলে যেমন, তেমনি সুন্দর ছোট ছোট মুখোশ বানাতে থাকেন চারুকলার ছাত্রছাত্রী আর শিল্পীরা। নান্দনিক এই মুখোশগুলো বিক্রিও হয়। শিল্পীরা স্বেচ্ছায় এঁকে দেন, মুখোশ বিক্রির টাকা দিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার উপাদানগুলোর খরচ মেটানো হয়। বৈশাখের আগের রাতে চারুকলার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখে আসাও এই উদ্‌যাপনের অংশ।

প্রতিবছরই নিয়ম করে পয়লা বৈশাখের ভোরে রমনা-চারুকলায় যান চিত্রশিল্পী ও ফ্যাশন ডিজাইনার মণিদীপা দাশগুপ্ত। তার কয়েক দিন আগে থেকেই যান চারুকলায়। নিজেও মুখোশ বানিয়ে দেন। চৈত্রসংক্রান্তির রাতে বাসায় পরিবার ও পারিবারিক বন্ধুদের নিয়ে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন চলে। বললেন, ‘পয়লা বৈশাখের সকালে চারুকলায় গেলেই সব বন্ধুর দেখা মেলে। তাদের সঙ্গে দুপুর পর্যন্ত কাটিয়ে ফিরে আসি। রাতে স্বামী-সন্তানকে নিয়ে বাইরে কোথাও খেতে যাই।’

আবার ধরা যাক ব্যবসায়ী আহমেদ হাসানের কথা। পয়লা বৈশাখ সকালে বেরোতেই হবে, পরিবারসহ। বেশ কবছর নিজের পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের পরিবার নিয়ে চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজন করেছেন ঘরোয়াভাবে। বললেন, ‘চৈত্রসংক্রান্তি আর পয়লা বৈশাখ-এই দুটি দিন সবাই মিলে আনন্দ করা যায়। বাঙালির এ উৎসব তো সবার জন্যই। তাই আগের রাতে নিজেরা খাওয়াদাওয়া ও গানবাজনার আয়োজন করেছি। রাত পোহালেই আবার নববর্ষের আনন্দ।’

এবারের পয়লা বৈশাখের আগের দিন শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটি। দুটির দিন পাওয়া যাচ্ছে উৎসব উ্‌যাপনের। এ দুটি দিন পরিবারকে দিতেই হবে। কী করবেন বা কীভাবে কাটাবেন, তা নিয়ে ভাবার দরকার নেই। দেশের সব জায়গাতেই আছে আয়োজন। পত্রিকা, টিভি তো এখন থেকেই জানিয়ে দিচ্ছে কোথায় কখন কী হবে। নগর-মহানগর-জনপদের পুরোটাজুড়েই থাকে মেলার আবহ। তাই নিজের পরিবারের সঙ্গে ১৪২৪-এর শেষ দিন আর ১৪২৫-এর প্রথম দিন একসঙ্গে দারুণভাবেই কাটানো যাবে।

নিজের পরিবারের সঙ্গে যোগ হতে পারে বন্ধুর পরিবার, আত্মীয়ের পরিবারও। দল ভারী হলে উৎসবের রং আরও বাড়বে বই কমবে না। কড়া রোদ, কড়া নিরাপত্তা, তারপরও বাঙালির উৎসবের রং মলিন হয় না, ছোট্ট শিশু থেকে বয়স্ক মানুষের আনন্দের ঢল থামে না। মনোবিজ্ঞান কিংবা সমাজবিজ্ঞান পরিবারের সঙ্গে যে গুণগত সময় (কোয়ালিটি টাইম) কাটাতে বলে থাকে, তার জন্য পয়লা বৈশাখের উৎসবমুখর পরিবেশের বিকল্প আর কী আছে!