Thank you for trying Sticky AMP!!

একটা কাজ করে আসার পর ওটা নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করি

মেহতাব খানম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.

সমস্যা

আমি স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে পড়ি। আমার সমস্যা হচ্ছে, আমি একটা কাজ করে আসার পর ওটা নিয়ে সারাক্ষণ চিন্তা করি, যে কারণে আমার মন খুব খারাপ থাকে। আমি মনোযোগ দিয়ে আর কোনো কাজ করতে পারি না। কিছুদিন আগে আমি একটা পরীক্ষা দিয়েছি। পরীক্ষা দিয়ে আসার পর মনে হচ্ছে, আমি আরও অনেক কিছু লিখতে পারতাম। কেন লিখলাম না? আর আমার স্মরণশক্তি খুব কম। শুধু এ-ই নয়, আমার কাজ নিয়েও আমি আত্মবিশ্বাসী হতে পারি না। ছোটবেলা থেকে এসব নিয়ে খুব মানসিক কষ্টে ভুগেছি। আমার এখন কী করা উচিত?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

পরামর্শ

মনে হচ্ছে শৈশবে তোমাকে তোমার ভালো গুণাবলির জন্য প্রশংসা না করে বরং যে কাজগুলোতে ভুল করতে সেসব নিয়ে বেশি বলা হয়েছে। শিশুদের ইতিবাচক দিকগুলোর প্রতি নির্দেশ করে যদি উৎসাহিত করা হয়, তাহলে তাদের আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়।

আমরা সাধারণত সন্তানদের নেতিবাচক আচরণগুলো বারবার উল্লেখ করে সমালোচনা করি। এর ফলে তাদের আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানবোধ খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বড় হয়ে ওরা তখন হতাশা, সিদ্ধান্তহীনতা, বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তায় ভোগে। বড়দের সমালোচনা ও সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে তাকে কী ধরনের ভীতিমূলক পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, সে মন্তব্যগুলো তাকে ভাবিয়ে তোলে। বয়ঃসন্ধি ও পূর্ণ বয়সে তার নিজের ভেতরেও একটি সমালোচনামুখর অভিভাবক সত্তা তৈরি হয়, যা তাকে প্রতিনিয়ত নিপীড়ন করতে থাকে। যখনই সে কোনো ভুল করে, তখন একটি অসহায় সত্তা ও অন্য একটি নিপীড়ক সত্তার মধ্যে পরস্পরবিরোধী কথাবার্তা চলতে থাকে।

তোমার ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটি বর্তমানে ঘটছে। পরীক্ষা দেওয়ার পর তোমার ভেতরের একটি সত্তা নির্দয়ভাবে তোমাকে শাসন করছে এবং যে সত্তাটি ভুল করেছে, সে খুব অসহায় বোধ করছে এবং নিজেকে কোনোভাবেই সান্ত্বনা দিতে পারছে না। খুব ভালো হয়, তুমি যদি নিজের মধ্যে একটি সন্দেহপ্রবণ মানুষ তৈরি করে তাকে দিয়ে নিপীড়ক সত্তাটিকে শাসন করা থেকে বিরত করতে পারো। নিজেকে ভুল করার অনুমতি দিয়ে ভবিষ্যতে ভেতরের মানুষটিকে শুধরে নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও। অসহায় বোধ করা সত্তাটিকে বলো যে তাকে তুমি ভালোবাসো এবং তার কষ্টটা তুমি বুঝতে পারছ।

কিছু ভুল হয়ে গেছে বলে তোমার গ্রহণযোগ্যতা কমে যায়নি। এরপরও তুমি নিজেকে ভালোবাসবে এবং নিজের প্রতি কখনো শ্রদ্ধা হারাবে না। সন্দেহপ্রবণ হয়ে নিজেকে যে কথাগুলো বলবে, সেগুলো নোটবুকে লিখে অনুশীলন করবে। এ ছাড়া মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশনের মাধ্যমে মনটিকে চমৎকারভাবে বর্তমানে ধরে রাখা সম্ভব হয়। সচেতনভাবে কোনো একটি বা একাধিক ইন্দ্রিয়কে সজাগ রেখে এ অনুশীলনটি করা হয়। সাধারণত মানসিক চাপমূলক পরিস্থিতিতে অবচেতন মনের প্রভাবে অতীতের তিক্ত, ভীতিকর অভিজ্ঞতাগুলো মনে হতে থাকে। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি আবার ঘটতে পারে, এই ভেবে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। এই পরিস্থিতি আমাদের ভেতরে থাকা প্রাণশক্তিকে ক্রমাগত ক্ষয় করতে থাকে। নিয়মিতভাবে এই মেডিটেশন করলে আমরা দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসতে পারি। তুমি ইন্টারনেট থেকে এর ভিডিও বা অডিও বের করে প্রতিদিন চর্চা করবে, কেমন?