Thank you for trying Sticky AMP!!

এক তরুণী বলল, আমি তোমাকে বিয়ে করব


Interview of Zafarullah Sharafat with Rosh+Alo by prothom-alo

কদিন আগে টিম রস+আলো গিয়েছিল রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে, দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয়, খ্যাতিমান, স্বনামধন্য, আমাদের সবার প্রিয়, সবার প্রিয় কণ্ঠ চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাতের সঙ্গে দেখা করতে। না, তিনি মোটেও অসুস্থ হয়ে পড়েননি! আমরা ওই হাসপাতালের ক্যানটিনে আয়োজন করেছিলাম বিশেষ এক টক শো। টিম রস+আলোর পক্ষে সেখানে ছিলেন আদনান মুকিত, পাভেল মহিতুল আলম, মহিউদ্দিন কাউসার, রাকিব কিশোর, মাহফুজ রহমান ও সিমু নাসের।

চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত

চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত: সুপ্রিয় দর্শক, এখনকার টক শো পর্বে চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত আপনাদের প্রত্যেককে জানাই স্বাগত। বহু আকাঙ্ক্ষিত, বহু প্রতীক্ষিত, বহু দিনের লালিত স্বপ্ন রস+আলোর ট্রিপল হানড্রেড পূর্ণ হবে, সেটি বাস্তবে রূপান্তরিত হবে, সেই প্রত্যাশা জানিয়ে আমাদের টক শো আমরা শুরু করছি।
রস+আলো: অনেক ধন্যবাদ, শারাফাত ভাই! টক শো কিংবা খেলার সময় আপনি খেলোয়াড়দের অনেক বিশেষণে বিশেষায়িত করেন। নিজেকে আজ কীভাবে বিশেষায়িত করবেন?
চৌ. জা. শা.: নিজের কথা তো নিজে বলা যায় না। হয়ত বলব, সুপ্রিয় দর্শক, এখন খেলার বিরতি। আর এই বিরতির সময় এখনকার টক শো পর্বে আপনাদের স্বাগত। এখন কথা বলব আমাদের দেশের অত্যন্ত জনপ্রিয়, খ্যাতিমান, স্বনামধন্য, আপনাদের সবার প্রিয়, সবার প্রিয় কণ্ঠ চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাতের সঙ্গে।
র. আ.: আপনার চুল নিয়ে বিশেষ আগ্রহ আছে মানুষের মধ্যে। আপনার চুলগুলো কি আসল?
চৌ. জা. শা.: দর্শকেরা আমাকে নিয়মিত টিভিতে দেখেন। দর্শকেরা নিজেরা বিচার-বিশ্লেষণ করে, অনুধাবন করে যেটা মনে করবেন, সেটাই সঠিক।
র. আ.: চার-ছক্কা হইহই, বল উড়াইয়া গেল কই?
চৌ. জা. শা.: বল উড়াইয়া সীমানার বাইরে যায়নি, মাঠের ভেতরেই ছিল। এটা বললাম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পারফরম্যান্সের প্রেক্ষাপটে।
র. আ.: আপনি সব সময় এই ঢঙেই কথা বলেন?
চৌ. জা. শা.: আমার কণ্ঠ, বলার ঢং সব একই। আমি কণ্ঠ বিকৃত করি না। বাচ্চা বয়স থেকে এভাবেই কথা বলছি। স্ত্রী, সন্তান, মা কিংবা সহকর্মী—সবার সঙ্গেই এভাবে কথা বলি।
র. আ.: আপনার কিছু প্রচলিত ধারাভাষ্যের মধ্যে একটি হলো ‘মেঘমুক্ত মাঠ, কর্দমাক্ত আকাশ’...
চৌ. জা. শা.: এ কথাটা আসলে আমি বলিনি। এটা বলেছিলেন প্রয়াত ধারাভাষ্যকার জনাব খোদাবক্স মৃধা ভাই। তখনো আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়নি। নিজের কানেই শুনলাম, তিনি এ কথাটি বললেন। তবে মানুষ এসব আমার কথা মনে করলেও ‘আই ডোন্ট মাইন্ড’। আমি এসব পজেটিভলি নিই। আমার রক্তের গ্রুপও ‘ও’ পজিটিভ।
র. আ.: ‘চমৎকার শট, ছয় হওয়ার সম্ভাবনা...কিন্তু না, আউট’—এটা?
চৌ. জা. শা.: এটাও আমি বলিনি। অন্য কেউ বলে থাকতে পারে। আবেগের বশবর্তী হলে পরে এমনটা হয়।
র. আ.: ‘একটি রান চুরি করে নিলেন’—এ ব্যাপারে কী বলবেন?
চৌ. জা. শা.: এটাও অন্য কেউ বলেন, আমি বলি না। আমি বলি, ক্ষিপ্রতার সঙ্গে জায়গা বদল করলেন। যুক্তি দিয়ে বিচার করলে অনেক ভুলই ধরা যাবে।
র. আ.: কিন্তু আপনি তো এবার এশিয়া কাপে বলেছিলেন, ‘অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের হাতে ব্যাট মানে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের হাতে দেশ। যতক্ষণ তাঁর হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। মাফ করবেন, পথ হারাবে না শ্রীলঙ্কা।’
চৌ. জা. শা.: হ্যাঁ, এটা বলেছিলাম। কারণ, তার আগের দিনই বলেছিলাম, সাকিবের হাতে ব্যাট মানে সাকিবের হাতে দেশ, পথ হারাবে না বাংলাদেশ। ভুল করে ওটা মুখে চলে এসেছিল।
র. আ.: এই কথাগুলো কি আগে থেকেই ভেবে রাখেন?
চৌ. জা. শা.: না না, একদমই নয়! তাৎক্ষণিকভাবে মাথায় আসে কথাগুলো। ষষ্ঠ আইসিসি ট্রফিতে যখন বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলো তখনো কিন্তু আমি এমন অনেক বাক্য বলেছি। যেমন আমি বলেছিলাম, ‘শাবাশ বাংলাদেশ!’ এ ছাড়া কবিতা থেকে নেওয়া ‘পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়’, ‘ওই নূতনের কেতন উড়ে’ কিংবা ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’ বাক্যগুলো তো এখন মুখে মুখে ফেরে।
র. আ.: আপনি বলেন, ‘মাটি কামড়ে বল চলে গেল সীমানার বাইরে’। বলের কি দাঁত আছে?
চৌ. জা. শা.: দর্শক বা শ্রোতা কিন্তু বিভিন্ন ধরনের। কেউ চান ভারী ভারী বাক্যের প্রয়োগ, কেউ বা মজার মজার কথায় হ্যাপি। তাই অনেকেই এ ধরনের ধারাভাষ্য শুনতে পছন্দ করেন। আর সে জন্যই বলা। নিপাতনে সিদ্ধ আরকি।

.

র. আ.: কিন্তু বলের দাঁত কোনটি?
চৌ. জা. শা.: বলের যে সিম থাকে, সুতা দিয়ে তৈরি, সেটাই বলের দাঁত।
র. আ.: আপনি বলেন, বলের মেধা ও গুণাগুণ আছে। বল কী করে মেধাবী হলো? বল কি খুব পড়ুয়া?
চৌ. জা. শা.: প্রতারণাই বলের মেধা। ব্যাটসম্যানকে ফাঁকি দেওয়ার প্রতিভা!
র. আ.: কিন্তু মেধা থাকার পরও বল কেন মার খায়?
চৌ. জা. শা.: ব্যাটসম্যানের ব্যাট আরও মেধাবী হলে মার খায়। এ ছাড়া বল হয়তো মুখস্থবিদ্যায় নির্ভরশীল!
র. আ.: শুধু কি ক্রিকেট বলেরই মেধা আছে? অন্য কোনো বলের মেধা নেই?
চৌ. জা. শা.: থাকবে না কেন! অবশ্যই আছে। বিশেষ করে ফুটবলের কথা তো বলতেই হবে। তবে ফুটবল প্রচুর লাথিও খায়। লাথি খাওয়ার পরও ভাগ্যবান।
র. আ.: আপনি কোন কোন খেলায় ধারাভাষ্য দিয়েছেন?
চৌ. জা. শা.: কোন খেলা বাকি আছে বলুন! বাস্কেটবল, হকি, ভলিবল, ফুটবল, ক্রিকেট, বক্সিং, অ্যাথলেটিকস, ব্যাডমিন্টন, লন টেনিস, খো খো, টেবিল টেনিস...
র. আ.: আপনার প্রিয় খেলা কোনটি?
চৌ. জা. শা.: অবশ্যই ক্রিকেট! সেই ছোটবেলা থেকে, যখন ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়নি, তখন থেকেই রোদে পুড়ে সারা দিন ক্রিকেট খেলা দেখতাম। এছাড়া ক্রিকেটে ধারাভাষ্য দেওয়ার সময় অনেক কথা বলার সুযোগ থাকে। ফুটবলে তো ৯০ মিনিটে একেকজন ১৫ মিনিট কথা বললেই শেষ।
র. আ.: তাহলে কথা বলতে আপনার ভালো লাগে?
চৌ. জা. শা.: অবশ্যই কথা বলতে ভালো লাগে। রাত তিনটার সময় ঘুম থেকে উঠে যদি বললেন, অ্যাশেজ সিরিজ শুরু হয়েছে। সামনে ক্যামেরা সেট করা হয়েছে, ওঠো, কথা বলো। আমি সঙ্গে সঙ্গেই কথা বলা শুরু করতে পারব। কোনো রকম অ্যা অ্যা অ্যা গ্যা গ্যা গ্যাও করব না!
র. আ.: টিভি না রেডিও—কোনটিতে ধারাভাষ্য দিতে ভালো লাগে?
চৌ. জা. শা.: রেডিওতে। কারণ, রেডিওতে অনেক কথা বলার সুযোগ থাকে। এ ছাড়া রেডিওতে খেলাটা দেখা যায় না। তাই দৃশ্যগুলো শ্রোতাদের চোখের সামনে ভাসিয়ে তুলতে হয়।
র. আ.: এবার অন্য প্রসঙ্গ। পাত্র হিসেবে আপনার কদর ছিল কেমন?
চৌ. জা. শা.: বিয়ের আগে টর্নেডোর মতো হয়ে গিয়েছিল। কেউ যখন পাত্রীপক্ষকে বলত, পাত্রের নাম চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত, তখন পাত্রীপক্ষ আঁতকে উঠত! জানতে চাইত, এটা তাঁর কয় নম্বর বিয়ে? জন্মের পর থেকেই তো তাঁকে টিভিতে দেখি। তবে সরাসরি দেখে তাঁরা অনুধাবন করতেন যে আমি মোটেও বুড়ো ছিলাম না।
র. আ.: ধরুন, আপনি ধারাভাষ্য দিতে যাবেন, আপনার স্ত্রী ভাত রাঁধেননি। তখন কীভাবে ঝগড়া করবেন?
চৌ. জা. শা.: আমি বলব, তোমার কোনো দায়িত্ববোধ নেই। আমি একটু পর মাঠে যাব, খেলার ধারাভাষ্য দেব। এ ধরনের সচেতনতা তোমার থাকা উচিত। মানুষকে এগুলো ভাবতে হবে। এসব দায়িত্ববোধ যদি না থাকে, তাহলে কীভাবে হবে!
র. আ.: ভক্তদের পাল্লায়...
চৌ. জা. শা.: ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ জিতে গেল পাকিস্তানের বিপক্ষে। খেলা শেষে দেখি টি-শার্ট, জিনস পরা এক তরুণী কমেন্ট্রি বক্সের আশপাশ দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছিল, কিছু বলতে চাইছে। কিছুক্ষণ পর ওই তরুণী সামনে এসে বলল, ‘আই লাভ ইউ। আমি তোমাকে বিয়ে করব।’ বিশ্বাস করুন, অমন অভিজ্ঞতা আমার জীবনে প্রথম ছিল! পুরো টুর্নামেন্টেই ওই সাহসী তরুণী আমাকে নিজে গাড়ি ড্রাইভ করে ছায়ার মতো অনুসরণ করল! যেখানেই যাই, সেখানেই গিয়ে হাজির!
র. আ.: এটা তো বিদেশের গল্প, দেশে?
চৌ. জা. শা.: অজস্র অভিজ্ঞতা! একদিন আমার অফিসের সামনে এক তরুণী নিজে ড্রাইভ করে এসেছে। বয়স ১৮-১৯ হবে। তাঁর উদ্দেশ্য ধরতে পেরে ধন্যবাদ দিয়ে বিদায় দিলাম। কিছুদিন পর একটি হোটেলে আমার ব্যাংকের অনুষ্ঠান চলছিল। হঠাৎ সেখানেও হাজির সে! তারপর তাকে জুস-টুস খাইয়ে মাথা ঠান্ডা করিয়ে বোঝালাম যে আমি বিবাহিত, আমার টুইন বেবি আছে। তুমি যে আশা-প্রত্যাশা, লালিত স্বপ্ন নিয়ে ঘুরে বেড়াও এটা কখনো বাস্তবায়িত হবে না।
র. আ.: এরপর কী হলো?
চৌ. জা. শা.: কথা হয় না তবে এখনো প্রায় প্রতিদিন এসএমএস করে। লেখে, ‘মানুষ মানুষকে এভাবে ভুলে যায়?’ ‘একবার কথা বললে কী হয়?’
র. আ.: আপনার স্ত্রী কখনো আপনার মুঠোফোন চেক করেন না?
চৌ. জা. শা.: ও কখনো চেক করে না। এসব বিষয় নিয়ে ওর মাথাব্যথাও নেই।
র. আ.: আপনিই যে চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত, এর প্রমাণ কী?
চৌ. জা. শা.: আমার ভয়েসটাই একটা ব্র্যান্ড। ‘কৌন বানেগা ক্রোড়পতি’ অনুষ্ঠানের এক পর্বে অমিতাভ বচ্চন টেনিস তারকা সানিয়া মির্জাকে আমার কণ্ঠ নকল করে শোনালেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘কণ্ঠটি এ উপমহাদেশেরই কোনো এক ধারাভাষ্যকারের। তাঁর নাম কী?’ সানিয়া অনেকক্ষণ চিন্তা করে উত্তর দিলেন, ‘চৌধুরী জাফরউল্লাহ শারাফাত’। একবার সৌদি আরবে গিয়ে ট্যাক্সিতে উঠেছি। হঠাৎ ড্রাইভার তাঁর বড় একটা আইফোন বের করে আমার চোখের সামনে ধরলেন। সেখানে আমার নাম, ছবি, ভিডিও দেখিয়ে বললেন, ‘তুমি এই লোকটাকে চেনো?’ এগুলোই আমার সার্টিফিকেট।
র. আ.: রস+আলোর ট্রিপল সেঞ্চুরির এই মাহেন্দ্রক্ষণে আপনি কীভাবে ধারাভাষ্য দেবেন?
চৌ. জা. শা.: এই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, বহু আকাঙ্ক্ষিত, বহু প্রতীক্ষিত, বহু দিনের লালিত স্বপ্ন রস+আলো ট্রিপল হানড্রেড করার গৌরব অর্জন করবে। সেটি অল্পক্ষণের মধ্যেই বাস্তবায়ন হলেও হতে পারে। এবং শেষ পর্যন্ত রস+আলো ট্রিপল হানড্রেড করার গৌরব অর্জন করল। অভিনন্দন রস+আলোকে। সাধুবাদ জানাই রস+আলোকে। এবং আমি এটিও প্রত্যাশা করি ব্রায়ান লারা, যাকে বলা হয় রেকর্ডের বরপুত্র। কিংবদন্তি বিশ্বের সাবেক মস্ত বড় ব্যাটসম্যান, তিনি যেমন টেস্টে চার শ রান করলেন এবং সেটিও অপরাজিত থেকে। রস+আলো ফোর হানড্রেড করার গৌরব অর্জন করবে। এবং যত দিন পৃথিবী থাকবে তত দিন জন্মদিন হবে রস+আলোর। তত দিন রস+আলো বেঁচে থাকবে।