এভাবে কেন মরতে হবে?
নগরের ফয়’স লেক এলাকায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হাটহাজারীর বাসিন্দা নির্মল জলদাস। ১০ নভেম্বর রোববার হরতালের দিন ২০ কিলোমিটার দূরে কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলেন বাড়ি থেকে। পাঁচজনের সংসার চলে তাঁর সামান্য বেতনের টাকায়। তার ওপর হাসপাতালের জরুরি কর্তব্য পালনের তাগিদ। তাই কর্মস্থলে না গিয়ে উপায় কী? কিন্তু কে জানত হরতালের বলি হবেন নির্মল? এটাই হবে তাঁর শেষযাত্রা!
বাড়ি থেকে বের হয়ে সিএনজি অটোরিকশায় উঠেছিলেন নির্মল। হরতালকারীদের ইটের আঘাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় তাঁকে বহন করা গাড়িটি। গুরুতর আহত নির্মলকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাটহাজারীর মদুনাঘাট এলাকার কাটাখালী জলদাসপাড়ার নির্মল জলদাসের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে। নির্মলের দুই মেয়ে ও এক ছেলে জানে না বাবার কী অপরাধ। শোকের পাশাপাশি অনিশ্চয়তার কালো মেঘ জমেছে পরিবারের সদস্যদের মুখে। ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন নির্মলের মা আলো বালা জলদাস ও স্ত্রী বিমলা জলদাস। বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন তাঁরা।
শোকের মাতম চলছে নগরের দামপাড়া এলাকার জাকির হোসেনের বাড়িতেও। নগরের কালুরঘাটের সিঅ্যান্ডএ গ্রুপ বায়িং হাউস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাকির হোসেন গত ৪ নভেম্বর হরতালের দিন কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য টেম্পোতে উঠেছিলেন। হারতাল-সমর্থকদের ধাওয়া খেয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় টেম্পোটি। গুরুতর আহত জাকিরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
জাকিরের সহকর্মী মাহতাব হোসেনও সেদিন একই টেম্পোর যাত্রী ছিলেন। তিনি জানান, ‘হরতাল-সমর্থকদের ধাওয়া খাওয়ার পর দ্রুতগতিতে চলতে থাকা আমাদের টেম্পোটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। এতে চালকের বাম পাশে বসা জাকির টেম্পোর চাপে পিষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন ও মারা যান।’
জাকিরও নির্মলের মতো পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। স্বামীর মৃত্যুটা অবাস্তব কোনো দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে শাহিদা আক্তারের কাছে। তাঁর পাঁচ মাস বয়সী শিশুকন্য জান্নাতুল মম চিরতরে বঞ্চিত হলো বাবার স্নেহ থেকে।
মামা নির্মল জলদাসের নিহত হওয়ার ঘটনায় হাটহাজারী থানায় বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন ছোটন জলদাস। কিন্তু পুলিশ ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে আটক কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম লিয়াকত আলী বলেন, জড়িত পিকেটারদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
গ্রেপ্তার হয়নি জাকির হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরাও। উল্টো চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রউফ বলছেন এটি নিছক দুর্ঘটনা। নির্মলের তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে চন্দনা দাস (১৩) নবম শ্রেণীতে, মেজ মেয়ে অঞ্জনা দাস (১১) সপ্তম শ্রেণীতে আর ছোট ছেলে মুন্না দাস (৭) পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। শোক ছাপিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভাবনা এখন তাদের ভবিষ্যৎ ঘিরে।
নির্মলের স্ত্রীর বড়ভাই মিন্টু কুমার দাস বলেন, ‘আমার বোন তাঁর সন্তানদের নিয়ে এখন কী করে সংসার চালাবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে। এই অবস্থায় তাঁর পরিবারের দায়িত্ব নিতে আমরা প্রধানন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
আরও পড়ুন
-
এখনো ভিসা হয়নি ৪০ হাজারের বেশি হজযাত্রীর
-
চোখের সামনে সেদিনই প্রথম পিস্তল দেখেছি: ভুক্তভোগী ছাত্রদল নেতা
-
দেশের অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের প্রভাব আসতে পারে: প্রধানমন্ত্রী
-
বাংলাদেশের জন্য নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ১,৪৭৬ কোটি ডলারে নামিয়ে আনল আইএমএফ
-
‘মা লো মা’ নিয়ে বিতর্ক: নেত্রকোনা নাকি ঢাকা, যা বলছেন সংশ্লিষ্টরা