Thank you for trying Sticky AMP!!

এ কেমন আচরণ!

‘আমার ভাই পুলিশ’ উত্ত্যক্তকারীদের এড়াতে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের এ প্রচারণার ধারণা দিয়েছিল ভারতের মধ্যপ্রদেশের হোসাঙ্গাবাদ জেলার পুলিশ। গত বছরের ওই প্রচারণায় এক সপ্তাহে প্রায় ৯০০ ছাত্রী ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইল ছবিতে ইউনিফর্ম পরা পুলিশের সঙ্গে তোলা ছবি দিয়েছেন। সেখানে বাংলাদেশে এখন উত্ত্যক্তের অভিযোগ উঠছে পুলিশের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধেই।

৯ জানুয়ারি স্কুলগামী বোনকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার খারাবাদ বাইনতলা ক্যাম্পে নিয়ে তারেক মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ীকে মারধর করেন পুলিশ সদস্যরা। ওই ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য স্কুলগামী ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতেন। এর মধ্যে তারেকের বোনও ছিল। পরে ৯ জানুয়ারি পুলিশের কটু কথায় ছাত্রীরা কেঁদে ফেলে। তারা তারেককে তাঁর কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে অভিযোগ দেয়। তারেক পুলিশ ক্যাম্পের সামনে এসে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে দোকানে চলে যাওয়ার পর পুলিশ সদস্যরা তাঁকে দোকান থেকে ক্যাম্পে ধরে এনে মারধর করেন। এ ঘটনার পরে এলাকাবাসীর চাপের মুখে ১২ জন পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ওই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান খুলনা জেলা পুলিশের বি সার্কেলের সহকারী সুপার সজীব খান জানান, ঘটনার তদন্ত করে তাঁরা সত্যতা পেয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তাঁরা সুপারিশ করে পাঠিয়েছেন।

একই দিনে ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে ট্রেনযাত্রী মা ও মেয়েকে উত্ত্যক্ত করেন এবং তাঁদের ছবি তোলেন রেল পুলিশের দুই সদস্য। পরে তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই রেল পুলিশকে প্রত্যাহার করা হয়। ঈশ্বরদী রেল পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল হালিম খান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তাঁদের মুঠোফোন পরীক্ষা করে ওই নারীদের কিছু ছবি পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে ছবিগুলো মুছে ফেলা হয়। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়ে ওই দিনই তাঁদের বিষয়ে প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

তার আগে গত বছরের ডিসেম্বরে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যাওয়া এক দম্পতির কাছে কাবিননামা দেখতে চেয়ে তাঁদের দীর্ঘ সময় আটকে রেখে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে ট্যুরিস্ট পুলিশের এক এএসআইয়ের বিরুদ্ধে। পরে ওই এএসআইকে প্রত্যাহার করা হয়।

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমি বলেন, ওই ঘটনার পর অভিযুক্ত এএসআইকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার ও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এখন তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

২০১৫ সালে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের অর্থায়নে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, যৌন নির্যাতনের শিকার ৮৪ শতাংশ নারীই থানায় যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। এর কারণ হিসেবে তাঁরা পুলিশের দ্বারা হেনস্তা হওয়ার কথা বলেছেন। ৯৫ শতাংশ নারীই মনে করেন, পুলিশি সহায়তার জন্য গেলে হেনস্তার শিকার হতে হয়।

পথে ঘাটে চলতি পথে নারীরা বখাটেদের শিকার হচ্ছেন। এ  খবর সংবাদপত্রে প্রায়ই প্রকাশিত হয়। কিন্তু আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যই যখন নারীদের উত্যক্ত করে তখন সেই অপরাধ সমাজে হতাশার জন্ম দেয়। যাদের কাছে বিচার চাইব তারাই দেখি কাঠগড়ায়!

বিশেষজ্ঞের মতামত

নির্বাহী পরিচালক, জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি

এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটতে দেখেছি। পুলিশদের প্রশিক্ষণের সময় তাঁদের লিঙ্গসমতা, নারীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, সম্মান দেখানো শেখাতে হবে। নারীদের যেন মানুষ হিসেবে দেখে। থানাগুলোতে শুধু নারীবান্ধব কর্নার থাকলেই হবে না, সেখানে লিঙ্গসমতা মানা হচ্ছে কি না, নারীকে সম্মান দেখানো হচ্ছে কি না সেটি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। রাস্তাঘাটে সাদা পুলিশ দিয়ে এই বিভিন্ন স্তরের পুলিশকে মনিটরিং করা দরকার। অনেক সময় দেখা যায়, পুলিশ যখন নারীকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁদের সাময়িকভাবে দূরে সরানো হয় বা লোকদেখানো বরখাস্ত করা হয়। ঘটনা ফিকে হয়ে আসতেই তাঁদের আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়। যথাযথ শাস্তি না হওয়ায় আরও অনেকে উদ্বুদ্ধ হয়। রক্ষক যখন ভক্ষক হয়, সেই অন্যায়ের বিচার জোরালোভাবে করতে হবে।