Thank you for trying Sticky AMP!!

ঐতিহ্যের খোঁজে

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো ঘুরে দেখেন এলিজা বিনতে এলাহী।

এলিজা বিনতে এলাহীর সঙ্গে বেশ বিস্ময়করভাবে আমার পরিচয় হয়। আমার ঢাকার প্রথম আকাশচারী ভানতাসেল বইটির প্রকাশক আমাকে ফোন করে জানালেন যে এক নারী তার দপ্তরে আমার বিষয়ে ও আমার বইটি সম্পর্কে খোঁজ নিতে এসেছেন। তিনি আমার সঙ্গে দেখা করতে চান। এলিজার পরিচয় দিলেন যে তিনি বিশ্ব ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য বা ইমারতগুলো ঘুরে দেখছেন। তিনি নিজেকে হেরিটেজ ট্রাভেলার বা পরিব্রাজক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। যোগাযোগ করে এলিজা একদিন আমার কার্যালয়ে এলেন আমার সঙ্গে দেখা করতে। আলাপচারিতায় জানা গেল যে তিনি ঐতিহ্যবাহী প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করছেন এবং সেসব স্থানের ভ্রমণ চলচ্চিত্র বা ট্রাভেল ভিডিও নির্মাণ করে সেসব স্থান সম্পর্কে সবাইকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পরিচিত ও প্রত্নতাত্ত্বিক পর্যটনকে জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করছেন।

আমার ট্রেকিং ও ক্যাম্পিং সম্পর্কে ধারণা আছে, কারণ, এ বিষয়ে আমার আগ্রহ আছে। বন্ধুবান্ধব ও এ ধরনের নানা সংগঠনের সঙ্গে অতীতে কিছুটা যোগাযোগও ছিল। কিন্তু নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ঘুরে দেখে সেসব স্থানের ওপর স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভ্রমণ ভিডিও তৈরি করে প্রত্নতাত্ত্বিক ভ্রমণকে জনপ্রিয় করার বিষয়টি এলিজার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। বেশ চমকপ্রদ মনে হলো বিষয়টি। আলাপচারিতায় জানা গেল, এলিজা ইতিমধ্যে প্রায় ৪৯টি দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ঘুরে দেখেছেন। শুধু তা–ই নয়, তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা বা সাইট ঘুরে দেখা ছাড়াও বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিত্বের ওপর কাজ করছেন। আমাকে খুঁজে বের করেছেন কারণ তিনি আমার ঢাকার প্রথম আকাশচারী জিনেট ভানতাসেলের ওপর প্রকাশিত বইটিতে উল্লিখিত জিনেটকে নিয়ে একটি ট্রাভেল ভিডিও নির্মাণ করবেন।

আমি সেদিন সত্যিই খুবই অবাক হয়েছিলাম যে তিনি কীভাবে আমাকে ও আমার প্রকাশককে খুঁজে বের করেছেন। কারণ এই বইটি অনেক বছর আগেই আউট অব প্রিন্ট বা নিঃশেষ হয়ে গেছে। আমাদের যেভাবে তিনি খুঁজে বের করেছেন, তা তাঁর বয়ান থেকে জেনে বুঝতে পেরেছিলাম যে এলিজা আর পাঁচজন নারীর তুলনায় এক অনন্য স্থানে নিজেকে পৌঁছে দিয়েছেন। তাঁর গবেষণা ও কাজের ধরন, একাগ্রতা ও পরিশ্রম তাঁকে দিয়েছে এক অভিনব অনন্যতা। আমার এই ধারণার সত্যতা যাচাই করার সুযোগ পাই জিনেটের ওপর নির্মিত তাঁর ট্রাভেল ভিডিও দেখে। সে বিষয়ে পরে আসছি।

এলিজা একজন মা, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক এবং সব সামলে তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান  পরিদর্শন ও ভিডিও তৈরি করছেন। এলিজা প্রায় ২০ বছর ধরে ভ্রমণ করে যাচ্ছেন। বিশ্বভ্রমণের শুরু নেপাল দিয়ে। প্রত্নতত্ত্বে তাঁর অনুরাগ ছোটবেলা থেকে। পড়েছেন ইংরেজি সাহিত্য। বিশেষ ব্যক্তিত্ব যেমন জিনেট ভানতাসেল, বাঙালির জাপানি স্ত্রী হরিপ্রভা তাকেদা, কাঙাল হরিনাথ, জমিদার প্যারি সুন্দরীসহ ১০ জন বিশেষ ব্যক্তিত্ব নিয়ে ভ্রমণ ভিডিও নির্মাণ করছেন। বাংলাদেশে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে একজন নারীকে কাজ করতে হয়। সে বিবেচনায় এলিজার কাজের ধরন, পরিশ্রম, পর্যাপ্ত গবেষণা, দূরদূরান্তের সেসব অঞ্চলের ভিডিও করা—এসব কর্মকাণ্ড একজন নারীর পক্ষে কতটা চ্যালেঞ্জিং, তা সহজেই বোধগম্য। বিষয়টি বিবেচনায় নিলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে যায়।

স্বভাবতই একটি প্রশ্ন জাগতে পারে, তা হলো এলিজার কাজের মান কেমন? কিছুদিন আগে আমার একটি অনুষ্ঠানে জিনেটের ওপর এলিজা বিনতে এলাহীর নির্মিত ভ্রমণ ভিডিওটি প্রথম প্রদর্শিত হয়েছিল। আমি মনে করি, তাঁর তৈরি ভিডিও চলচ্চিত্রটি ছিল অত্যন্ত ভালো ও উল্লেখযোগ্য মানের। উপস্থিত সব দর্শকই একবাক্যে ভিডিওটির উচ্চ প্রশংসা করেছিলেন এবং আমার মতে, সেটি ছিল ঢাকার ওপরে এবং ঢাকায় একজন ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নারীর ওপরে নির্মিত সফল ও শিল্পোত্তীর্ণ চলচ্চিত্র।

এলিজার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি বললেন, বিশ্ব ঐতিহ্যের পরিদর্শন স্থানের তালিকায় বাংলাদেশের নাম প্রতিষ্ঠা করা, প্রকাশনা কার্যক্রম অর্থাৎ ভ্রমণসংক্রান্ত নিয়মিত পত্রিকা প্রকাশ এবং আটটি বিভাগীয় শহরে হেরিটেজ মেলার আয়োজন করা। এমন স্বপ্ন বা ইচ্ছা একজন সত্যিকারের দেশপ্রেমিকের পক্ষেই তো সম্ভব। এই লেখার শেষ প্রান্তে তাঁর জন্য এই শুভেচ্ছা রইল যে এলিজার সব আশা ও স্বপ্ন যেন পূর্ণতা পায়।

লেখক: স্থপতি ও গবেষক