Thank you for trying Sticky AMP!!

ওরা ঘাসিয়ারা

মেশিন দিয়ে ঘাস কাটছেন মনির পাটওয়ারী

ওদের গরুকে ঘাস খাওয়াতে হয় না৷ আরব আমিরাতে যেখানে কাজ করেন, সেখানেও গরু নেই। তবু ওরা ঘাসিয়ারা। রাস্তার পাশের কিংবা মধ্যকার আইল্যান্ড থেকে ঘাস সংগ্রহ করছেন তাঁরা। এ কাজ কাঁচি দিয়ে নয়, যন্ত্রের সাহায্যে করছেন। এঁদের একজনের নাম মনির পাটওয়ারী।
‘ঘাসিয়ারা’ মনির চাঁদপুর বাবুর হাটের দাশটি গ্রামের সন্তান। মনিরের আছে এক দুঃখের কাহিনি। সৌদি আরবে মদিনার একটি হোটেলে হাউস কিপিংয়ের কাজ করছিলেন। ছায়ায় সুশীতল পরিবেশে ভালোই কাটছিল তার। কিন্তু চাকরিটা হঠাৎই চলে যায়। রওজা শরিফের কাছেই ছিল হোটেলটির অবস্থান। ওখানে হাজিরা এবং যাঁরা ওমরাহ করতে আসেন, তাঁরা থাকেন৷ তাঁরা যাওয়ার সময় কিছু না কিছু পুরস্কার দিতেন মনিরসহ অন্য কর্মীদের। বেতন ৮০০ রিয়াল (১ রিয়াল=২০ টাকা) হলেও কোনো কোনো মাসে এর পরিমাণ দাঁড়াত দুই হাজারের কাছাকাছি।
ছুটিতে দেশে গিয়েছিলেন মনির। তিনি টিকিট ‘নিশ্চিত’ (কনফার্ম) করতে আসেন সোনারগাঁও হোটেলের সৌদিয়া বিমানের অফিসে। তাঁরা ১৫ দিন পিছিয়ে দেন তাঁর ফ্লাইট। এটাই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। চাকরি স্থলে ফেরত আসার পর কোম্পানির ম্যানেজার জানান, পাসপোর্ট জমা না দিতে। তাঁর মানে চাকরি হারিয়েছেন তিনি। মনির তাঁর ভাইয়ের কাছে ওঠেন। তারপর দেশে ফেরা। মনিরের ভাই রিউ নামের শরিকা বা কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তার এই ভাই-ই তাঁকে সৌদিতে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন।
পরবর্তী সময় তাঁর আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আসা।

মনির পাটওয়ারী


প্রচণ্ড রোদে মেশিন চালাচ্ছিলেন মনির। ২৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় ১১টায় তাঁর সঙ্গে আমার কথা হয়। মনির জানালেন, দৈনিক ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। আট ঘণ্টা হিসাবে বেতন ৬০০ দিরহাম (১ দিরহাম=২০ টাকা)। ওদের ভাষায় চার ঘণ্টা ‘ওভার টাইম’। আরও বললেন, সকাল ছয়টায় উঠতে হয়৷ কাজ শেষে কোম্পানির গাড়িতে ফিরতে ফিরতে বাজে রাত আটটা। তারপর কাপড় ধোয়া, গোসল করা, রান্না-বান্না ইত্যাদি নিত্যকার কর্ম। এতে ঘুমানোর জন্যও পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায় না।
আল রিউম কোম্পানিতে তাঁর চাকরি। কোম্পানিটি মিউনিসিপ্যালিটিতে জনশক্তি সরবরাহকারী। অন্য কথায় শ্রম বিক্রির মধ্যস্বত্বভোগী। মনিরের ডরি-মাক্কিনা (মেশিন) ঘাস কাটছে। সে ঘাস পথে রয়ে যাচ্ছে। অন্য এক মাক্কিনা সেগুলো সংগ্রহ করছে এর ট্যাংকে। এগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে যাচ্ছে রাস্তার পাশে বসানো মাদার ট্যাংকে। মনির যে যন্ত্রটি চালাচ্ছেন সেটা একটা চলন্ত গাড়ি। গ্রাউন্ড মাস্টার এর নাম। সূর্যের প্রচণ্ড তেজ তখন। গায়ে ঘাম ঝরছে তাঁর। তার পরও তিনি যন্ত্রের মতোই চলছেন। আরবিতে কথা বলতে পারেন। তুমুল সে গতি। এমন সময় মোবাইল বেজে উঠল। তাঁর সুপারভাইজার তাঁকে ফোন করেছেন৷ ফোনে কথা বললেন সুপারভাইজারের সঙ্গে। আরবিতে যেন খই ফুটল।
গাড়ির ওপর বসেই আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন মনির। তিনি বিয়ে করেছিলেন, বললেন আন্তরিকতায়। দুর্ভাগ্য সে বিয়ে টেকেনি। জানালেন, তিনিই এই পর্বের শেষ টেনেছেন।
সংসারে তাঁর মা আছেন। চার ভাই। একজন সৌদি আরবে, তা আগেই বলা হয়েছে। বড়জন চট্টগ্রামে চা ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন। ছোট ভাইয়ের দায়িত্ব সংসার দেখাশোনা করা।
মনির ঘাস কেটে পরিপাটি রাখছেন রাস্তাঘাট বা এর আশপাশের পরিবেশ। নিজের সংসারটাকে শ্রী দেওয়ার ইচ্ছে তাঁর। তবে সেটা কি সম্ভব হবে?
নিমাই সরকার
আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত