Thank you for trying Sticky AMP!!

কম খরচে হৃদ্রোগের সেবা

হৃদ্‌রোগের জন্য সাধারণ মানুষের ভরসাস্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হৃদ্‌রোগ বিভাগে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকে ধারণক্ষমতার প্রায় চার গুণ। এক রোগীকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন চিকিৎসক। ছবিটি গতকাল দুপুরে তোলা l প্রথম আলো

ছর পঞ্চাশের সিরাজুল ইসলাম। বাড়ি চট্টগ্রাম নগরের বাকলিয়ায়। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম বেতনের চাকরি করেন। গত ছয় মাস আগে জানতে পারেন তাঁর হার্টে ব্লক রয়েছে। চিকিৎসকেরা পরামর্শ দেন ওপেন হার্ট অস্ত্রোপচারের। কিন্তু এত টাকা পাবেন কোথায়? শেষে জানলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কম খরচে হয় অস্ত্রোপচার। সেখানে ভর্তি হয়ে অস্ত্রোপচার শেষে সিরাজুল সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১ আগস্ট।

ওই দিন ছাড়া পাওয়ার আগ মুহূর্তে হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ সার্জারি বিভাগে কথা হয় সিরাজুলের সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০ দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অস্ত্রোপচারসহ সব মিলিয়ে তাঁর খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা।

হৃদ্‌রোগের চিকিৎসার জন্য এখন নিম্ন আয়ের মানুষের ভরসা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। স্বল্প খরচে হৃদ্‌রোগের সব ধরনের সেবা মেলে সরকারি এই হাসপাতালে। তাই রোগীর চাপও দিন দিন বাড়ছে। তবে জনবল সংকটের কারণে মাঝে মাঝে সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।

চমেক হাসপাতালে হৃদ্‌রোগ সার্জারি বিভাগ চালু হয়েছে ২০১২ সালে। বিভাগটি চালু হওয়ার পর থেকে এই বিভাগে অন্তত ৩০০ রোগীর অস্ত্রোপচার করা হয়। এর মধ্যে ৯০ শতাংশই ওপেন হার্ট অস্ত্রোপচার।

বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, এই বিভাগে ওপেন হার্ট অস্ত্রোপচারে খরচ পড়ে ৫০-৬০ হাজার টাকা। স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে করতে গেলে এতে খরচ পড়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা। হৃদ্‌রোগের অন্যান্য অস্ত্রোপচার করতে গেলে চমেকে খরচ পড়ে ১০-১২ হাজার টাকা। বাইরে তা তিন থেকে চার গুণ।

কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগে সর্বশেষ অস্ত্রোপচারটি হয় সিরাজুল ইসলামের। ওপেন হার্ট সার্জারির পর এখন তিনি সুস্থ রয়েছেন। ওষুধপত্র ও পারফিউশনিস্ট বাবদ তাঁর খরচ পড়েছে মাত্র ৫০ হাজার টাকা।

কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ূম চৌধুরী বলেন, ‘নিচের দিকের জনবল আমরা এখনো পায়নি। তাই পুরোদমে কাজ চালাতে হিমশিম খেতে হয়’।

বিভাগ সূত্র জানায়, কম খরচে নিম্ন মধ্যবিত্তদের অস্ত্রোপচার চললেও নানা সংকটে রয়েছে বিভাগটি। ঊর্ধ্বতন চিকিৎসক, নার্স, ক্লিনার, ওয়ার্ডবয় না থাকায় চালু করা যায়নি সার্জারি বিভাগের সাধারণ ওয়ার্ডটি। এ ছাড়া পারফিউশনিস্টের (অস্ত্রোপচারের সময় যিনি হার্ট সচল রাখেন) অভাব তো রয়েছেই। হাসপাতালের নতুন ভবনের তৃতীয় তলায় ৮ হাজার বর্গফুট জায়গায় বিভাগটির সীমিতভাবে কাজ চলছে। এ জন্য আরও জায়গা দরকার।

জানতে চাইলে বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পারফিউশনিস্ট এবং নিম্নস্তরের কর্মচারীর অভাবে পূর্ণাঙ্গ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এখানকার খরচ সকল বেসরকারি হাসপাতালের চেয়ে অনেক কম। সেবাও ভালো। শুধুমাত্র ওষুধ ও পারফিউনিস্টের জন্য টাকা দরকার হয়।

জানা গেছে, বিভাগটি চালু হওয়ার পর ৯০টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো ওসব পদ অনুযায়ী নিয়োগ হয়নি। বর্তমানে বিভাগটিতে একজন সহযোগী অধ্যাপক, পাঁচজন সহকারী অধ্যাপক, সাতজন মেডিকেল অফিসার কর্মরত রয়েছেন। ঢাকা থেকে পারফিউশনিস্ট এনে অস্ত্রোপচার করতে হয়।

সরকারি এই হাসপাতালের বাইরে চট্টগ্রামে বেসরকারিভাবে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারি এবং ম্যাক্স হাসপাতালে সীমিতসংখ্যক অস্ত্রোপচার হয় বলে চিকিৎসকেরা জানান। এ ছাড়া সম্প্রতি ফরটিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান হৃদ্রোগের চিকিৎসাসেবা নিয়ে চট্টগ্রাম এসেছে।

সাধারণ হৃদ্‌রোগের চিকিৎসার জন্যও চমেক হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগের বিকল্প নেই বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। এই বিভাগে সরকারিভাবে শয্যা রয়েছে ৫৬টি। কিন্তু গড়ে এসব বিভাগে রোগী থাকেন দুই শতাধিক।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চমেক হাসপাতালের হৃদ্‌রোগ বিভাগে রোগীর জন্য পা ফেলা দায়। মেঝেতে বিছানা পেতে রাখা হয়েছে রোগী। বিভাগের বারান্দা,  চিকিৎসক ও সেবিকাদের কক্ষের সামনের মেঝেতেও শয্যা দিয়ে রোগী রাখা হয়েছে।

৫৬টি শয্যার মধ্যে ১৩টি করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ) শয্যা, অন্যগুলো সাধারণ। শুধু সাধারণ শয্যায় নয় সিসিইউতেও ১৩ শয্যার বিপরীতে প্রায় ২০ জনের মতো রোগী থাকেন।

জানতে চাইলে হৃদ্‌রোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আশীষ দে বলেন, ‘আমাদের এখানে শয্যার তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি রোগী থাকেন। তবু চিকিৎসাসেবার কোনো ঘাটতি নেই। সাধ্যমতো চেষ্টা করে যান চিকিৎসকেরা।’

শুধু অন্তবিভাগ নয়, বহির্বিভাগেও প্রতিদিন গড়ে এক শ রোগী চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ২৫ থেকে ৩০ জনকে অন্তবিভাগে ভর্তির করার সুযোগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া এখানকার ক্যাথ ল্যাবে স্বল্প খরচে এনজিওগ্রাম করা হয় বলে জানান হৃদ্‌রোগ বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক রিজোয়ান রেহান। তিনি বলেন, স্বল্প খরচে এখানে এনজিওগ্রাম করা যায়। বেসরকারি হাসপাতালে সেটা বেশি টাকা দিতে হয়।