Thank you for trying Sticky AMP!!

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রথম লড়াকু জেনিফার হলার

জেনিফার হলারকে টিকা দেওয়া হচ্ছে

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার বিশ্বজুড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে বলেছে ‘বিশ্বমারি’। ক্রমে বাড়ছে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা আর বাড়ছে মৃত্যুও। তবে কিছু রোগী থেকে যাচ্ছে দৃষ্টির বাইরে। শীতল মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সব মহাদেশই এর দাপটে বিপর্যস্ত।

এর মধ্যে আশার বাণী শোনালেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের ওয়াশিংটন গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। এই সেদিন ১৬ মার্চ কোভিড–১৯ ভাইরাসের বিরুদ্ধে তাঁদের তৈরি টিকা দেওয়া হলো প্রথম যে স্বেচ্ছাসেবী নারীকে, তিনি হলেন ফার্মাসিস্ট জেনিফার হলার। প্রথম শট নিলেন তিনি। নিরুদ্বেগ। ভাবলেশহীন মুখ। হিউম্যান ট্রায়ালের প্রথম পর্যায় হলো শুরু।

টিকার নাম এমআরএনএ–১২৭৩। মর্ডানা নামে একটি মার্কিন বায়োটেকনোলজি কোম্পানির আনুকূল্যে গবেষণাটি করে আসছিলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।

প্রথম পর্যায়ে এ রকম তিনটি টিকা শট পরপর দিতে হবে। ৪৫ জন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক মানুষ হবেন এই পরীক্ষার স্বেচ্ছাসেবী। ২৮ দিন পরপর শট। এভাবে টিকার নিরাপত্তা পরীক্ষা করা হবে। টিকা গ্রহণ করেছিলেন প্রথম নারী ৪৩ বছর বয়সী জেনিফার হলার। এনবিসির ইন্টারভিউতে তিনি বলেন, ‘আমি ভাবছি আমরা যেন এই বিধ্বংসী রোগের টিকা পেয়ে যাই। দ্রুত। পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচবে। এরা দ্রুত ফিরে যাবে স্বাভাবিক জীবনে।’

 এসএআরএস–সিওভি–২–এর বিরুদ্ধে এমআরএনএ টিকা উদ্ভাবনের প্রথম ধাপ শেষ হলো। দ্বিতীয় পর্যায়ে শুরু হওয়ার পর। এটি আরও রোগীর ওপর পরীক্ষা করা হবে। 

এর ৬৫ দিন আগে চীনের বিজ্ঞানীরা এই ভাইরাসের জিন অনুক্রম খুঁজে বের করেছিলেন। এর ঠিক দুদিন পর যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) ভ্যাকসিন রিসার্চ সেন্টারের গবেষকেরা টিকার নকশা চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। এর উৎপাদন শুরু হয়ে গেল। ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রথম ব্যাচের টিকা তৈরি। ২৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্লেষণী পরীক্ষা। এরপর চলে গেল এনআইএইচের কাছে, মর্ডানা কোম্পানির কাছ থেকে।

এনআইএইচের বিজ্ঞানী ডা. এনথনি এস ফসি বলেন, এসএআরএস-সিওভি-২ (করোনাভাইরাস) সংক্রমণের বিরুদ্ধে নিরাপদ ও কার্যকর টিকা সন্ধান করা হলো জরুরি জনস্বাস্থ্য অগ্রাধিকার। দ্রুততম গতিতে প্রথম পর্যায়ের গবেষণাটির সূচনা করা হলো সেই লক্ষ্য অর্জনের পথে প্রথম পদক্ষেপ।

এই টিকা নানা দিক দিয়ে নিরাপদ। এতে ভাইরাসের কোনো রূপের লেশমাত্র নেই। এতে আছে জিন সংকেতের ক্ষুদ্র এক খণ্ড ‘এমআরএনএ’ ভাইরাস থেকে, এর অন্তরতমস্থল থেকে বিজ্ঞানীরা একে নিষ্কাশন করেছেন। এরপর ল্যাবরেটরিতে একে বহুগুণ বিবর্ধিত করা হলো।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই টিকা দেহের প্রতিরোধ শক্তিকে উদ্দীপিত করে, আর কোভিড–১৯ প্রতিরোধ করে।

তবে গবেষণাটি নিয়ে কথা উঠেছে। এমআরএনএ–১৭২৩ টিকাটি মানবশরীরে প্রয়োগ করে পরীক্ষার আগে ইঁদুরে প্রয়োগ করে দেখতে হবে। তা–ই হয়ে আসছে। তবে অনেকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও জরুরি চাহিদার বিচারে এটি অনুমোদন করা যায়।

যদিও টিকার উদ্ভাবন দ্রুত হলো, কিন্তু এর মূল্যায়ন যাচাই–বাছাই করে বাজারে এটি আসতে দেরি হবে, বছরখানেক তো লাগবেই। এই টিকা আবিষ্কারে যিনি প্রথম নিজের জীবন বাজি রেখে লড়েছেন তিনি একজন নারী, জেনিফার হলার। মানুষের বৃহৎ কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার এই কর্ম সত্যিই বিরল। আমরা তাঁকে টুপিখোলা অভিবাদন জানাই।