Thank you for trying Sticky AMP!!

কর্মীকে কাজে লাগাবেন কীভাবে?

একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী পদে আছেন আতিকুল (ছদ্মনাম)। কিছুদিন আগে অফিসের বস তাঁকে একটি ফাইল তৈরির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। যথাসময়ে কাজ শেষ করে আতিকুল ফাইল নিয়ে যান বসের কাছে। কিন্তু দু-একটা ছোট্ট ভুল নিয়ে বসের বেদম ঝাড়ি খেয়ে তাঁকে নিজের টেবিলে ফিরতে হয়। এ নিয়ে বেজায় মন খারাপ আতিকুলের। শুধু রুটি-রুজির কথা ভেবেই আর ইস্তফা দেননি!

সরকারি বা বেসরকারি—কোনো প্রতিষ্ঠানেই এ চিত্র অস্বাভাবিক নয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ঝাড়ি খেয়ে মুখ বেজার করে কখনো বাড়ি ফেরেননি, এমন চাকরিজীবী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এভাবে কাজের ভুল হয়তো শেষতক শুধরে নেওয়া যায়, কিন্তু মনে বইতে থাকে অশান্তির ঝোড়ো হাওয়া। গবেষকেরা বলছেন, অশান্তির এই ঝড়ই যত নষ্টের গোড়া। এতে কাজের গতি কমে যায় আরও, থমকে যায় সৃজনশীলতা।

সম্প্রতি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকেরা মিলে ঠিক এই বিষয়ে একটি গবেষণা চালিয়েছেন। দ্য লিডারশিপ কোয়ার্টারলি-তে এই গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে। গবেষণায় জানা গেছে, বস বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যদি কর্মীদের প্রতি দরদি বা সহানুভূতিশীল হন, তবে কাজের গতি বাড়ে, মানও ভালো হয়। আর এর উল্টোটা করতে গেলেই সর্বনাশের মাথায় বাড়ি!

গবেষক দলের অন্যতম সদস্য হলেন চৌ-ইউ সাই। আমেরিকার স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কের এই শিক্ষক বলেন, ‘ভালো ব্যবহার বা সদাচরণ করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি কর্মস্থলে আপনার সম্পর্কে অনুসারীদের মনোভাব বদলে দিতে পারে। আপনি যদি বুঝতে পারেন, অফিসের নেতা বা বস আপনার প্রতি সত্যিই সহানুভূতিশীল, তখন অফিসের কাজ আরও গুরুত্বের সঙ্গে করতে উৎসাহিত হবেন।’

এই গবেষণার জন্য তাইওয়ানের সামরিক বাহিনীর এক হাজার সদস্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত প্রায় দুই শ পেশাদার চাকরিজীবীর মধ্যে জরিপ চালানো হয়েছে। যদিও দুটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতা ভিন্ন, কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সবখানেই ঊর্ধ্বতনদের বিষয়ে কর্মীদের চাওয়া একই।

গবেষণায় নেতৃত্বের তিনটি ধরন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমটিতে নেতা পুরোপুরি কর্তৃত্ববাদী, তিনি যা বলেন তা-ই হয়। কর্মীদের নিয়ে ভাবার তাঁর সময় নেই। অন্যদিকে দ্বিতীয় ধারার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধস্তন কর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকেন এবং তাঁদের সর্বতোভাবে সমর্থন দিয়ে কাজ আদায় করে নিতে চান। নেতৃত্বের সর্বশেষ ধরনটি আগের দুটির সমন্বিত রূপ। এতে বস একদিকে থাকেন কর্তৃত্ববাদী, অন্যদিকে কর্মীদের কল্যাণও চান তিনি।

গবেষকেরা বলছেন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কিছু সমর্থন দিয়ে কর্মীর সেরাটা আদায় করে নেওয়া সম্ভব। অধ্যাপক চৌ-ইউ সাই বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, অধস্তন ও কর্মীরা কোনো যন্ত্র নয়। তাঁরা মানুষ এবং প্রত্যেকটি মানুষই সম্মান প্রত্যাশা করে।’

তাহলে কর্মীদের কীভাবে কাজে লাগাতে হবে? মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অধস্তন কর্মীর কোচের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। একটি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নেতা তখনই সফল হবেন, যখন তাঁর কর্মীরা নিখুঁত কাজ করবেন। এ জন্য একটি দল হিসেবে কাজ করা প্রয়োজন, প্রভু-ভৃত্যের মতো সম্পর্ক হলে পুষবে না। এ ক্ষেত্রে তিনটি কাজে পটু হতে হবে বসকে। এগুলো হলো:

১. কাজের ভালো-মন্দ সম্পর্কে কর্মীকে নিয়মিত জানাতে হবে। ভুল হলে অকারণে অপমান না করে সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে হবে। আবার কাজ ভালো হলে খোলা মনে প্রশংসাও করতে হবে।

২. কর্মীদের সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করবেন বস। দুই পক্ষের মধ্যে থাকতে হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধার সম্পর্ক। তখন বসের কড়া শাসনেও মন খারাপ হবে না কর্মীর, উল্টো সেটি হবে নিখুঁত কাজ করার প্রেরণা।

৩. কর্মীর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রবণতাকে উৎসাহ দিতে হবে। বসের মনে রাখতে হবে, মাঝে মাঝে পা হড়কালেও, আখেরে লাভ হবে তাঁর প্রতিষ্ঠানেরই।