Thank you for trying Sticky AMP!!

কল্পনাস্তব ২০৭১

শিরোনামটি নেওয়া বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা-উপাচার্যের ডায়েরি থেকে। পাদটীকা হিসেবে লেখা ছিল "কল্পনা থেকে বাস্তব"। আকস্মিকভাবে হাতে আসে ডায়েরিটি। লেখক জীবনের সিকিভাগ প্রবাসে, আর অর্ধেক এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পেছনে ব্যয় করেছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দেওয়া বক্তৃতার বিষয়বস্তুর কালানুক্রমিক বিবরণ পাই ডায়েরিতে । এতে উঠে এসেছে প্রতিষ্ঠার মাত্র ৫০-বছরে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রথমে এশিয়া, তারপর সারা বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় প্রথম তিনটির মাঝে চলে আসে... স্থানাভাবে সংক্ষেপিত আকারে তুলে দিলাম।

জানুয়ারি ২০২১: আমাদের স্বপ্ন পূর্ণ হল। সুনীল সাগরপারের ক্যাম্পাসে   আজ যাত্রা শুরু করল "বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়"...

মার্চ-২০৩৫: আমাদের অগ্রযাত্রা আজ সারাবিশ্বে স্বীকৃত, প্রসংশিত। মাত্র ১৫ বছরে এটা সম্ভব হয়েছে মেধা-মনন-নিষ্ঠা-সৃজনশীলতার ভারসাম্যপূর্ণ সম্মিলনে, প্রতিটি বিভাগে স্নাতকোত্তর মানসম্পন্ন গবেষণায়, সর্বোচ্চ র‌্যাঙ্কিঙধারী জার্নালগুলোতে নিয়মিত প্রকাশনায়। ক্যাম্পাসে রাজনীতি আর দলীয়করণের মত বিষয়গুলোকে আমরা সবসময় 'না' বলে এসেছি... সাম্প্রতিক ইতিহাস বলে এগুলোই সবচেয়ে ক্ষতিকর ছিল। প্রতিবছর এখানে ইউরোপ-আমেরিকার অসংখ্য ভর্তিচ্ছুক ছাত্র-ছাত্রীর ভিড়... আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

মে-২০৪০: প্রযুক্তিবিশ্বে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি - কম্পিউটার-বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিতে নিলেন সম্মানসূচক টিউরিং অ্যাওয়ার্ড! বাংলাদেশি তরুণ উদ্যোক্তারা সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে যে তিনটি মহিরুহ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান- এ তারই স্বীকৃতি। আমাদের অন্বেষা ডটকম এখন গুগলের পরে সবচেয়ে জনপ্রিয় সার্চ-ইঞ্জিন, বাংলাবাজার ডটকম বার্ষিক মুনাফায় ছাড়িয়ে গেছে অ্যামাজন ডটকমকে, মেধাসূত্র ডটকম মাইক্রোচিপে স্বয়ংক্রিয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যোগ করে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে ইন্টেলকে। সাইবার জগৎ, আমরা প্রস্তুত!

জানুয়ারি-২০৪৩: জাতীয় ক্রিকেটদলের বিশ্বজয়- ওডিআই বিশ্বকাপে আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন!!! অভিনন্দন দলের সবাইকে, আর সমর্থকদের, যারা যুগের পর যুগ দলের সামর্থ্যে আস্থা রেখেছেন! রাত জাগা সার্থক সেইসব প্রবাসীদের, অ্যালার্ম শুনে উঠে যারা রাতের পর রাত খেলা দেখে দলকে সমর্থন করে গেছেন!

মে-২০৪৫: ফলিত গবেষণায় আমাদের সাফল্যে যোগ হয়ে চলেছে নতুন মাইলফলক। ক'বছর আগে যন্ত্রকৌশল বিভাগের নেতৃত্বে দেশী-প্রযুক্তিতে তৈরি যন্ত্রযান (সড়ক ও নৌ) আজ আমরা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করছি। অ্যারোনটিক্স বিভাগের তৈরি "আকাশ-প্রদীপ" আর "আকাশ-প্রহরী" সিরিজের ড্রোন আমাদের সমুদ্র-পাহাড়ের পর্যবেক্ষণ চাহিদা মিটিয়ে, আর প্রতিটি জেলায় বেসামরিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভূমিকা রেখে প্রবল জনপ্রিয়তায় রপ্তানি হচ্ছে। তৈরি পোশাকশিল্প আর প্রবাসী রেমিট্যান্সকে পেছনে ফেলে তথ্য-প্রযুক্তিশিল্পের পরে এ দুটো এখন আমাদের শীর্ষ রপ্তানি শিল্প।

মে-২০৪৬: আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক বহুমুখী চাপকে পরাভূত করে সুন্দরবনে এ বছর আমরা গড়ে তুলেছি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সত্যিকারের অভয়াশ্রম। এটা সম্ভব হল জীববিজ্ঞান-বিভাগের একদল কর্মীর নিরলস সাধনার ফলে। সেদিন হয়তো খুব দূরে নয় যখন মুক্ত বাঘ দর্শনে আমাদের সুন্দরবনই হবে প্রথম এবং শেষ আশ্রয়।

জুন-২০৬০: অসাধারণ, অনন্য অর্জন!!! এ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জয় করলেন দুটি নোবেল পুরস্কার! প্রথমটি পদার্থবিজ্ঞানে, নতুন বহুবিভাজন পদ্ধতিতে শতভাগ পরিবেশবান্ধব জ্বালানী উদ্ভাবনের তাত্ত্বিক গবেষণায়। দ্বিতীয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানে, সুন্দরবনের নব-আবিষ্কৃত প্রাণ-প্রজাতি থেকে ক্যান্সার প্রতিরোধী কৃত্রিম কোষ তৈরিতে। গবেষণা-সহযোগী হিসেবে ছিল প্রিন্সটন, জন্স হপকিন্স আর অক্সফোর্ড।

জুলাই-২০৬৫: জাতীয় গৌরবের দিন আজ। নিঝুম-দ্বীপ থেকে উৎক্ষিপ্ত বৃহস্পতি-নভোযান "একাদশে-বৃহস্পতি" আজ সফলভাবে বৃহস্পতি গ্রহে অবতরণ করে জাতীয় পতাকা উড়িয়েছে! সাবাস বাংলাদেশ!!!

মে-২০৭১: প্রবাস-জীবনে একজন বাঙালি আমাকে বলেছিলেন, নিজের কাজ সবচেয়ে ভালভাবে করে যাওয়া যদি দেশপ্রেমের মানদণ্ড হয়, তাহলে আমরা খুব একটা পিছিয়ে নেই। দেশপ্রেম কোন সীমান্ত মানে না। আমরা যে যেখানেই থাকি বিজাতীয় সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, আর বৈরী-প্রকৃতির মাঝে প্রতিদিন যতটাই আমরা হাঁপিয়ে উঠি, দিনশেষে আমরা ঠিক ততটাই "বাংলাদেশের হৃদয় হতে" উঠে আসা একেকজন বাঙালি। ঠিক এ কারণেই প্রবাসীদের দিনের শুরু হয় অনলাইনে দেশের পত্রিকা পরে, আর শেষ হয় ইউটিউবে বাংলা নাটক দেখে। পয়লা বৈশাখ, ঈদ আর অন্যান্য পার্বণে আমরা বানিয়ে ফেলি খণ্ড খণ্ড বাংলাদেশ। ডালাস, শিকাগো, বার্লিন, সিডনি, লন্ডনের আনাচে-কানাচে বেজে ওঠে "আমার সোনার বাংলা"। সংখ্যার স্বল্পতা ঘুচে যায় হৃদয়ানুভূতির গভীরতায়। কাঁচা হাতে বানানো শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধকে মনে হয় বাস্তবের নিখুঁত রেপ্লিকা, শৈশবে চারু-কারুকলায় কম নম্বর পাওয়া কারো হাতে আঁকা আল্পনায় ফুটে ওঠে জয়নুল-কামরুল-মনোয়ারের শিল্পশৈলী। বাইরে জাতীয় সংগীত বাজছে...শেষ প্রস্তুতি চূড়ান্তপ্রায়...আমারও যাবার সময় হল...

যুক্তরাষ্ট্র / ইন্ডিয়ানা / সাউথ বেন্ড