Thank you for trying Sticky AMP!!

কাদামাখা ছবিটাই সেরা

প্লেয়িং ইন দ্য মাডি ফিল্ড—এ ছবিটাই জিতেছে এক্সপ্লোর টু ইনস্পায়ার প্রতিযোগিতার গ্র্যান্ড প্রাইজ

ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রতিযোগিতায় ১৬ হাজার ছবির মধ্যে সেরা ছবিটি কাজী রিয়াসাত আলভীর তোলা।মাত্র ২৪ বছর বয়সেই ছবি তুলে ঝুলিতে ভরেছেন বাঘা বাঘা পুরস্কার।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সিরিজের ছবি

ছবিটা হুটোপুটিরই। জলকাদায় দুষ্টু বালক দলের দুরন্ত খেলা। ২০১০ সালে বনানীর কড়াইল বস্তির মাঠে বেশ কয়েকটি শিশু মেতে উঠেছিল জলকাদায়। এরপর হঠাৎ বালক দলের একজনকে দেখা গেল মাঠে শুয়ে ক্লান্তি দূর করতে। সেখানে ছিলেন এক আলোকচিত্রী। ক্যামেরা নিয়ে ছুটে গেলেন শুয়ে থাকা ছেলেটার কাছে। কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়িয়ে ক্যামেরা তাক করলেন। তাঁকে দেখে বালক দলের বাকিরা এসে গোল করে ভিড় জমাল। ক্লিক! ক্লিক! শাটার টিপলেন আলোকচিত্রী। হয়ে গেল আলোকচিত্র, যাতে দেখা যাচ্ছে কর্দমাক্ত মাঠে আয়েশে শুয়ে আছে কাদামাখা এক বালক। তাকে ঘিরে অনেক জোড়া পা। আলোকচিত্রী কাজী রিয়াসাত আলভী সাদা-কালো এ ছবির নাম দিলেন ‘প্লেয়িং ইন মাডি ফিল্ড’। আলভীর এ ছবি নিয়ে এত কথা বলার উপলক্ষটা বেশ বড়।
বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ১২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করেছে গত বছর। আর এ উপলক্ষে ক্যামেরা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ক্যাননের পৃষ্ঠপোষকতায় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল (এনজিসি) আয়োজন করেছিল ‘এক্সপ্লোর টু ইনস্পায়ার’ নামে আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার। এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শৌখিন আলোকচিত্রীদের কাছ থেকে গত বছরের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে চাওয়া হয়েছিল ছবি। সেই প্রতিযোগিতায় ১৬ হাজার ২২২টি ছবির মধ্যে প্রথম পুরস্কারটি (গ্র্যান্ড প্রাইজ) কবজা করে কাজী রিয়াসাত আলভীর তোলা কড়াইলের সেই ছবি। চলতি মাসে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক এশিয়া সংস্করণে এটা ছাপাও হচ্ছে। পুরস্কার হিসেবে এ ছাড়া আলভী পেয়েছেন ক্যাননের ফাইভ ডি মার্ক থ্রি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং চলতি মাসে সানফ্রানসিসকোতে অনুষ্ঠেয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেওয়ার সুযোগ।

ক্রিকেটের জন্য ভালোবাসা

‘পাঁচটি ছবি পাঠিয়েছিলাম প্রতিযোগিতায়। এর মধ্যে এই ছবিটি পুরস্কার পেল। বস্তির ছেলেগুলোর জীবনে অনেক কষ্ট। সেই কষ্টের মধ্যেও খেলার আনন্দে তারা অনুপ্রেরণা পায়। ব্যাপারটা প্রতিযোগিতার বিষয়কে হয়তো ভালোভাবে তুলে ধরেছে।’ আলাপচারিতায় প্রথম পুরস্কার নিয়ে এভাবেই বললেন কাজী রিয়াসাত আলভী।

কাজী রিয়াসাত আলভী

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ক্যাননের পরিবেশক জেএএন অ্যাসোসিয়েটস আয়োজিত একটা অনুষ্ঠানে আলভীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ। জেএএনের প্রধান নির্বাহী আবদুল্লাহ এইচ কাফি বলেন, আলভীর এ পুরস্কার দেশের তরুণ আলোকচিত্রীদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার, কম বড় কথা নয়! কিন্তু এটা যিনি পেলেন, সেই আলভী দেখতে যেমন ছোটখাটো, তেমনি বয়সটাও তাঁর নেহাতই কম। মাত্র ২৪। ১৯৯০ সালের ২২ জুন চট্টগ্রামে জন্ম। চিকিৎসক বাবা কাজী আলী আকবর ও শিক্ষক মা ফরিদা ইয়াসমীনের দুই সন্তানের মধ্যে আলভী বড়। ছোট বোন কাজী নেহলীন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন। আলভীর বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামেই। চট্টগ্রাম সরকারি স্কুলে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ঢাকায় এসে ভর্তি হন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে। এখান থেকে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক ডিগ্রি নিয়েছেন। বিবিএর মূল বিষয় ছিল বিপণন, পাশাপাশি ছিল মিডিয়া কমিউনিকেশন।
সৃজনশীলতা যাঁর মধ্যে, তাঁর কি আর অন্য কিছু ভালো লাগে? ২০১১ সালে সনির সাধারণ একটা ডিজিটাল ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলা শুরু করেন আলভী। এরপর হাতে তুলে নেন নাইকনের একটি ক্যামেরা। বললেন, ‘পড়াশোনার পাশাপাশিই চলতে থাকল ছবি তোলা। আর মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই একটা পুরস্কার পেয়ে গেলাম।’ যেনতেন পুরস্কার নয়, প্রথমবারের মতো আলভীর পাওয়া পুরস্কারটি অস্ট্রেলিয়ার ‘পিপল অ্যান্ড প্লানেট অ্যাওয়ার্ড’। সেরা তিনজনের একজন আলভী। এই তিনজনের আরেকজনও বাংলাদেশের—আলোকচিত্রী জসিম সালাম। এরপর আলভী ভাবলেন, এবার সিরিয়াস হওয়া উচিত। আলোকচিত্র নিয়ে সিরিয়াস হলেন, ফলও পেলেন। ২০১৩ সালের আয়ান পেরি বৃত্তিপ্রাপ্ত সারা বিশ্বের চার তরুণ আলোকচিত্রীর একজন তিনি। চারজনের মধ্যে প্রথম পুরস্কারটা পেয়েছেন বাংলাদেশের আলোকচিত্রী ফারজানা ইসলাম।
ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্রের মাথায় ঢুকেছে ফটোগ্রাফি, আন্তর্জাতিক সাফল্যও আসছে বেশ জোরেশোরেই, তাই আলভীর ভবিষ্যৎ পেশা আলোকচিত্রকে ঘিরেই। ‘এখন ছবি তোলাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেব। আলোকচিত্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কাউন্টার ফটোগ্রাফিতে তাই এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স করছি। বিবিএ পড়ে ছবি তোলায় বেশি সময় দিতাম—এটা অনেকেই পছন্দ করতেন না। পুরস্কার পাওয়ায় এখন অবশ্য মা-বাবাসহ সবাই খুশি।’
অনেকের তোলা ছবিই ভালো লাগে আলভীর। নাম জানতে চাইলে জানালেন কয়েকটি নাম, যাঁদের কাছ থেকে তিনি অনুপ্রেরণা পান। সেই আলোকচিত্রীরা হলেন জোসেফ কোদেলকা, রঘু রায়, হেনরি কার্টিয়ার ব্রেসেল, দাই দো মরিয়ামা আর দেশে সাইফুল হক ও মুনেম ওয়াসিফ।
আলোকচিত্রের ‘প্রামাণ্য’ ক্ষেত্রটিকেই বেছে নিয়েছেন আলভী। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই সিরিজ ছবি আলভীকে দিয়েছে অসামান্য স্বীকৃতি। গত বছর নিউ ইয়র্কার ম্যাগাজিন বিশ্বের ১২ জন ‘এমারজিং ফটোগ্রাফার’-এর তালিকায় রেখেছে কাজী রিয়াসাত আলভীকে।
তাই ২৪ বছরের এই আলোকচিত্রী যাবেন বহুদূর, তা সহজেই অনুমেয়।