Thank you for trying Sticky AMP!!

কিসে ছিল এত অভিমান?

মায়ের সঙ্গে আফ্রিদা তানজীম। ছবি: সংগৃহীত

‘আমি স্বপ্ন দেখি কোনো একদিন আমি জানতে পারব আমি কী করতে চাই।’ অনলাইনভিত্তিক সাহিত্য পত্রিকা ‘প্রাচ্য রিভিউ’-এর প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত একটা কবিতার লেখক পরিচিতিতে নিজের সম্পর্কে লিখেছিল আফ্রিদা তানজীম মাহি। ১৫ জানুয়ারি পৃথিবীর ওপর অভিমান করে মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছে সে। কিসের এত অভিমান, কেন এমন করল—কোনো দিন আর জানা হবে না।

আফ্রিদার সঙ্গে আমার পরিচয় তার মা কবি রহিমা আফরোজের মাধ্যমে। ফেসবুকে বন্ধু হয়ে থাকলেও ওর সঙ্গে তেমন কথাবার্তা হয়ে ওঠেনি প্রথম প্রথম। ওর আঁকা ছবি দেখতাম, একটা মুগ্ধতা কাজ করত। একদম কাছের কয়েকজনকে বলতাম ওর কথা, এই মেয়ের তুলির আঁচড় একদিন সবাইকে মোহাবিষ্ট করে রাখবে।

২০১৬ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে মনে হলো আমার প্রথম বইয়ের পাঁচ বছর হয়ে গেল, দ্বিতীয় বইটা বের করা দরকার। কী ভেবে আমি ৩১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তাঁকে মেসেঞ্জারে নক করে বললাম, প্রচ্ছদ করে দিতে পারবে কি না। ও সানন্দে রাজি হলো আর কিছু তথ্য জানতে চাইল বইটা সম্পর্কে। আমি ভাবলাম দু-তিন দিন পর আবার নক করব।

রাতে মেসেজ দিয়ে ও বলল, ‘কাজ শেষ’। দেখলাম একটা না, ছয় ছয়টা প্রচ্ছদ করে পাঠিয়েছে আফ্রিদা। বলল কোনোটা নিয়েই সে সন্তুষ্ট হতে পারছে না, আমাকে বেছে নিতে। এত তড়িৎ ফিডব্যাক পেয়ে আমি যতটা না খুশি হয়েছিলাম বইয়ের কাজ এগিয়ে গেল বলে, তার থেকেও বেশি অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে এত অল্প সময়ে এই কটা প্রচ্ছদ সে কীভাবে করল।

বই বের হলো কিন্তু উত্তরাবাসী আর গ্রীনরোডবাসী আমাদের সময় মিলছিল না দেখা করার। আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে ফেসবুকে আমাদের বন্ধুত্বের এক বছর পূর্ণ হলো। তখন আফ্রিদা বলল, ‘এই উপলক্ষটা আমাদের উদ্‌যাপন করতে হবে।’ খুব সম্ভবত সেটাই ওর সঙ্গে প্রথম আর শেষ দেখা। ব্যস্ততা আমাদের দুই বন্ধুকে আর সেই অবসর দেয়নি।

তবে আফ্রিদার একক চিত্র প্রদর্শনীর ফেসবুক ইভেন্টে আমাকে ‘ইনভাইট’ করেছিল ও, আমিও ভাবছিলাম আবার দেখা হবে ওর সঙ্গে, রহিমা আফরোজ আপার সঙ্গেও। এর মধ্যেই বজ্রাহত হতে হলো আমাদের, জানতে পারলাম আফ্রিদা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সবকিছুর ইতি টানার। ওর প্রদর্শনী এখনও চলছে ধানমন্ডির কলাকেন্দ্রে। শুরু হয়েছে ১২ জানুয়ারি থেকে আর শেষ হবে ২৭ জানুয়ারি। তার আগে নিজেকেই শেষ করে ফেলল আফ্রিদা।

আফ্রিদা তানজীমের অাঁকা ছবি

শেষবার ওর সঙ্গে যখন কথা হয় ২০১৬ সালের নভেম্বরে, বলেছিল ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে বিবিএতে ভর্তি হবে। চারুকলায় কেন পড়ছে না ভেবে আমি অবাক হওয়ায় আফ্রিদা বলেছিল ‘প্যাশন’ আর ‘প্রফেশন’ আলাদা।
আমরা কেউই হয়তো আফ্রিদার সিদ্ধান্ত বিচার করার ক্ষমতা রাখি না, তবে নিঃসন্দেহে আমরা এক বিশাল প্রতিভাকে হারালাম। ঠিক কী কারণে এই প্যাশনের প্রতি প্যাশন সে হারিয়ে ফেলল, সেটা জানা হবে না হয়তো, তবে আমরা মনে-প্রাণে চাইব এমনভাবে আমাদের প্রতিভারা যেন আর ঝরে না পড়ে।

‘প্রাচ্য-এরই একটা সংখ্যায় ও প্রচ্ছদ করে দিয়েছিল। জানি না খুব অল্প সময়ের জন্য পৃথিবীতে থাকবে এই কথা ও জানত বলেই কিনা ওর ছবিজুড়ে কালো রঙের বা অন্ধকারের আধিক্য থাকত। ওকে সহজে এককথায় যদি বলি ও হচ্ছে আর্টিস্ট অব ডার্কনেস। হারিয়েও গেল ডার্কনেসের মধ্যেই’—বললেন ‘প্রাচ্য রিভিউ’র সম্পাদক শাফিনূর শাফিন।

আফ্রিদা কি জানতে পেরেছিল সে কী করতে চায়? নাকি সেটা না জানতে পারাতেই জীবনের প্রতি তার এই আক্রোশ?
চলমান প্রদর্শনীর আর্টিস্ট স্টেটমেন্টে ও লিখেছে, ‘আমার শিল্পের মধ্যেই কেবল আমি আছি।’ এই কথাটা এত নির্মম সত্য এত তাড়াতাড়ি কেন হতে হলো?