Thank you for trying Sticky AMP!!

কীভাবে নিজেকে ফুরফুরে রাখবেন

মডেল: ঐশী ছবি: অধুনা

‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি,
সারা দিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি।’

কবিতার অংশের সঙ্গে মিলিয়ে বলতে হয়, সকাল থেকেই ভালো লাগার প্রতিজ্ঞা করা উচিত। কিন্তু চাইলেই তো সারা দিন ভালো থাকা যায় না। বাড়ি, সংসারের কাজের চাপ, নয়তো অফিসের হাজারটা চিন্তা৷ সব মিলিয়ে দিনের শেষে যোগ-বিয়োগের হিসাবে ফুরফুরে থাকার অংশটা খুবই সামান্য। তবে আপনি চাইলে নিজেকে ফুরফুরে রাখতে পারেন। মন–মেজাজ ফুরফুরে রাখার কিছু উপায়ও বলেছেন তিনি।

সকাল থেকেই ভালো থাকার শুরু
দিনের শুরু হওয়া চাই স্নিগ্ধ, সুন্দর ও ঝলমলে সকাল দিয়ে। তাহলে রেশটা থাকে সারা দিন। সারা দিন উজ্জীবিত থাকতে চাইলে অবশ্যই সকালে ওঠা উচিত। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারলে দিনটি অনেক বড় হয়ে যায়। ভোরে ঘুম থেকে উঠলে একটু বেশি সময় নিয়ে সারা দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা যায়। শরীর ভালো থাকলেই মন ফুরফুরে থাকে। মন ফুরফুরে রাখতে সকালে ঘুম থেকে উঠে হাঁটুন। হাঁটলে স্বাস্থ্য ও শরীর ভালো থাকে। এতে শারীরিকভাবে ভালো থাকার পাশাপাশি ত্বকও ভালো থাকে। একই সঙ্গে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি চুল ভালো থাকে, হজমশক্তি বাড়ে। মানসিক ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি মনোবল বাড়ে। সকালে নিয়মিত হেঁটেই নিজেকে ফুরফুরে রাখতে পারবেন ষোলো আনা।

সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানি পান উপকারী। যদি শুধু পানি পান করতে ভালো না লাগে, তবে পানিতে এক টুকরো তাজা লেবু চিপে নিয়ে পান করুন। সারা দিনের জন্য আপনার শরীর তরতাজা হয়ে উঠবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে কাজের প্রস্তুতি নিতে সারা দিনের একটি ছক তৈরি করুন মনে মনে। সকালের স্নিগ্ধ আলো উপভোগ করুন। সকালের আলো প্রাকৃতিকভাবে আপনার মনকে পুরো দিনের জন্য তৈরি করে ফেলতে সক্ষম।

কাজে বের হওয়ার আগে গোসল করা উচিত। গোসল না করে তাড়াহুড়া করে বের হওয়া উচিত নয়। সকালে গোসল করার অভ্যাস মনকে সতেজ করে। গোসল করলে ত্বকে আসে নমনীয়তা। সকালে গোসলের অভ্যাস কাজের উদ্যম বাড়ায়, শরীরে রক্তচলাচল স্বাভাবিক করে, বিষণ্নতা কমায়। তারপর নাশতা সেরে নিন। সকালের নাশতায় দিনের সবচেয়ে ভালো উপকরণ রাখা উচিত। ভালো খাবার খেলে মনও ফুরফুরে থাকে। নাশতার সঙ্গে রাখতে পারেন এক কাপ গরম চা। শরীরকে ঝরঝরে ও চাঙা রাখতে এটির কোনো বিকল্প নেই।

কর্মক্ষেত্রে
অফিসে ফুরফুরে মেজাজে থাকা সবচেয়ে কঠিন কাজ। পরিবারের সবাই মোটামুটি বুঝে গেছে আপনাকে। কিন্তু সমস্যায় পড়তে হয় অফিসে। অফিসে সব সময় মনের মতো পাবেন না। হয়তোবা বসের উপদেশ কিংবা সহকর্মীদের অসহযোগিতা আপনার মনকে বিষিয়ে তুলতে পারে। রেগে গেলে নিয়ন্ত্রণ হাতে থাকে না। কিন্তু অফিসের কাজের স্বার্থে এবং সুন্দর পরিবেশ বজায় রাখতে রাগটাকে তো বশে রাখতেই হবে। রাগ বশে রাখতে পারলে মন থাকবে ফুরফুরে। অফিসে আপনাকে অনেক ধরনের মানুষের সঙ্গে কাজ করতে হয়। সবারই আলাদা চরিত্র থাকে। তাই অফিসে সব সময়ই নিজেকে একটু মানিয়ে চলতে হবে। এ জন্য অনেক কিছু ভালো না লাগলেও ছাড় দিতে হবে। কারও ওপর যদি মেজাজ খারাপ হয়েই যায়, বেশিক্ষণ তার সামনে না থেকে কাজ থেকে একটু অবসর নিয়ে হাঁটাহাঁটি করুন। এর ফলে আপনি আরও ভালো ও ফুরফুরে থাকবেন।

অফিসে একনাগাড়ে কাজ করে ক্লান্ত হয়ে গেলে নিজের আসনে একটু আয়েশ করে মৃদু শব্দে পছন্দের কোনো গান বা কবিতা শুনুন। দেখবেন মনটা ভালো হয়ে গেছে। অতিরিক্ত কাজের চাপে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে ফেললে, মাথা ঠান্ডা হলে তাকে ‘দুঃখিত’ বলতে ভুলবেন না। এতে আপনি ছোট হয়ে যাবেন না, বরং ভুল–বোঝাবুঝির অবসান হবে। তাতে আপনার মনটা ফুরফুরে থাকবে।

গান এমন একটি জিনিস, যা যেকোনো পরিস্থিতিতে আমাদের মন ভালো করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। অফিসে যাওয়ার সময় বা অফিস থেকে বাসায় ফেরার সময় নিজের পছন্দের গান শুনতে পারেন। মন বেশ ফুরফুরে থাকবে। এবং দেখবেন, অফিসে যাওয়ার আসার সময়টুকু ভালো কাটবে। আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে নিজেকে বলুন প্রেরণামূলক কোনো একটি বাক্য। বর্তমান সময়ে মনকে আর শরীরকে ভালো রাখতে, প্রফুল্ল রাখতে যোগব্যায়াম করতে পারেন। যোগব্যায়াম শেষে দেখবেন, আপনার শরীর ও মন আগের চেয়ে অনেক বেশি ফুরফুরে।

দিনের শেষে
কাজ শেষে বাড়িতে ফেরার পর শরীর আর মন দুটোতেই ক্লান্তি ভর করে। শরীর ও মনকে ফুরফুরে রাখতে বাড়ি ফিরেই ভালো করে গোসল করা উচিত৷ এতে আপনার ক্লান্তি দূর হবে। সকালে গোসলের বেশি সময় না পেলেও রাতে বাড়ি ফিরে একটু বেশি সময় নিয়ে গোসল করুন৷ কাজ থেকে বাড়ি ফিরে কিছুটা সময় নিজের জন্য রাখুন৷ এই সময় যা খুশি তা–ই করতে পারেন৷ সেটা হতে পারে নিজের কোনো শখ নিয়ে সময় কাটানো, সিনেমা দেখা বা গান শোনা৷ হাতে সময় থাকলে সৃজনশীল কিছু করতে পারেন। সারা দিনের ব্যস্ততার কারণে কাছের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় না। রাতে বাসায় ফিরে আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন। মাঝেমধ্যে প্রিয়জনের সঙ্গে অফিসের পর কফিশপে আড্ডা দিতে পারেন৷ আবার বাড়িতেও সবাইকে নিমন্ত্রণ করে আয়োজন করতে পারেন একটা আনন্দ আয়োজন৷ প্রিয় মানুষদের সাহচর্যে ফুরফুরে হয়ে উঠবে শরীর ও মন৷ সকালে যদি হাঁটার সময় বের করতে না পারেন, তাহলে সন্ধ্যার পরে হাঁটতে পারেন।

কাজী রুমানা হক: সাইকোসোশ্যাল কাউন্সেলর, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়

অনুলিখিত