Thank you for trying Sticky AMP!!

কেউ তো রক্ষা পাচ্ছে না!

মাসখানেক আগের কথা। কলেজছাত্রী মেয়েটির বাড়ির যাতায়াতের পথে রাস্তা আটকে দিত এক ছেলে। আজেবাজে কথা বলে উত্ত্যক্ত করত। ছেলেটির পরিবারের কাছে অভিযোগ জানিয়ে কোনো উপকার তো হয়নি, উল্টো তারা দোষারোপ করে মেয়েকে। দিন দিন ছেলেটির অত্যাচার বেড়ে যায়। উপায় না দেখে মেয়েটির পরিবার থানায় গিয়ে জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে ছেলেটির ছয় মাসের জেল হয়। তাতেও দুশ্চিন্তা কমে না মেয়েটির পরিবারের। ছয় মাস পর যদি আক্রোশ বাড়ে, কোনো ক্ষতি করে। তাহলে কী মেয়েকে অন্য শহরে পাঠিয়ে দেবে। দুশ্চিন্তা বেড়েই চলে, কমবে কীভাবে?

গত মাসের শেষ সপ্তাহের তিনটি ঘটনা দেখলেই বোঝা যাবে কেন পরিবারগুলোতে এত দুশ্চিন্তা। ২৮ আগস্ট পাবনা পৌর সদরের রাধানগর এলাকার পাওয়ার হাউসপাড়ায় সুবর্ণা নদী (৩২) নামের এক সাংবাদিককে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। সুবর্ণা নদী বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আনন্দ টিভি ও দৈনিক জাগ্রত বাংলা পত্রিকার পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। তিনি ওই এলাকায় একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। মঙ্গলবার কাজ শেষে রাত ১০টার দিকে তিনি বাড়ি ফিরছিলেন। বাড়ির নিচে পৌঁছালে তিন থেকে চারজনের একদল দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে করে এসে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায়। চিৎকার শুনে প্রতিবেশী ও স্বজনেরা তাঁকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সাড়ে ১০টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুবর্ণাকে মৃত ঘোষণা করেন। (সূত্র: ২৯ আগস্ট, প্রথম আলো)

সৎবোনের বাসায় এসেছিলেন এক মেয়ে। সেই বোনের সহযোগিতায় চার যুবক দ্বারা গণধর্ষণের শিকার হন। পরদিন রক্তাক্ত অবস্থায় একজন যুবক তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে রেখে যান। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৭ আগস্ট)।

৩১ আগস্ট টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্ব প্রান্তের বাসস্ট্যান্ডে পরিবহনশ্রমিক কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন একজন প্রতিবন্ধী নারী। ওই নারী টাঙ্গাইল নতুন বাসটার্মিনাল থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুগামী বাসটিতে ওঠেন। পথে বিভিন্ন স্থানে অন্য সব যাত্রী নেমে যান। সেতুর পূর্ব প্রান্তের বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছার পর ওই নারীকে একা পেয়ে চালক আলম খন্দকার ধর্ষণ করেন। এ সময় নাজমুল বাসের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে পাহারা দেন। (সূত্র: ১ সেপ্টেম্বর, প্রথম আলো)

একই সপ্তাহে যখন এমন একাধিক নির্মম ঘটনা ঘটে, তখন বুঝতে হবে এ দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা নারীর জন্য কতটা নাজুক। বাসে-ট্রেনে কোথাও নির্বিঘ্নে একা চলতে পারে না। একজন নারী বলছিলেন, সকালবেলা মিরপুর থেকে বাসে মোহাম্মদপুর আসছিলেন, হঠাৎ খেয়াল করলেন বাসে আর কোনো যাত্রী নেই। ভয় পেয়ে যান। সঙ্গে সঙ্গে বাস থামিয়ে নেমে যান তিনি।

কর্মজীবী নারীরা অফিস শেষে দিনের পর দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকেন বাসে ওঠার জন্য। বাস মিললেও ওঠার সময় বাসের সহকারীর কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হতে হয়। অনেকে ভাবেন, অশ্লীল কথা শুনে মুখ বুজে সহ্য করলে হয়তো নিস্তার মিলবে। রেহাই হচ্ছে না তাতেও। একা পেলে রূপার মতো জীবন দিতে হচ্ছে। বেগম রোকেয়া শত বছর আগে সুলতানার স্বপ্ন বইয়ে নারীস্থানের কথা বলেছিলেন। যেখানে নির্বিঘ্নে মেয়েরা ঘুরে বেড়াবে। এক শ বছর পরেও নারীরা যদি নিরাপদে চলতে না পারে, তবে সে দায় কার? নারী উন্নয়ন নিয়ে চারদিকে কত উদ্যোগ, কিন্তু যে মেয়েটি বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজের এবং পরিবারের উন্নয়নের জন্য কর্মক্ষেত্রে যায় আর ফিরে আসে ধর্ষণের শিকার হয়ে কিংবা লাশ হয়ে তার পরিবারের কাছে—এসব উন্নয়নই যে বৃথা! কোথায় সমস্যা? কেন পারছি না?

আইনের সঠিক প্রয়োগ হলে রাষ্ট্র, সমাজ ও সর্বোপরি মানুষের মন–মানসিকতার পরিবর্তন হলে নিশ্চয় মেয়েরা নিরাপদে চলাচল করতে পারবে। নারীর নিরাপত্তার দাবি শুধু নারীর দাবি না হয়ে পুরুষের দাবিও হতে হবে। কবীর সুমনের সেই গানের মতো বলতে ইচ্ছে করছে—

‘এমন দিন কি আসবে, হবে না ধর্ষণ একটাও

আমার শহর কুণ্ঠিত বড়, ক্ষমা করো তুমি মেয়ে

পুরুষ বলেই গাইছি এ গান শুধু মার্জনা চেয়ে।...’