Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্রিকেটারদের জীবনদর্শন

ক্রিস গেইল

বিপিএল মানেই তারকার হাট। দেশি-বিদেশি তারকা ক্রিকেটারদের এ সমাবেশে শুধু ক্রীড়াশৈলীই দেখা যায় না, জানা যায় তাঁদের জীবনদর্শন সম্পর্কেও। এবারের বিপিএলে অংশগ্রহণকারী চারজনের জীবনদর্শনের কথা জানা যাক এখানে।

গেইল জীবনকে দেখেন অন্য চোখ
নিজেকে তিনি অনেক আগেই ঘোষণা করেছেন ‘ইউনিভার্স বস’ হিসেবে। ক্রিস গেইলের উপস্থিতি আলাদা রং ছড়াবেই। জীবনটা যেমন উপভোগ করেন তারিয়ে তারিয়ে, তেমনি বিনোদিত করেন সবাইকে। ক্যারিবীয়রা আমুদে হয় বলেই শুধু নয়, গেইল জীবনটাই দেখেন অন্য চোখে। কিন্তু সবাই তো এভাবে উপভোগ করতে পারেন না।

এবার বঙ্গবন্ধু বিপিএল খেলতে এসে গেইল জানালেন জীবন উপভোগের রহস্যটা, ‘অস্ট্রেলিয়ায় আমার হার্ট সার্জারি হয়েছিল, সেটাই আমার জীবনের প্রথম অস্ত্রোপচার। যখন আমার জ্ঞান ফিরল, সিদ্ধান্ত নিলাম যেভাবে সবচেয়ে ভালোভাবে বেঁচে থাকা যায় সেটাই করব, কখনোই পেছনে তাকাব না। তখন থেকে নানা কর্মকাণ্ডে এবং চারপাশে কী ঘটছে, তা নিয়ে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। আমি সব সময়ই চেষ্টা করি সর্বোচ্চ উপভোগ করার। দীর্ঘদিন ভালো সময়ের মধ্যে থাকতে পারছি এ কারণে।’

হাশিম আমলা

পরিশ্রমই আমলার সাফল্যের রহস্য
প্রথমবারের মতো এবার বিপিএল খেলতে এসেছেন হাশিম আমলা। গত বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানানো সাবেক এ দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ২২ গজে যেমন মুগ্ধ করেন, মুগ্ধতা ছড়ায় তাঁর জীবনাচরণও। ভীষণ বিনয়ী, মিষ্টভাষী, নিপাট ভদ্রলোকের আদর্শ উদাহরণ। প্রায় ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময়ই ছিলেন আশ্চর্য ধারাবাহিক। আমলার কাছে ভীষণ চাপের মধ্যে ধারাবাহিক সাফল্য পাওয়ার মন্ত্রটা হচ্ছে, ‘সাফল্যের কোনো শর্টকাট নেই। আপনাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। প্রচুর সময় আর শক্তি নিয়ে অনুশীলন করে যেতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করলে আপনি ফল পাবেনই।’

লিটন দাস

লিটনের ভাবনা এখন অনেক পরিণত
স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে এবার দুর্দান্ত খেলছেন লিটন দাস। বাংলাদেশ দলের ওপেনার টুর্নামেন্টে যেভাবে ধারাবাহিক ভালো খেলছেন, আগের বিপিএলে সেটি কমই দেখা গেছে। তাঁর প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন নেই, প্রশ্ন নেই তাঁর ক্রিকেটীয় দক্ষতা নিয়েও। সমস্যা ছিল ধারাবাহিকতার। সেই লিটন এবার কী দারুণ ধারাবাহিক!

এই যে বদলে যাওয়া, এটির পেছনে তিনি কিছু ব্যাটিং কৌশল বদলের কথা বলেছেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কারণটা সামনে এনেছেন, সেটি হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন। লিটন বলছেন, তিনি আগের চেয়ে অনেক পরিণত, যেটি এসেছে তাঁর দাম্পত্য জীবন শুরুর পর। গত জুলাইয়ে লিটন বিয়ে করেছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর দেবশ্রী সঞ্চিতা বিশ্বাসকে।

দাম্পত্য জীবন কীভাবে মানসিকভাবে তাঁকে স্থিতিশীলতা দিয়েছে, আরও পরিণত করেছে, সেটি লিটন খুলেই বলেছেন, ‘খুব কম বয়সে বিয়ে করে ফেলেছি। বিয়েটাই আমাকে আরও পরিণত করেছে। দুটো কথা বলি, ২০১৬-১৭ সালে যখন খারাপ খেলেছি, তখন আমার পরিণতবোধ অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। (ক্যারিয়ারে) কখনো খুব একটা ছন্দ হারায়নি। ওই সময় জীবনে অনেক কিছু শিখেছি। ওখানে পরিণতবোধ বেড়েছে। বিয়ের পর আরেকটু বেড়েছে। জানি না কীভাবে বেড়েছে। সেটা মাঠে হোক কিংবা মাঠের বাইরে, সবকিছুতেই বেড়েছে।’

আনজুম চোপড়া

খেলা ও পড়াশোনায় আনজুমের ভারসাম্য
মাঠের বাইরে বিপিএলের ধারাভাষ্যকক্ষেও এবার বেশ কজন সাবেক তারকা ক্রিকেটারের দেখা মিলেছে। এঁদের মধ্যে যাঁর উপস্থিতি আলাদা নজর কেড়েছে—আনজুম চোপড়া। শুধু ভারতে নয়, তিনি পুরো বিশ্বেই নারী ক্রিকেটের অনেক বড় নাম। কদিন আগে পেয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের আজীবন সম্মাননা পুরস্কার।

দিল্লির ক্রীড়াঘনিষ্ঠ এক পরিবারে তাঁর বেড়ে ওঠা বলেই যে তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার পথটা খুব মসৃণ ছিল, তা নয়। পরিবার থেকে চাপ ছিল, ক্রিকেটার হতে বাধা নেই কিন্তু সমানতালে পড়াশোনাটাও চালিয়ে যেতে হবে। আনজুম এই চ্যালেঞ্জে সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়ে গেছেন। ভারতের হয়ে ১২ টেস্ট, ১২৭ ওয়ানডে ও ১৮ টি-টোয়েন্টি খেলা এ বাঁহাতি ব্যাটার ক্রিকেটে শুধু দুর্দান্ত নন, পড়াশোনাতেও অসাধারণ।

পড়েছেন বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক সেরেছেন দিল্লি পাবলিক স্কুল আরকে পুরামে আর সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে। দিল্লির ফোর স্কুল অব ম্যানেজমেন্টে করেছেন দুই বছর মেয়াদি নিয়মিত এমবিএ।

একদিকে ক্রিকেট নিয়ে ভীষণ ব্যস্ততা, অন্য দিকে সমান গতিতে পড়াশোনা—দুটি কীভাবে সামলেছেন? মিষ্টি হেসে আনজুম বললেন, ‘পরিবারের সবাই চেয়েছে পড়াশোনাটাও যেন ভালোভাবে করি। তাই পড়াশোনা অবহেলা করতে পারেনি, পরীক্ষা খুব একটা হাতছাড়া করিনি। হ্যাঁ, পরিবারের সমর্থন অনেক পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। তবে বলব না সব সহজ ছিল। আপনাকে দুটোতেই ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। যদি পারেন, তাহলে বিষয়টা সহজ।’