Thank you for trying Sticky AMP!!

ক্রিকেটের আনজুম চোপড়া

আনজুম চোপড়া। ছবি: প্রথম আলো

কখনো তিনি মাঠে খেলোয়াড়-কোচ-কর্মকর্তাদের সাক্ষাৎকার নিতে ব্যস্ত, কখনো ব্যস্ত ধারাভাষ্যকক্ষে। বঙ্গবন্ধু বিপিএলে আনজুম চোপড়ার উপস্থিতি আলাদাভাবে নজর কেড়েছে। আনজুম চোপড়া ভারতের প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পেয়েছেন। নারী ক্রিকেটে তিনিই প্রথম অধিনায়ক, যিনি বিদেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছেন। তাঁর অধীনে ২০০২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল ভারতীয় নারী দল।

এখানেই শেষ নয়, ভারতের হয়ে প্রথম নারী ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ ওয়ানডে খেলেছেন আনজুম। ভারতীয় নারী ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (ছয়টি) আইসিসির টুর্নামেন্ট খেলেছেন তিনি। আরেকটি পরিচয়, আনজুম প্রথম নারী ক্রিকেটার, যিনি ছেলেদের ম্যাচে ধারাবাহিক ধারাভাষ্য দিয়েছেন, এখনো দিচ্ছেন।

সম্প্রতি বাংলাদেশের মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের ধারাভাষ্যকক্ষে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপচারিতায় আনজুম আগাম জানিয়ে দিলেন, এবার ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বার্ষিক পুরস্কার অনুষ্ঠানে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের (১৯৮৩ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য ও সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক) সঙ্গে তাঁকেও আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেওয়ার খবর। 

 দিল্লির মেয়ে আনজুম। বাবা গলফার, চাচা পেশাদার ক্রিকেটার ছিলেন। ভাইও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেছেন। আনজুম জানালেন, পরিবারে খেলাধুলার চর্চা ছিল বলেই যে তাঁর ক্রিকেটার হওয়ার পথটা খুব মসৃণ ছিল, তা নয়। পরিবার থেকে ক্রিকেটার হতে বাধা নেই, কিন্তু সমানতালে পড়াশোনাটাও চালিয়ে যেতে হবে। আনজুম এই চ্যালেঞ্জও সাফল্যের সঙ্গে পেরিয়ে গেছেন। ১২ টেস্ট, ১২৭ ওয়ানডে ও ১৮ টি-টোয়েন্টি খেলা এ বাঁহাতি ক্রিকেটার শুধু দুর্দান্ত নন, পড়াশোনাতেও অসাধারণ। মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক সেরেছেন দিল্লি পাবলিক স্কুল আরকে পুরামে আর সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে। দিল্লির ফোর স্কুল অব ম্যানেজমেন্টে করেছেন দুই বছর মেয়াদি নিয়মিত এমবিএ।

 ক্রিকেট ও পড়াশোনা—দুটি কীভাবে সামলেছেন? উজ্জ্বল আভা ছড়িয়ে পড়ে আনজুমের সাফল্যমাখা মুখটায়। বললেন, ‘আমি বিষয়টি দেখেছি এভাবে—আজ খেলা, খেলতে হবে। কাল পরীক্ষা, পড়তে হবে। শুধু স্রোতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভালোভাবে সামনে এগিয়ে গেছি।’ 

আনজুম বলছেন, পরিবারের সমর্থনটা বেশি সহায়তা করেছে তাঁকে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যেতে। 

আনজুম ভালোই খোঁজখবর রাখেন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের। সালমা-রুমানারা যে কদিন আগে সাফ গেমসে সোনা জিতেছেন, সেটি অজানা নয় তাঁর। আগামী মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত নারীদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেমন সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশ দলের—এ প্রশ্নের উত্তরে আনজুম বলছেন, ‘এটা অনেক কিছুর ওপর নির্ভর করছে, নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা কেমন খেলেন, সেটাই দেখার বিষয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওঁরা ভালো করতে পারেননি। অস্ট্রেলিয়ায় ভিন্ন একটা টুর্নামেন্ট। আমি এখনই মন্তব্য করতে চাই না। তবে সামগ্রিক চিত্রটা হচ্ছে, তাঁরা শিখছেন। ভারত-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এখনই তুলনা করতে পারবেন না। বাংলাদেশের মেয়েরা খুব বেশি দিন হলো শুরু করেননি। বিসিবি নিশ্চয়ই এখন ভালো সুযোগ দিচ্ছে। খেলতে খেলতে শিখবেন।’ 

 পুরুষ ধারাভাষ্যকারদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধারাভাষ্যকক্ষেও নিজেকে দারুণভাবে চিনিয়েছেন আনজুম। মাইক্রোফোন হাতে বাংলাদেশের মেয়েদের সম্ভাবনা কেমন দেখেন সাবেক এ ভারতীয় অধিনায়ক? আনজুম বললেন, ‘সত্যি বলতে, বাংলাদেশে ছেলেদের ক্রিকেটই এত দিনে একটা পর্যায়ে এসেছে। এটা সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশ নারী দলের ইতিহাস ২০ থেকে ৩০ বছরও হয়নি। এখন হয়তো কেউ নেই (নারী ধারাভাষ্যকার)। ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই কেউ না কেউ আসবেন।’

প্রথমবারের মতো বিপিএলে এলেন, টুর্নামেন্টের প্রথম নারী ধারাভাষ্যকার হিসেবে নিয়মিত ধারাভাষ্য দিলেন—সময়টা বেশ উপভোগ করছেন। অবশ্য মাঠ-হোটেল করেই সময় কেটেছে আনুজমের। খানিকটা রসিকতার সুরে বললেন, কেউ তাঁকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায়নি, বাংলাদেশি খাবারের সঙ্গে ঠিকঠাক পরিচয় করিয়ে দেয়নি। তবে আনজুম আশাবাদী, সামনে যদি আবার আসেন, নিশ্চয়ই বাংলাদেশ সফরটা হবে আরও উপভোগ্য।