Thank you for trying Sticky AMP!!

খেলার মতো পড়া

মুরাদুল মবিন, ছবি: সুমন ইউসুফ

ছেলেটির নাম মুরাদুল মবিন। ডাকনাম নিবির। তাঁর কাছে আমাদের প্রথম প্রশ্ন, ‘এই যে ১৬ হাজার ৪৪০ জন পরীক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে ডেন্টাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেন, নিশ্চয়ই অনেক পড়ালেখা করতে হয়েছে?’

‘তা তো হয়েছেই। কখনো কখনো পড়তে পড়তে ভোর হয়ে যেত।’

‘বলেন কী? সারা রাত পড়তেন?’ একটু বিস্মিতই হই।

‘হ্যাঁ, সারা রাত পড়তাম। তবে পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার জন্য নয়। ভোরবেলা ফুটবল খেলার জন্য।’ একগাল হেসে মবিন বলেন, ‘ভোরবেলা ফুটবল খেলার মজাই আলাদা।’

এ কথা শুনে যদি ভাবেন ছেলেবেলায় তাঁর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন ছিল, ভুল হবে। স্বপ্ন প্রসঙ্গে তিনি বেশ লম্বা একটা বক্তৃতা দিয়ে ফেললেন, ‘একেক সময় একেক স্বপ্ন দেখতাম। ছোটবেলায় যখন বাসে চেপে কোথাও যেতাম, তখন মনে হতো বড় হলে ড্রাইভার হব। কারণ বাসের সামনে থেকে রাস্তার দুই পাশ দেখতে খুব ভালো লাগত। আবার কিছুদিন আগে মেসের পাশের চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে মনে হচ্ছিল, ভর্তি পরীক্ষায় যদি কোথাও চান্স না পাই, তাহলে একটা গোলাপি রঙের চায়ের দোকান দেব। আবার যখন স্কুলে পড়তাম, তখন মনে হতো, বড় হলে ইংরেজি স্যারের মতো ভালো মানুষ হব।’

পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছেন, অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ–৫ পেয়েছেন, মাধ্যমিকে গাইবান্ধা সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় থেকে জিপিএ–৫ পেয়েছেন আর উচ্চমাধ্যমিকেও নটর ডেম কলেজ থেকে পেয়েছেন জিপিএ–৫। ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছেন প্রথম। এ ছাড়া মেধাতালিকায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি শুধু ফুটবল মাঠে আর পড়ার টেবিলে জীবনটাকে বেঁধে ফেলেননি। মবিন ছবি আঁকেন, বিতর্ক করেন, গান শোনেন আর প্রচুর বই পড়েন। হুমায়ূন আহমেদের প্রায় সব বই তিনি পড়ে ফেলেছেন। ‘এই তো ভর্তি পরীক্ষার মধ্যেই পড়ে ফেললাম আহমদ ছফার পুষ্প, বৃক্ষ, বিহঙ্গ পুরাণ। দারুণ লেগেছে বইটা।’ বলছিলেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার কুখাতাইড় গ্রামে জন্ম নেওয়া এই তরুণ। বাবা আবদুর রউফ একজন দলিল লেখক আর মা মোরশেদা শবনম গৃহিণী। পরিবারে আছে আর একজন—ছোট ভাই নবীন।

পরিবারের প্রসঙ্গ ওঠায় আমরা জানতে চাই, আমাদের দেশে সাধারণত পরিবার থেকেই ছেলেমেয়েদের স্বপ্ন ঠিক করে দেওয়া হয়। আপনার ক্ষেত্রেও কি তা-ই হয়েছে?

‘ঠিক সে রকম নয়।’ মবিন বলেন, ‘আমার ওপর কেউ কখনো স্বপ্ন চাপিয়ে দেননি। তবে বুঝতাম, বাবা–মায়ের মনে সুপ্ত ইচ্ছা, আমি যেন ডাক্তার হই। তাদের সেই ইচ্ছা একসময় আমার মধ্যেও সংক্রমিত হয়। এখন স্বপ্নটা পূরণ হতে যাচ্ছে দেখে ভালো লাগছে। ‘

আমরা সঙ্গে সঙ্গে সম্পূরক প্রশ্ন করি, ‘ভবিষ্যতে এই স্বপ্নেই থিতু হতে চান, নাকি আবারও ড্রাইভার, চায়ের দোকানি, ইংরেজি স্যার...?’

‘না না, এখন স্বপ্ন দেখি নতুন কিছু করার। ভবিষ্যতে হয়তো উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যাব। তবে পেশা হিসেবে যা-ই করি না কেন, এমন কিছু করতে চাই—যার মধ্যে অভিনবত্ব থাকবে।’ বেশ দৃঢ়তার সঙ্গেই কথাগুলো বললেন মবিন।