Thank you for trying Sticky AMP!!

খেলা-পড়ায় উচ্ছল

একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্ন নিয়ে পড়ছেন এই তরুণেরা। ছবি: খালেদ সরকার

ঝুম বৃষ্টি নেমেছে। কাদা-পানির তোয়াক্কা না করে জমে উঠেছে ফুটবল ম্যাচটাও। যেন বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে খেলছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা! সমর্থকদের উৎসাহের কমতি নেই। ছাতা মাথায়, সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে করে অনেকেই ততক্ষণে গলা ভেঙে ফেলেছেন। ওদিকে বৃষ্টির ঝাপটা থেকে ক্যামেরা বাঁচিয়ে ছবি তোলার জন্য জুতসই জায়গা খুঁজছিলেন আলোকচিত্রী খালেদ সরকার। বিধি বাম। ক্লিক করার আগেই শেষ বাঁশি বেজে গেল।

ঝড়-বৃষ্টি মাথায় করে আমরা সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়-ক্যাম্পাসে পা রেখেছিলাম ২১ আগস্ট। বৈরী আবহাওয়ায় এমন ‘অভ্যর্থনা’ সত্যিই আশা করিনি। একে তো বৃষ্টি, তার ওপর ফুটবল টুর্নামেন্ট—সব মিলিয়ে সেদিন একটু ঢিলেঢালা ক্লাস চলছিল। এর মধ্যেই ঘুরে দেখা হলো বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। কথা হলো শিক্ষার্থীদের সঙ্গে।

ড. মো. দেলওয়ার হোসেন


বয়স হলো আঠারো
গত মাসেই গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স আঠারো বছর পূর্ণ হলো। কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ এবং ভৌত ও গাণিতিক বিজ্ঞান অনুষদের আওতায় এখানে আঠারোটি বিভাগে পড়ার সুযোগ রয়েছে। গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজ ও গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক ডেন্টাল কলেজও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার।
‘অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমরা একটু অন্য রকম।’ আলাপের শুরুতেই দাবি করলেন গণবিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন। কারণটা তিনিই ভেঙে বললেন, ‘অন্যান্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের এখানে খরচ কম। নানা রকম বৃত্তির সুবিধা আছে। ক্লাসে ৯০ ভাগ উপস্থিতি থাকলে অথবা ছাত্রীরা খেলাধুলায় অংশ নিলে শতকরা ২৫ ভাগ টিউশন ফি মওকুফ করা হয়। যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রতিবছর একটা বড় সংখ্যক দরিদ্র শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে পড়ার সুযোগ দেওয়া হয়।’

মেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পাঠাগার

পড়ার আছে কত কী

বিষয়-বৈচিত্র্যের দিক থেকে বেশ সমৃদ্ধ গণ বিশ্ববিদ্যালয়। একই ছাদের নিচে ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্ন নিয়ে এক হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা তরুণেরা। একদিকে অ্যাপ্রোন গায়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসছেন হবু ডাক্তারের দল, পাশেই হয়তো ইলেকট্রনিক ল্যাবে কাজে মগ্ন প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

মেডিকেল ফিজিকস অ্যান্ড বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ নিয়ে গর্বের কথা বলছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবাই। কারণটা বোঝা গেল বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক হাসিন অনুপমা আজহারীর সঙ্গে কথা বলে। বলছিলেন, ‘এই বিষয়টা একমাত্র আমাদের এখানেই চালু আছে।’ বিষয়টির গুরুত্বও বুঝিয়ে বললেন, ‘বড় বড় হাসপাতালের রেডিওথেরাপি বিভাগে আমাদের শিক্ষার্থীরা কাজ করছে। জার্মানের হাইডেলবার্গ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে আমরা কাজ করছি। শিক্ষার্থীরা এই বিভাগ থেকে বৃত্তি পাচ্ছেন।’

‘অন্য রকম’ হয়ে ওঠার আরও কিছু কারণ শোনা হলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। মো. রাসেল রানা, কাওছার আহমেদ, ফেরদৌস সালমান, মোমতাহিনা নওরিন, ইসরাত জাহান ও দীপান্বিতা অধিকারী—একেকজন দেশের একেক প্রান্ত থেকে এসে গণস্বাস্থ্য সমাজভিত্তিক মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছেন। প্রথম বর্ষে পড়ছেন। জানালেন, ভর্তির পর প্রথমেই শিক্ষার্থীদের সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। হবু চিকিৎসকদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা স্লোগানও আছে, ‘গ্রামে চলো, গ্রাম গড়ো।’ ইসরাত বলছিলেন, ‘শুরুতেই আমরা দুই মাসের জন্য গ্রামে গিয়ে থেকেছি। দরিদ্র মানুষের সঙ্গে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কথা বলেছি। পাস করার আগে এভাবে মোট চার দফায় গ্রামে গিয়ে থাকতে হবে।’

ক্যাম্পাসের মাঠে চলছে মেয়েদের ফুটবল ম্যাচ। ছবি: সংগৃহীত


ক্যাম্পাসজুড়ে ফুটবলের উন্মাদনা

গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ আছে। রীতিমতো গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচিত হন ছাত্র সংসদের সদস্যরা। তারাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে শিক্ষার্থীদের নানা রকম দাবিদাওয়া তুলে ধরেন। ‘গাইড’ হিসেবে আমাদের ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন ছাত্র সংসদের ক্রীড়া সম্পাদক জোবায়েরুল ইসলাম।

‘আপনাদের ক্যাম্পাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় আয়োজন কোনটি?’ জানতে চেয়েছিলাম জোবায়েরের কাছে। বললেন, ‘সারা বছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, পিঠা উৎসব—নানা কিছুই হয়। তবে এই ফুটবল টুর্নামেন্টটাই এখানে সবচেয়ে জনপ্রিয়।’ জোবায়েরের কথায় সমর্থন দিতেই বোধ হয়, ঠিক এই সময় খেলার মাঠ থেকে উল্লাসধ্বনি শোনা গেল। ঘটনা কী? ছেলেদের সেমিফাইনালে রাজনীতি ও প্রশাসন বিভাগের বিপরীতে জিতে গেছে ইংরেজি বিভাগ। ‘ইংলিশ! ইংলিশ!’ স্লোগান দিয়ে জয়ী দলের সমর্থকেরা মিছিল শুরু করলেন।

মিছিলের পাশ কাটিয়ে আমরা গেলাম আইন বিভাগের নারী ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলতে। সকালে বৃষ্টিস্নাত ম্যাচে ৩-০ গোলে তারাই জয়ী হয়েছেন।‘আপনাদের দলে সবচেয়ে ভালো খেলেন কে?’ প্রশ্ন করতেই ডাকাডাকি শুরু হয়ে গেল, ‘লাবণী আপু! লাবণী আপু কই?’ সতীর্থরা রীতিমতো ধরে বেঁধে নিয়ে এলেন লাবণী সরকারকে। লাবণী জানালেন, ‘আমি জাতীয় ফুটবল দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। বাসা থেকে যেতে দেয়নি। পরে এখানে ভর্তি হয়ে দেখি মেয়েদের ফুটবল খেলায় ভীষণ উৎসাহিত করা হয়। মনে মনে বললাম, এমন একটা ভার্সিটিই তো খুঁজছিলাম!’ ব্যস, সেই থেকে তিনি ক্যাম্পাসের মেসি হয়ে গেছেন!