Thank you for trying Sticky AMP!!

গেমিংয়ে আগ্রহ থেকে উদ্যোগের ভাবনা

ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন শেখ সোহেল। ছবি: সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকে গেমের প্রতি ভীষণ আগ্রহ ছিল শেখ সোহেলের। ক্লাসের সবাই যখন পাঠ্যবইয়ের পাতায় ক্যারিয়ারের দিকনির্দেশনা খুঁজতে ব্যস্ত থাকত, সোহেলের মাথায় ঘুরত গেম তৈরির স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন থেকেই একটি ‘আইডিয়া’র জন্ম, আইডিয়া থেকে উদ্যোগ। ‘স্টুডিও থান্ডারবোল্ট’ নামে একটি স্টার্টআপের আইডিয়া বা ধারণা দিয়ে পুরস্কার জিতেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের এই ছাত্র। ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’ নামের এই প্রতিযোগিতার অন্যতম বিজয়ী হয়ে অনুদান হিসেবে সোহেল পাচ্ছেন ১০ লাখ টাকা।

রকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের আইডিয়া (ইনোভেশন ডিজাইন অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ একাডেমি) প্রকল্পের আওতায় দেশব্যাপী আয়োজিত হয়েছে ‘স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ’। এই আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাঁদের উদ্ভাবনী ভাবনা উপস্থাপন করার সুযোগ পেয়েছেন। নির্বাচিত কয়েকটি উদ্যোগকে অর্থায়নের ব্যবস্থা করবে স্টার্টআপ বাংলাদেশ-আইডিয়া প্রকল্প। পুরো আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত আছে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) এবং সহযোগিতা করেছে ইয়ং বাংলা।

সোহেলের সঙ্গে কথা হচ্ছিল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে। পুরস্কারপ্রাপ্তির পেছনের গল্প বলছিলেন তিনি। গেম নিয়ে একটা কিছু করার ইচ্ছে তো ছিলই, এ সময় সোহেল পাশে পান তাঁর সহপাঠী মেজবাহ উর রহমান এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খালিদ মোরশেদকে। তাঁদের যাত্রা শুরু হয় অ্যান্ড্রয়েড গেম তৈরির মাধ্যমে। প্রথম প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার আগেই অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে পরিবর্তন আসে, সে যাত্রায় ব্যর্থ হন তাঁরা। সিদ্ধান্ত নেন, এরপর আরও বড় পরিসরে কাজে নামবেন।

সোহেল বলেন, বাংলাদেশে নির্দিষ্ট ক্যারিয়ারগুলোর বাইরে স্বাধীনভাবে একদম নতুন কিছু করতে চাইলে অনেক রকম বাধার মুখোমুখি হতে হয়। এ ক্ষেত্রে তাঁদের শক্তি ছিল প্রবল ইচ্ছা আর একটি করে কম্পিউটার। পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় বড় ভূমিকা রেখেছে। এ বছরের শুরুর দিকে তাঁরা খবর পান, স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ ক্যাম্প–১–এর প্রথম পর্ব আয়োজিত হচ্ছে তাঁদেরই বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু দলের আরেক সদস্য রুয়েটের খালিদ মোরশেদের পক্ষে রাজশাহী থেকে খুলনায় এসে ক্যাম্পের প্রথম ধাপে অংশ নেওয়া সম্ভব ছিল না। এই সময়ে তাঁদের সঙ্গী হন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র মাহফুজুল ওয়াহিদ। মাহফুজুল বলেন, ‘সোহেল ভাই আর মেজবাহ ভাইয়ের ছিল কোডিংয়ের দক্ষতা। আমি চেষ্টা করেছি আমার থ্রিডি মডেলিং করার দক্ষতা দিয়ে তাঁদের সহায়তা করার।’ তাঁরা তিনজন মিলে উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর জন্য একটি বিশেষ ধরনের ইন্টারেকটিভ গেমের ধারণা।

সোহেল বলেন, ‘আমাদের আইডিয়া ছিল এমন একটি গেম নিয়ে, যা ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি কাজে লাগিয়ে সেনাবাহিনীকে ঝুঁকিপূর্ণ সময়ের প্রশিক্ষণ দিতে সহায়তা করবে। গেমটি বিভিন্ন আপৎকালীন পরিস্থিতির ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্ম তৈরির মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে অভিজ্ঞতা অর্জনে সহযোগিতা করবে।’

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ ক্যাম্প–১–এর প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ২৪ ও ২৫ মার্চ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে। প্রথম পর্বের পর টিম থান্ডারবোল্ট জায়গা করে নেয় সেরা ১২০টি দলের মধ্যে। স্টুডেন্ট টু স্টার্টআপ ক্যাম্প–১–এর চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ১৩ থেকে ১৬ মে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় যুব উন্নয়ন ইনস্টিটিউটে। কিন্তু এখানেও বাধার সম্মুখীন হতে হয় টিম থান্ডারবোল্টকে। দলের অন্যতম সহযোগী মাহফুজুল ওয়াহিদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আরেক সহযোগী মেজবাহ উর রহমানও পড়াশোনার জন্য মূল ক্যাম্পে থাকতে পারেননি। তাই বলে তো পিছিয়ে যাওয়া চলে না। সোহেল একাই ফাইনালে অংশ নেন। শুরুতেই জায়গা করে নেন সেরা ৩০-এ। ১৬ মে চূড়ান্ত পর্বে জানা যায়, সেরা ১০ দলের মধ্যেও স্থান করে নিয়েছে টিম থান্ডারবোল্ট।

তরুণ উদ্যোক্তা সোহেল বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি বড় গেমিং ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করার স্বপ্ন আমার। প্রয়োজনে ছোট ছোট গেমিং স্টুডিওগুলোকে একত্র করে একটা বড় প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যায়। যেখানে তরুণেরা তাঁদের আইডিয়াগুলো নিয়ে কাজ করতে পারবেন। সৃষ্টি হবে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। সরকার এসব প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তরুণদের সহায়তা করার চেষ্টা করছে, এটা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। ভবিষ্যতে এমন আরও উদ্যোগ নেওয়া হলে তরুণেরা উৎসাহ পাবেন।’