Thank you for trying Sticky AMP!!

ঘিরে ধরল শিয়ালের পাল

অংলকরণ: তুলি

আব্বার মাছ ধরার ভীষণ শখ। বড়শি কিংবা জাল—যখন যেটাকে জুতসই মনে করেন, তখন তাই নিয়ে মাছ ধরতে যান। এই মাছ ধরার সরঞ্জামগুলো আবার পরম যত্ন করেও রাখেন। তাঁর অবসর সময় কাটেই এসব সরঞ্জাম পরিচর্যা করে। এই যেমন একদিন বড়শিগুলো ঠিক আছে কি না দেখলেন তো অন্য দিন দেখবেন জালে গাবজলের প্রলেপ ঠিকমতো দেওয়া আছে কি না!

বর্ষাকাল মাছ ধরার মোক্ষম সময়। এ সময় বেশি মাছ ধরা পড়ে। আব্বাও প্রায় প্রতিদিন মাছ ধরার জন্য ছোটেন। এমন ঘটনাও ঘটেছে, হঠাৎ বৃষ্টিতে খালে পানি বেড়েছে, আব্বা হাজির জাল নিয়ে, সারা রাত মাছ ধরছেন।

মৎস্য শিকারি আব্বার সম্পূর্ণ বিপরীত যেন আমি। মাছ ধরার প্রতি আমার আগ্রহ নেই বললেই চলে। তবে আগ্রহ না থাকলেও আব্বার সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম কয়েকবার। সেগুলো এখন সোনালি স্মৃতি, আছে রুদ্ধশ্বাস একটি মুহূর্তের অভিজ্ঞতা। সেটাই এখন বলছি।

আমার তখন চতুর্থ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা শেষ। রাতে খাওয়ার সময় আব্বা জানালেন, সকালে বাঁশগ্রামের জিকে ক্যানেলে মাছ ধরতে যাবেন। নতুন পানি এসেছে। যেহেতু মাছ ধরা তাঁর শখ, সেহেতু কোন সময় কোথায় মাছ ধরা পড়বে কিংবা পানি এসেছে তার সব খোঁজখবর রাখেন। রাতে বলেছিলাম, সকালে আপনার সঙ্গে মাছ ধরতে যাব। আব্বা ফজরের নামাজ শেষ করে আমাকে ডাক দিলেন। একটা মাঠ পেরিয়ে যেতে হবে। ভোরের আবছা আলোয় আব্বার হাত ধরে হেঁটে চলেছি ধানখেতের মোটা আইল ধরে। হালকা শীত শীত ভাব। আব্বা যেতে যেতে বললেন, ‘আমার কাছাকাছি থাকবে। ফাঁকা জায়গায় যেয়ো না, এখানে অনেক শিয়াল আছে।’

আব্বা খালের পানিতে জাল ফেলছেন। আমি খালুই (বাঁশের তৈরি মাছ রাখার পাত্র) ধরে রেখেছি। ক্যানেলের পাড় বেয়ে জাল ফেলতে ফেলতে আব্বা সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। আমি পেছন পেছন যাচ্ছি। জালে দু-একটা করে চিংড়ি, পুঁটি
মাছ ধরা পড়ছে, আমি মাছগুলো নেড়েচেড়ে দেখছি বারবার। একসময় আব্বা জাল ফেলতে কালীগঙ্গা নদীর শাখা খালের দিকে চলে গেলেন। আমার মাছের খেয়ালে আব্বার কথা আর মনে নেই।

হঠাৎ খেয়াল করি, চারপাশ থেকে আমাকে চার-পাঁচটি শিয়াল ঘিরে ধরেছে। প্রচণ্ডÐভয় পেয়ে ভড়কে গেলাম, কিংকর্তব্যবিমূঢ় বলা যায়। গলার সর্বোচ্চ জোর দিয়ে ‘আব্বা’, ‘আব্বা’ বলে ডাক দিলাম। এত জোরে আব্বাকে ডাকছি তবু আব্বা শুনছেন না। আমি ভয়ে কাঁপছি। আমি দূর থেকে আব্বাকে দেখছি, জালে কয়েকটা মাছ বেঁধেছে, সেগুলো দেওয়ার জন্য পেছনে ফিরে দেখেন আমি নেই। শিয়ালের জটলা দেখে আব্বা একটা লাঠি নিয়ে দ্রুত এসে শিয়ালগুলোকে তাড়িয়ে দিলেন। শিয়ালগুলো ধানখেতের ভেতরে চলে গেল। আমি আব্বাকে জড়িয়ে ধরে রাখলাম।

আব্বা বললেন, ‘তোমাকে তো বললাম এখানে অনেক শিয়াল আছে, আমার সঙ্গে সঙ্গে থাকবে। আর যখন শিয়ালগুলো কাছে এসেছে তখন আমাকে ডাকতে পারতে?’ আমি বললাম, ‘আমি তো আপনাকে ডেকেছি কিন্তু আপনি তো শোনেননি।’

আসল সত্যটা পরে বুঝতে পারলাম, সে সময় আমি এতটাই ভয় পেয়েছিলাম যে মুখ থেকে কোনো আওয়াজই বের হয়নি। রীতিমতো বাক্‌রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।

কোরবান আলী, কুষ্টিয়া।