Thank you for trying Sticky AMP!!

চা কিংবা চিতইয়ের রাত

অলংকরণ: তুলি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-সংলগ্ন গেরুয়া বাজার। এই বাজারের আশরাফ ভাইয়ের দোকান কখনো রাত একটায় বন্ধ হয়, আবার কখনো বন্ধ হতে হতে রাত দুইটা। এবারের শীতে তাঁর দোকান-লাগোয়া খোলা জায়গায় একটা পিঠার দোকান হয়েছে। সেটাও খোলা থাকে গভীর রাত পর্যন্ত। তাই রাতবিরাতে গরম ভাপা-চিতই পিঠা খেতে এখানে অনেকে আসে। যাদের বেশির ভাগই ছাত্র। তাদের কেউ হলে থাকে, কেউ এই গেরুয়া বাজারের মেসবাসী।

আশরাফ ভাইয়ের দোকান যখন বন্ধ হয় হয়, ঠিক তখনই আমি আসি। তবু তাঁর দোকানে যাওয়া হয় না। গিয়ে বসি পিঠার দোকানটায়। দু-একটা পিঠা খাই। পিঠা খেতে খেতেই দেখি আশরাফ ভাই দোকান গোছাচ্ছেন। দপ করে স্টোভ বন্ধ করে!

দ্রুত পিঠার দাম মিটিয়ে তাঁর দোকানে এসে দম ফেলি। কাঁচুমাচু মুখে বলি, ‘আশরাফ ভাই, চা কি বন্ধ করে দিলেন?’

: হ ভাই, আগে তো কইলেন না! চা খাইতে হবে না, তার চেয়ে কফি দেই, খান।

: আমি টুপ করে ফাঁকা বেঞ্চটাতে বসে পড়ি। কফি বানানোর লাল মেশিনটা থেকে কফি বানিয়ে দেন আশরাফ ভাই।

: কফিতে চুমুক দিই। আশরাফ ভাই দোকানের টিভিতে অকারণেই চ্যানেল বদলান। তারপর আমার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করেন, ‘(হল থেকে) আজও একা আসছেন?’

আমি হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ি।

: তা আর কিছু খান। দেই?

: না ভাই, কাছে এখন টাকা নেই।

: আপনাকে টাকা দিতে কইছে কে। পরে দিয়েন। কী দিমু? বার্গার দেই?

দোকানটায় বার্গার পাওয়া যায়, স্যান্ডউইচ পাওয়া যায়, এমনকি ওপরে ছোট্ট একটা কাজুবাদাম দেওয়া ছানার মিষ্টিও পাওয়া যায় কখনো। আমি বলি—

: না ভাই। অন্য কিছু দেন।

: নুডলস দিমু? কাপ নুডলস?

: স্টোভ বন্ধ! গরম পানি তো নাই, ঠান্ডা নুডলস কীভাবে খাব?

: আরে ভাই, সিস্টেম আছে। দাঁড়ান, দিতাছি বানায়া।

আশরাফ ভাই ‘সিস্টেমে’ কাপ নুডলস বানাতে বসেন। প্রথমে নুডলসের কাপ নিয়ে মুখ খোলেন, তারপর নুডলসগুলো কড়মড় করে ভেঙে নিয়ে ভেতরে থাকা ম্যাজিক মসলার ছোট্ট প্যাকেট খুলে মসলাগুলো ঢালেন কাপের ভেতর। তারপর দেন পানি।

এরপর তিনি কাপটা দোকানে থাকা ওভেনে ঢুকিয়ে আমার দিকে কালজয়ী একটা হাসি দিয়ে বলেন, ‘দেখছেন সিস্টেম? সিস্টেমে সবই হয়!’

আমি নুডলস নিয়ে পা বাড়াই, আশরাফ ভাইও দোকানের শাটারে টান দেন। সামনের একটা চুলায় দেখি নৈশপ্রহরী আগুন পোহানোর আয়োজন করেছেন। তঁার পাশে বসে আগুনের উত্তাপ নিই।

বুড়ো প্রহরী চুলোয় দলা পাকানো কাগজ ফেলেন, চেলাকাঠ দিয়ে উসকে দেন আগুন, ধীরে ধীরে আগুনের তেজ বাড়ে, আর আমার নুডলসের কাপ খালি হয়ে আসে। অনেক দিন থেকেই তাঁকে দেখি, মাঝেমধ্যে আগুনও পোহাই, কিন্তু কখনো তাঁর নাম জানা হয় না। তাঁকে কেন যেন পরিচিত মানুষ মনে হয়, এই মনে হয় বলেই পরিচিত হতে কারও নাম জানতে চাওয়া অস্বস্তি বোধ হয়।

হলে ফিরে যেতে যেতে ভাবি—এমন নিশুতি রাত আর বুঝি বেশি দিন পাব না। দিন কয়েক পর বাস্তবতার ছদ্মবেশে গ্রাস করে নেবে গভীর রাতের নিস্তব্ধতা।

আবদুল্লাহ মামুর

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার