Thank you for trying Sticky AMP!!

জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশির সাফল্য

নিজ কারখানায় ইয়াকুব আলী।

মো. ইয়াকুব আলী বেপারি ওরফে রানা দেশে থাকতে হতে চেয়েছিলেন ফুটবলার। তাঁর বাড়ি ঢাকার কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যায়। জাতীয় দলে খেলবেন, এটি ছিল তাঁর ছোটবেলার স্বপ্ন। ফুটবল খেলা শুরু করেও তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। ফুটবলজীবন শুরু হয়েছিল কালীগঞ্জ ফুটবল ক্লাব দিয়ে। পরে ঢাকার তৃতীয় বিভাগ পর্যন্ত খেলেছিলেন। ফুটবলার হিসেবে যখন চড়াই-উতরাই পেরুচ্ছেন, তখনই দেশে রাজনৈতিক হয়রানির শিকার ও পুলিশের তাড়া খেয়ে বাধ্য হন দেশ ছাড়তে।

ভাগ্যান্বেষণে তরুণ ইয়াকুব ১৯৮৭ সালে জাপানে আসেন। এখানে তখন বাবল ইকোনমির রেশ। সাইতামের মিসাতো অঞ্চলের একটি রাবার কারখানায় যোগ দেন তিনি। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতায় একসময় গোটা কারখানার দায়িত্ব পড়ে তার কাঁধে। এই কারখানায় কাজ করার জন্য তিনি দেশ থেকে আনেন কয়েকজন স্বজনকে। তাঁদের এবং আরও কিছু জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশিকে নিয়ে তিনি ওই কারখানাকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেন।

দীর্ঘ ২৩ বছর সেখানে কাজ করার পর ইয়াকুবের মনে হলো, নিজে কিছু করা যায় কি না। কিন্তু কারখানার মালিক তাঁকে ছাড়বেন না। অনেক বুঝিয়ে ইয়াকুব তাঁকে রাজি করলেন। নিজের সদ্য কেনা বাড়ির দুই কক্ষে শুরু করেন টি টি রাবার কোম্পানি লি. ও কাবোশিকি গাইশা (স্টক কোম্পানি) নামে নিজের প্রতিষ্ঠান। পাঁচ বছরে তা আরও বড় হয়েছে। জাপান-তাইওয়ান প্রভৃতি দেশ এ ধরনের ছোট ছোট কারখানার মাধ্যমেই শুরু করেছিল। এ রকম লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান দিয়েই তাদের শিল্পের বিকাশ হয়েছে। তিনি নিজে খাটেন, স্ত্রীও সহযোগিতা করেন। সঙ্গে কাজ করেন আরও তিন-চারজন।

জাপানি প্রতিষ্ঠানের মতোই ইয়াকুবের প্রতিষ্ঠান। কার্যাদেশ আসছে, কাজ হচ্ছে, মালামাল সরবরাহ হচ্ছে। রাবার দিয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র্র নানা জিনিস তৈরি করেন তিনি। সামান্য ছিপি থেকে বিমানের যন্ত্রাংশ পর্যন্ত। গুণগত মানে তার পণ্য মানোত্তীর্ণ। তাই কার্যাদেশ পেতে বেগ পেতে হয় না। এখন তাঁর স্বপ্ন এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান তিনি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করবেন। সেই চেষ্টাই তিনি করছেন।
এবারের গরমের ছুটিতে এক দিনের জন্যে গিয়েছিলাম চিবার এক নিভৃত উপশহরে। নান্দনিক জাপানে শহরে যে নাগরিক সুবিধা তার পাশাপাশি প্রকৃতির বিশালতা মিলিয়ে এক ছায়া সুনিবিড় আমেজ আছে শহরটিতে। জাপানপ্রবাসী স্নেহাস্পদ মঈনুল ইসলাম মিল্টনের কাছেই জানলাম পাশেই ইয়াকুব আলীর বাসা ও কারখানা। একজন বাংলাদেশির এই সাফল্যের কথা জানতে নিজ আগ্রহেই ছুটলাম। পরম মমতায় তিনি আমাদের বরণ করলেন। ঘুরে ঘুরে দেখালেন ছোট কারখানাটি। জানালেন প্রবাসজীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাত এবং এ রকম একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ইতিকথা।
ফুটবলার হবার আকাঙ্ক্ষার কথা দিয়ে শুরু হয় কথোপকথন। জাপানে এসে তাঁর সেই স্বপ্নেরও আংশিক পূরণ হয়েছে। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি মিসাতোতে অনুশীলন করতেন। মিসাতো সকার ক্লাবের সদস্য হয়ে জাপানের বিভিন্ন স্থানে খেলেছেন। এখন অবশ্য সব ছেড়ে-ছুড়ে ব্যস্ত নিজের কারখানা নিয়ে।


কাজী ইনসানুল হক
টোকিও, জাপান
<kaziensan@gmail.com>