Thank you for trying Sticky AMP!!

জয়িতা রুমা

রুমা খাতুন

তাঁর নাম রুমা খাতুন। বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার হেমনগর ইউনিয়নে। তিনি এখন হেমনগর ডিগ্রি কলেজে বিএ পড়ছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি হাস-মুরগি পালন, সবজি চাষসহ বিভিন্ন কাজ করেন। যা আয় হয় তা দিয়ে নিজের ও ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালান। পরিবারকেও সহায়তা করেন। তাঁর বাবা-মা ও স্বজনেরা রুমার কাজে দারুণ খুশি।
অথচ আট বছর আগেও রুমার জীবন এমন ছিল না। রুমা তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে পরিবারে সে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাবা-মা তাই সংসারের একজনের খরচ কমাতে রুমাকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। রুমার মতামতের কোনো পরোয়া করেনি কেউই। তাঁদের সিদ্ধান্ত রুমা মেনে নেবেন—এমনটা ধরে নিয়েই সবকিছু চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু বেঁকে বসেন রুমা। অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ের পর দুঃসহ সব ঘটনা রুমা তাঁর গ্রামেই দেখেছেন। বাবা-মাকে জানিয়ে দেন, বিয়ে তিনি কিছুতেই করবেন না। নানা ধরনের মানসিক নির্যাতন করা হয় রুমার ওপর। কিন্তু যখন কোনো কিছুতেই রুমাকে বিয়ের জন্য রাজি করানো যাচ্ছিল না, তখন তাঁরা মেয়ের পড়াশোনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রাজি করেন। রুমাকে কোনো খরচ দেবেন না বলে জানিয়ে দেন।
দমবার পাত্র অবশ্য রুমা নন। শুরু করেন হাঁস-মুরগি পালন। আর বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষ। এ ছাড়া স্কুল থেকে বৃত্তি পাচ্ছিলেন। কাজের পরিধিও বাড়িয়ে দেন তিনি। ধীরে ধীরে নিজের পড়াশোনাসহ অন্য খরচ তো বটেই ছোট ভাইয়ের পড়াশোনার খরচও জোগাতে শুরু করেন তিনি। সংসারের খরচও দেন মাঝেমধ্যে। বাবা-মায়ের কাছে বোঝা রুমা হয়ে ওঠেন সংসারের অন্যতম চালিকাশক্তি। পাশাপাশি পড়াশোনায়ও ভালো ছিলেন তিনি। এখন বিএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী।
স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট থেকে ‘উজ্জীবক’ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। প্রশিক্ষণের পর নিজেকে মেলে ধরেছেন আরও বড় পরিসরে। নিজে যেমন কাজ করছেন, অন্যদেরও কাজে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। তাঁর সংগ্রামী জীবনের কথা এখন হেমনগরের মানুষের অনেকেরই জানা। রাষ্ট্রীয়ভাবেও তাঁকে সম্মাননা জানানো হয়েছে। ২০১৪ সালে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হন রুমা।
রুমা বলেন, ‘নিজের ইচ্ছাটাই সব। সংগ্রাম করেছি এবং করে যাচ্ছি। যখনই শুনি বাল্যবিবাহের কথা, তখন তা বন্ধের জন্য মেয়ের বাবা-মাকে বোঝাই। কাজ না হলে জনপ্রতিনিধিদের জানাই। মেয়ে মানে সংসারের বোঝা নয়, তা সংসারের সহায়ক শক্তি বলেই মনে করি। পড়াশোনা শেষ করে তবেই বিয়ে করব। আমি মনে করি এখন আমাদের ইউনিয়নের বাল্যবিবাহের পরিমাণ অনেক কমেছে।’