Thank you for trying Sticky AMP!!

ঝুট কাপড়ের প্যাড 'এলা'

পোশাকশিল্পের নারীরা কাজের অবসরে ঝুট কাপড় দিয়ে বানাচ্ছেন প্যান্টি আর স্যানিটারি প্যাড। কাজটিতে হাত লাগিয়েছেন পুরুষেরাও। বানানো প্যাডগুলো জমা হচ্ছে কারখানাটির মেডিকেল সহযোগী তাহমিনা আক্তারের কাছে। এরপর পিরিয়ড বা মাসিকের সময় তাহমিনা আক্তারের কাছ থেকে প্যান্টি আর প্যাড নিয়ে ব্যবহার করছেন নারী কর্মীরা।

সাভারে অবস্থিত বেক্সিমকো গ্রুপের পোশাকশিল্প কারখানা এসেস ফ্যাশন লিমিটেডে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। কারখানাটিতে প্রায় ৭০০ নারী কাজ করেন। ইএলএলএ বা এলা প্রকল্পের অধীনে এই স্যানিটারি প্যাড তৈরি করছেন কর্মীরা।

এলা প্যাডের উদ্যোক্তা মামুনুর রহমান। তিনি জাতিসংঘে দীর্ঘদিন জেন্ডার বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বললেন, পোশাকশিল্প কারখানায় পোশাক তৈরির পর সেই পোশাক তো দূরে থাক, যে ঝুট কাপড় নিচে পড়ে থাকে, সেটি ধরারও কোনো অধিকার রাখেন না কর্মীরা। কিন্তু ‘এলা’ প্রজেক্টের অধীনে ধীরে ধীরে খুব ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও বদলে যাচ্ছে সেই চিত্র। কারখানার কাটিং টেবিল থেকে ফেলে দেওয়া সেই কাপড় দিয়েই মামুনুর রহমান হাতে–কলমে স্যানিটারি প্যাড বানানো শুরু করলেন গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে।

ব্রিটিশ এমপি রূপা হক এলা প্যাডের প্রশংসা করেছেন। ছবিটি হাউস অব কমন্সের ভেতর থেকে তোলা। সংগৃহীত

মামুনুর রহমানের যুক্তি হলো, দেশের নারীরা মাসিকের সময় কাপড় ব্যবহারে অভ্যস্ত। কাপড়টাকেই যদি জীবাণুমুক্ত করে সঠিক উপায়ে ন্যাপকিন হিসেবে ব্যবহার করা যায়, তা নারীরা ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন। আর এ প্যাডের দামও নাগালের মধ্যেই রাখা সম্ভব হবে; যদিও কর্মীরা বর্তমানে এ প্যাড ব্যবহার করছেন একেবারে বিনা মূল্যে।

কারখানাটির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. আমির ফয়সাল বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে আমাদের ইউনিটে এলা প্যাড বানানো শুরু করেছি। এখানে সফল হলে বেক্সিমকোর অন্যান্য কারখানাতেও চালু করা হবে।’ আর কারখানাটির মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান খালিদ শাহরিয়ার বললেন, ‘আমরা আগে কম দামে কিনে কর্মীদের প্যাড সরবরাহ করতাম। তখন ৩২ টাকা দিয়ে প্যাড কিনতে হতো। তাই বেশির ভাগই তা ব্যবহার করতেন না। আর ট্যাবুটাও ধীরে ধীরে ভাঙছে।

কারখানাটিতে কর্মরত ব্যক্তিরা জানালেন, ঝুট কাপড়গুলোকে পারমাণবিক শক্তি গবেষণা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা করে আনা হয়েছে। কারখানার একটি জায়গায় মাটি খুঁড়ে ব্যবহার করা প্যাড মাটিচাপা দেওয়া হয় এবং ১৮০ দিনের মধ্যেই তা মাটিতে মিশে যায়। অন্যদিকে, বাজারের প্লাস্টিকনির্ভর পদার্থ দিয়ে তৈরি প্যাডগুলো ৪০০ বছরেও পচে না।

মামুনুর রহমান বললেন, এলা প্যাডের বিশাল সম্ভাবনা আছে। মাত্র এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকায় যে–কেউ মেশিন আর জীবাণুমুক্ত টুকরো কাপড় কিনে তৈরি করতে পারেন এলা প্যাড। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে এলার উদ্যোগে বিভিন্ন কারখানায় এ ধরনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে এলা প্যাডের উদ্যোক্তা তৈরির আলোচনা চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে এক হাজার উদ্যোক্তা তৈরির প্রকল্প গ্রহণ করেছে এলা প্যাড।