Thank you for trying Sticky AMP!!

তবুও মাসুদা পড়াশোনা করছে

মাসুদা, স্কুলের সৃজনশীল কাজে অংশ নিত ,মাসুদা এখন

‘প্রকৃতির অপরূপ শোভা অনুভব করি, দেখতে পাই না। দেখতে পাই না সহপাঠী বন্ধুদের। তবুও হাল ছাড়িনি। করছি পড়াশোনা। চোখের দৃষ্টি ফিরে না পেলেও উচ্চশিক্ষা অর্জন করে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে কাজ করতে চাই।’ দুর্বৃত্তদের ছোড়া অ্যাসিডে দুটি চোখ নষ্ট হওয়ার পর নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলছেন মাসুদা আক্তার। তাই তো মুঠোফোনে দৃঢ় প্রত্যয়ে কথাগুলো বলল।

অ্যাসিডদদ্ধ নারীদের জন্য প্রথম আলো ট্রাস্ট সহায়ক তহবিলের সহযোগিতায় ২০১৫ সালের মার্চ থেকে ১০০০ টাকা শিক্ষাবৃত্তি ও একটি টেপরেকর্ডার দেওয়া হয়। মাসুদা এখনো পাচ্ছে এই বৃত্তি। সে চলতি বছর ঢাকার একটি বেসরকারি আবাসিক মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

মাসুদা রংপুর শহরের সেনপাড়ায় সমাজকল্যাণ বিদ্যাবীথি স্কুল ও কলেজে যখন নবম শ্রেণিতে পড়ত, তখন শহরের বাবু খা এলাকায় তারই বাড়ির আঙিনায় পাশের বাড়ির আরিফ নামে বখাটে এক যুবক অ্যাসিড ছুড়ে মারে। এই যুবক মাসুদার বিয়ের বয়স না হতেই বিয়ের প্রস্তাব দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় অ্যাসিড ছুড়ে মারে সে। ঘটনাটি ২০১২ সালের ১৩ আগস্টের।

অ্যাসিড ছোড়ার ফলে মাসুদার মুখ, পিঠ, হাতসহ শরীরের অনেক স্থান ঝলসে যায়। এরপর দীর্ঘদিন তার চিকিৎসা চলে। পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে দুই চোখেরই দৃষ্টিশক্তি হারায় সে।

 দীর্ঘ সময় চিকিৎসা চলার পর একসময় সুস্থ হয়ে ওঠে মাসুদা। চলাফেরাও করতে পারেন। সুন্দরভাবে কথা বলে। কিন্তু চোখ দুটো আর ভালো হয়নি।

মাসুদা কিছু দেখতে না পারলেও নতুন উদ্দীপনায় পড়াশোনা শুরু করে। মায়ের হাত ধরে স্কুল ও অন্যান্য জায়গায় যাতায়াত করে সে। বড় ভাই পড়েন আর মাসুদা শোনে। মুঠোফোনেও পড়া রেকর্ড করে দেওয়া হয়। এভাবেই পড়া আত্মস্থ করত সে। পরীক্ষার হলে মাসুদার কথা শুনে শুনে অন্য একজন খাতায় লিখে দেয়। ২০১৬ সালের এএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে অংশ নিয়ে ভালো ফলাফল করে।

পড়াশোনার পাশাপাশি আগে মাসুদার জীবন ছিল অন্য রকম। স্কুলের প্রায় সব সৃজনশীল কাজে অংশ নিত। ভালো ভলিবল খেলোয়াড় ছিল। নৃত্যশিল্পীও ছিল। আঁকাআঁকি করত। অ্যাসিডদগ্ধ হওয়ার আগে ২০১১ ও ২০১২ সালে মাসুদার স্কুল ভলিবলে চ্যাম্পিয়ন হয়। ওই দলে মাসুদাও ছিল।

মাসুদা বলে, ‘যত কষ্টই হোক, আমি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাই। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছে আছে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।’

এখন যেখানে পড়ছে মাসুদা, সেই কলেজের শিক্ষকেরা তাকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেন। সহপাঠীরাও সহযোগী মনোভাবাপন্ন।

মাসুদা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় বাবা মহুবার ইসলাম মারা যান। বড় দুই ভাই ও মাকে নিয়ে তাদের অভাব-অনটনের সংসার। দুই ভাই ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন।

সমাজকল্যাণ বিদ্যাবীথি স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নাহিদ ইয়াসমীন বললেন, ‘মেয়েটির জন্য কষ্ট হয়। অনেক কষ্ট করে সে মানবিক বিভাগ থেকে ভালোভাবেই পাস করেছে। সে খেলাধুলাতেও বেশ পারদর্শী ছিল।’

নিজে পড়াশোনা করতে পারেননি। একমাত্র মেয়ের আগ্রহ দেখে কষ্ট করেই মাসুদার পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন তার মা সুলেখা পারভিন। তিনি বললেন, ‘পরিবারে অভাব আছে। মেয়ের ইচ্ছে পড়াশোনা করবে। আমি তার হাত ধরে ধরে ছুটে বেড়াই। এখানে-ওখানে যাই।’ তাঁরও আশা, মেয়ে একদিন উচ্চশিক্ষিত হয়ে পরিবার ও সমাজের জন্য কাজ করবে।