Thank you for trying Sticky AMP!!

তিন কিশোরী এতিমখানায় ফিরেছে

লালমনিরহাটের আল-নাহিয়ান শিশু পরিবারের (এতিমখানার) বাসিন্দা সেই তিন কিশোরী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের দিন সকালে আবার এতিমখানায় ফিরে এসেছে। তারা ১৪ মার্চ থেকে ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে ছিল।

৫ মার্চ সকালে ওই তিন কিশোরী শিশু পরিবারের ভেতরে শৌচাগার পরিষ্কারের কাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত ফিনাইল পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাদের উদ্ধার করে শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ প্রথমে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সে সময় শিশু পরিবারের পক্ষ থেকে ঘটনার জন্য তাদের নিজেদের মধ্যকার ঝগড়ার কথা বলা হয়েছিল।

এ নিয়ে ৮ মার্চ প্রথম আলোর উত্তরাঞ্চল সংস্করণে ‘এতিমখানায় তিন কিশোরীর আত্মহত্যার চেষ্টা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ১৮ মার্চ প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে ‘তিন এতিম কিশোরী কেন মরতে চেয়েছিল’ শিরোনামে বিশ্লেষণধর্মী বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রথম আলোর উত্তরাঞ্চল সংস্করণ ও অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত প্রতিবেদন আমলে নিয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর (জেলা ও দায়রা জজ) লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবর ২০ মার্চ ‘লালমনিরহাটে ৩ কিশোরীর আত্মহত্যার চেষ্টা’ সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানোর অনুরোধ করেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ ২৫ মার্চ জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বরাবর এ-সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

ওই ঘটনার পর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ ঘটনার কারণ ও প্রতিকার নির্ণয়ের জন্য লালমনিরহাট সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জয়শ্রী রানী রায়কে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তিন কিশোরী রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে আল-নাহিয়ান শিশু পরিবারে ১২ মার্চ ফেরে। ওই দিন ইউএনও নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্যরা তিন কিশোরীসহ অন্যান্যদের লিখিত সাক্ষ্য ও বক্তব্য গ্রহণ করেন। এরপর ওই তিন কিশোরী ১৪ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত ছুটিতে তাদের বাড়িতে অবস্থান করে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে শনিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ওই তিন কিশোরী শিশু পরিবারে অবস্থানকালে বাইরের লোকজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা ছাড়াও পড়াশোনা বাদ দিয়ে খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এ সময় তারা বহিরাগত ছেলেদের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়ায়। বিষয়টি শিশু পরিবারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নজরে এলে তাদের মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়। সাবধান না হলে তাদের নাম কেটে বের করে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। এ কারণে তারা একে অন্যকে দায়ী করে ফিনাইল পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে।

জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তদন্ত কমিটি তাদের সুপারিশে ১০টি দিকনির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে সার্বিক নিরাপত্তা, সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নিয়মিত সবকিছু মনিটরিং করা, বহিরাগত ও মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশে তিন কিশোরীকে শিশু পরিবার থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হলেও মানবিক কারণে তা করা হয়নি। এরা আগের মতোই এখানে থেকে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারবে।

ওই তিন কিশোরীর একজন স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বলে, ‘আমরা ভুল করেছিলাম, আমাদের সংশোধনের সুযোগ দিয়ে এখানে আবারও থাকার সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে।’