Thank you for trying Sticky AMP!!

দর্পণ

অলংকরণ: মাসুক হেলাল

কালভার্টটার নিচ দিয়ে প্রবহমান একটা দর্পণ। যার মানে আয়না। আমরা দুজন বিকেল হলেই তাকিয়ে থাকতাম জীবন্ত সেই আয়নায়। কখনো হাসি, কিছুটা খুনসুটি, মৃদু হাওয়ায় এলো চুল, মাথার ওপর নীলচে আকাশটায় ভেসে যাওয়া সাদা মেঘ, কোনো কিছুই আড়াল করত না দর্পণটা। গ্রামের বালকটার সাইকেলের টুংটাং, ওর চুড়ির রিনিঝিনি, কাচভাঙা হাসি আর মফস্বলের পড়ন্ত বিকেলে বাতাসের নৈবেদ্য, সব একাকার হয়ে যেত দর্পণটায়।
দর্পণটা থাকত চুপচাপ, কখনো দুষ্টু বালিকার মুচকি হাসি, কিংবা নাচের মুদ্রার মতো আলতো বাঁক। তবে যা-ই হোক, কোনো শব্দই হতো না। আমরা শুধুই তাকিয়ে থাকতাম, আর তাকিয়ে থাকতাম। বিকেল গড়িয়ে প্রদোষের মায়া পেরিয়ে আঁধার নামত জাঁকিয়ে, রাত চলে যেত, প্রবল সূর্যটা নতুন একটা ভোর নিয়ে আসত, গনগনে মধ্যদুপুর, আরেকটি বিকেল, আমরা তাকিয়েই আছি। ওর চোখের তারা, সেটা তো আরেক দর্পণ, তার ওপারে এক মহাশূন্য, তাকিয়ে তাকিয়ে পাঠ নিতাম তার, প্রতিদিন। কত জলই না বয়ে যেত দর্পণটায়, কিন্তু কী আশ্চর্য, যেন এইমাত্র তাকিয়েছি। কী তড়িৎ সময়ই না ছিল সেটা, কী আশ্চর্য সময়ই না ছিল!
সেদিন সকাল থেকেই আকাশটায় কাল মেঘ। বুকভরা অসহ্য ব্যথা বয়ে ক্লান্ত, এক সমুদ্র অশ্রু না ঝরিয়ে আজ আর জো নেই। আজও দর্পণটা অপলক তাকিয়ে আছে। কোনো নড়াচড়া নেই, নেই কোনো তরঙ্গ। গুমরে আছে যেন। আজ আরেকজন নেই চেনা কালভার্টটায়। এক জোড়া চোখ, এক নদী জল আর এক পৃথিবী প্রশ্ন নিয়ে তাকিয়ে আছে দর্পণটায়। আর হয়তো কোনো চুড়ি বাজবে না, হাসবে না কোনো সুহাসিনী। কী আশ্চর্য, আকাশটাও আচমকা ঢেলে দিল ওর দুঃসহ ব্যথা, কী অকৃপণ, কী উদার।
বৃষ্টির ঠান্ডা জলে ধুয়ে গেল নয়নের ঈষদুষ্ণ নোনা অশ্রু। দর্পণটাও ভিজে গেল উথালপাতাল দুঃখরাশিতে। আর দূরে যে লাল
নীল আলো জ্বলা, হলুদ লাল কাগজে সাজানো পানসি নিয়ে যাচ্ছে এক নববধূকে, যার অসহায় ছলছল চোখ তাকিয়ে আছে বোবা কালভার্টটায়, সেই জোড়া দর্পণের ভাষা...না, আর পড়া হলো না।
মাতুয়াইল, ঢাকা।