Thank you for trying Sticky AMP!!

দুঃসময় পার করব একসঙ্গে : অ্যালিসন ফেলিক্স

>২০১২ সালের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন, সেই সঙ্গে তিনবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়া মার্কিন নারী দৌড়বিদ অ্যালিসন ফেলিক্স। এ বছরও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, কিন্তু করোনার প্রকোপে স্থগিত হয়ে গেছে টোকিও অলিম্পিক গেমস। তবু আশা হারাননি তিনি। কেন? টাইম সাময়িকীর অনলাইন সংস্করণে সে কথাই লিখেছেন।
অ্যালিসন ফেলিক্স

সকাল থেকে ভীষণ একাকিত্ব, ভয় আর অনিশ্চয়তায় ভুগছি। আমি এবং আমার সঙ্গে সারা পৃথিবী জেনে গেছে, কোভিড-১৯ রোগের প্রকোপে ২০২১ সাল পর্যন্ত টোকিও অলিম্পিক গেমস পিছিয়ে গেছে। আমি জানি না তাতে আপনাদের কী অনুভূতি হচ্ছে—হয়তো খেলাধুলা আপনাদের কাছে শুধুই একটা বিনোদনের মাধ্যম। হয়তো অলিম্পিক আপনাদের মনে একটা উষ্ণ অনুভূতি দেয়—হ্যাঁ, ভালো কিছুর জন্য গোটা পৃথিবী এক হতে পারে। অথবা হয়তো আপনিও আমার মতো একজন অলিম্পিকের খেলোয়াড়, খবরটা আপনার হৃদয় ভেঙে দিচ্ছে। সেই ১৭ বছর বয়স থেকে, গত ৬ হাজার ৫৫ দিন ধরে প্রতিটি সকালে আমি অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ঘুম থেকে উঠেছি।

কী হারালাম, কী হতে পারত, এসব না ভাবা খুব কঠিন। কখনো কখনো কোনো কিছু পাওয়ার স্বপ্ন এত তীব্র হয় যে আমরা মনে মনে ভাবতে শুরু করি, আমি পেয়েই গেছি, এটা আমার! স্বপ্নভঙ্গ হলে তখন বাস্তবে পা রাখি। বুঝতে পারি, স্বপ্ন সত্যি হতে ‘বাধ্য’ নয়, অনায়াসে স্বপ্ন পূরণ হয় না।

এখন পর্যন্ত গত দুই বছর ছিল আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে কঠিন সময়। অনেক ত্যাগস্বীকার করতে হয়েছে। প্রশিক্ষণের জন্য পুরো পরিবার নিয়ে মিশিগান থেকে ক্যালিফোর্নিয়া চলে এসেছি। আমার অলিম্পিকের স্বপ্ন পূরণ করতে আমার স্বামী চাকরি ছেড়েছেন। আমার কোচ বব কারসি প্রতিদিন দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন, যেন আমি বাড়ির কাছাকাছি থেকে, আমার এক বছর বয়সী মেয়েটার কাছে থেকে অনুশীলন চালিয়ে যেতে পারি। এত ত্যাগ ছিল বলেই এখন তীব্র হতাশায় পেয়ে বসা স্বাভাবিক।

আপনিও হয়তো একাকিত্ব, ভয়, অনিশ্চয়তায় ডুবে থেকে এই লেখাটা পড়ছেন। হয়তো এত দিন নিজেকে উজাড় করে দিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করে গেছেন, আর স্রেফ পাঁচ শব্দে এই সব অর্জন বৃথা হয়ে গেছে, ‘আপনাকে আমাদের বিদায় দিতে হচ্ছে।’ আপনি হয়তো একজন ব্যবসায়ী। সব বাধা পেরিয়ে হয়তো একটা অনবদ্য ‘আইডিয়া’ বাস্তবায়ন করার জন্য ছুটেছেন। ঝুঁকি নিয়ে একটি ট্রাক কিনে ফেলেছেন, স্বপ্নের পেছনে ছুটেছেন, ভীষণ ব্যস্ত থেকেছেন, আর এখন হঠাৎই সব ফেলে একাকিত্ব, ভয়, আর অনিশ্চয়তা নিয়ে ঘরে বসে আছেন। ভাবছেন, ব্যবসাটা আবার শুরু করতে পারব তো! হয়তো একটা নতুন প্রাণকে আপনাদের পরিবারে আমন্ত্রণ জানাতে ভীষণ রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন, অথচ এখন আপনার মন দখল করে নিয়েছে একাকিত্ব, ভয় আর অনিশ্চয়তা। কারণ আপনি জানেন না, ছয় মাস পরের পৃথিবীটা কেমন হবে। আমাদের চারপাশে শুধু হারানোর খবর। এই সময় নেতিবাচক বিষয়গুলোর থেকে চোখ ফিরিয়ে রাখা খুব কঠিন। যা হারিয়েছি, তার জন্য আমাদের কষ্ট পেতে হবে। সবাই এক হয়ে অন্যের কষ্টে সহমর্মী হতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে মনে আশা রাখতে হবে।

স্বর্ণপদক বা বিশ্বরেকর্ড নয়, ৬ হাজার ৫৫ দিন ধরে আমাকে পথচলার সাহস জুগিয়েছে ‘আশা’। স্বপ্ন পূরণের আশা, অন্ধকার কেটে যাওয়ার আশা, সততার সঙ্গে পরিশ্রম করে যাওয়ার আশা—যত বাধাই আসুক না কেন। আজকের দিনটিও এর ব্যতিক্রম নয়।

আজ, আমার বয়স ৩৪, আর আমি আপনাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই আশার বার্তা। এখন সবকিছুই অনিশ্চিত। ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমরা, ক্ষতির পরিমাণও অভাবনীয়। কিন্তু একটি বৈশ্বিক জনগোষ্ঠী হিসেবে এক বুক আশা নিয়েই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কালও আমাদের ঘুম থেকে উঠতে হবে।

জানি না ভবিষ্যতে কী হবে, কিন্তু আমার লক্ষ্য এখনো বদলায়নি। আমি এখন ২০২১ সালে ওই পোডিয়ামে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখি। নিরাপদে থাকুন, ঘরে থাকুন, হাত ধোন, ভালোবাসুন, একে অন্যের খোঁজ রাখুন। এই দুঃসময় আমরা পার করব, একসঙ্গে।

ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ