Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই পাহাড়ের মাঝে ঘাসের সেতু

এই জুন মাসেই উদ্বোধন করা হয়েছে ঘাসের দড়ি দিয়ে তৈরি সেতুটি

দুই পাহাড়কে আলাদা করেছে খরস্রোতা এক নদী। সেতুটি তৈরি হয়েছে দুই পাহাড় আর পাহাড়ি মানুষদের সংযুক্ত করতেই। তবে সেতুটি ঘাসে বোনা দড়ির তৈরি! কল্পনা নয়, এটা বাস্তব।

পেরুর কাস্কো প্রদেশের আপরিমাক নদীর ওপর একই জায়গায় ৬০০ বছরের বেশি সময় ধরে তৈরি হচ্ছে ইনকা সভ্যতার সেতুটি। যার নাম কেসওয়াচাকা। পাহাড়ি গ্রামের সঙ্গে ইনকা সাম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কিছু শহর-বন্দরকে একত্রে সংযুক্ত করত এই সেতু। ২০১৩ সালে ইউনেসকো থেকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শনের মর্যাদাও পায় কেসওয়াচাকা।

কেসওয়াচাকা সেতুটি প্রতিবছর নতুন করে তৈরি করা হয়। সেতুটি মোট ছয়টি মোটা দড়ি দিয়ে তৈরি করা হয়, চারটি থাকে সেতুর মেঝে হিসেবে আর দুই পাশে ধরার জন্য দুটি মোটা দড়ি লাগে। দড়িগুলো তৈরি করা হয় ‘কোয়া ইচু’ নামের অসম্ভব শক্ত এক জাতের ঘাস দিয়ে। দড়িগুলোকে আরও মজবুত ও টেকসই করার জন্য ঘাসগুলোকে দড়ি হিসেবে পাকানোর আগে পানিতে ভিজিয়ে, পাথরে পিটিয়ে নেওয়া হয়। সেতুটির মূল দড়িগুলো প্রায় এক ফুট মোটা হয়, যাতে প্রায় ১২০টি ছোট দড়ি থাকে।

সেতু তৈরির প্রথম দিনে স্থানীয় পুরুষেরা এক হয়ে দড়িগুলোকে সাজায়। নদীর গিরিখাতের দুই পাশের বড় পাথরের সঙ্গে বেঁধে সেতু তৈরি শুরু হয়। এটি তৈরির সময় কোনো ধরনের আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না। প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী কাঠ, কুড়াল আর মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠে নতুন সেতু। এই সেতু তৈরির বেশির ভাগ সময় দড়িগুলো বাঁধার পর এটি কতটা শক্তিশালী হলো সেটি নির্ণয় করতে চলে যায়। ঘাসের তৈরি সেতুটি তৈরিতে সময় লাগে ঠিক চার দিন।

প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে কেসওয়াচাকাকে নতুন করে তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন স্থানীয় ইনকা গ্রামবাসী। গ্রামের প্রতিটি পরিবার অন্ততপক্ষে দুটি মোটা দড়ির অংশবিশেষ তৈরি করে থাকে। কিন্তু সেতু নির্মাণে যে মোটা দড়িগুলো ব্যবহৃত হয়, তা শুধু পুরুষেরাই তৈরি করে থাকেন। নারীরা অপেক্ষাকৃত ছোট দড়িগুলো তৈরি করেন। প্রতিবছর জুনের দ্বিতীয় রোববার সেতু তৈরির কাজ শেষ হয়। এর আগে চার দিন ধরে খাদ্য, পানীয় আর সুরের মূর্ছনায় ডুবে যাওয়া গ্রামগুলো যেন হয়ে ওঠে প্রাচীন ইনকা সাম্রাজ্যের জীবন্ত উদাহরণ।

সামিহা আকবর

সূত্র: বিবিসি