Thank you for trying Sticky AMP!!

দুই ভক্তের হুমায়ূন–ভুবন

লেখক হুমায়ূন আহমেদের পাঠক-ভক্ত রাহাত জামিলের উদ্যোগ ‘হুমায়ূনের ভুবন’। প্রিয় লেখকের সৃষ্টিকর্ম অনলাইনে রাখা, নতুন পাঠকের কাছে তুলে ধরাই যাঁর উদ্দেশ্য। রাহাতের এ উদ্যোগে যুক্ত আছেন মোস্তাফিজুর রহমান। আজ ১৩ নভেম্বর হুমায়ূন আহমদের জন্মদিনে ঘুরে আসা যাক দুই তরুণ ভক্তের হুমায়ূন–ভুবন।

‘হুমায়ূনের ভুবন’ ওয়েবসাইট

গুরুপূর্ণিমার রাতে যত কাণ্ড নামে লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীবের একটি বই আছে। বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন রাহাত জামিলকে। কে এই রাহাত জামিল? বইয়ের উৎসর্গে হুমায়ূন সহোদর লিখেছেন, ‘রাহাত জামিল: সে নিজে চমৎকার লেখে। কিন্তু তার সমস্ত কৌতূহল হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে। হুমায়ূন আহমেদের লেখালেখি নিয়ে একটা আর্কাইভের জন্য সে এককভাবে যুদ্ধ করে চলেছে।’

রাহাত জামিলের সেই ‘হুমায়ূনের ভুবন’ নামের ‘যুদ্ধ’ নিয়ে আলাপ করছিলাম ১০ নভেম্বর। সেদিন পর্যন্ত যা ছিল দুই লাখ ব্যবহারকারীর একটি ফেসবুক পেজ। যে পেজে হুমায়ূন আহমেদসংক্রান্ত নানা বিষয় পোস্ট করা হয়। যেমন সেদিন সর্বশেষ পোস্ট ছিল একটি ছবি। অয়োময় নাটকের শুটিং মুহূর্তের ছবিতে দেখা যাচ্ছে অভিনেতা আবুল হায়াত, আসাদুজ্জামান নূরসহ কয়েকজনকে। ছবির সঙ্গে নাটকের কিছু তথ্যও আছে।

এর আগের পোস্ট হুমায়ূন আহমেদের বড় বোন সুফিয়া হায়দার শেফুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে। যেখানে তাঁর সম্পর্কে স্মৃতিচারণা করে একটি লেখা আছে, সঙ্গে আছে পুরোনো একটি ছবি। আর আগের পোস্টে জানা যাচ্ছে আসাদুজ্জামান নূরের সঙ্গে সুবর্ণা মুস্তাফার প্রথম পরিচয় পর্বের কথা। সুবর্ণার লেখাটি পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করে এখানে প্রকাশ করা হয়েছে। প্রসঙ্গক্রমে হুমায়ূনের উপস্থিতির আঁচও আছে।

লেখার প্রতি অপার ভালোবাসা থেকে ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে ফেসবুকে এই পেজ চালাচ্ছেন তাঁরা। হুমায়ূন আহমেদের বই নিয়ে লেখা, তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণা, কোনো মজার ঘটনা বা চমকপ্রদ তথ্য, গুণমুগ্ধ পাঠকের অভিজ্ঞতা পোস্ট করা হচ্ছে। এসব নিয়ে হুমায়ূনের ভুবন নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। তবে ১১ নভেম্বর সন্ধ্যায় ‘হুমায়ূনের ভুবন’ ওয়েবসাইটও (www.humayunahmed.net) যাত্রা করেছে।

দুই হুমায়ূন ভক্ত রাহাত জামিল ও মোস্তাফিজুর রহমান

রাহাত জামিল বলছিলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্টিকর্মের পরিচিতি, তাঁর সাহিত্যের আলোচনা ও সমালোচনা, সাক্ষাৎকারসহ নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছে ওয়েবসাইটে। যা আমাদের সংগ্রহে রয়েছে, ধীরে ধীরে তা আপলোড করা হবে।’

আপনাদের সংগ্রহে কী আছে? রাহাত জামিলের চটপট উত্তর, ‘হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখা প্রায় ১৫০ বই, শতাধিক সাময়িকী, স্মারক, বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রায় ৮০০ লেখা সংগ্রহ করেছি। বই সম্পর্কে তথ্য, স্বত্বহীন লেখাগুলো তুলে ধরব পাঠকদের জন্য।’

রাহাতের এসব সংগ্রহ অনলাইনে সংরক্ষণে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুজনেই হুমায়ূনের ভক্ত। তাঁদের পরিচয় হিমু পরিবহন নামে হুমায়ূন আহমদের পাঠকদের সংগঠনে। দুজনই হিমু পরিবহনের সদস্য। রাহাত একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের পাশাপাশি এসিসিএ পড়ছেন, মোস্তাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র।

হুমায়ূন পাঠের গভীরে

রাহাত ও মোস্তাফিজ হুমায়ূন আহমেদকে নতুনভাবে আবিষ্কার করেছেন প্রিয় লেখকের মৃত্যুর পর। ছোটবেলা থেকে হুমায়ূনের লেখার সঙ্গে পরিচয় দুজনের। ২০১২ সালে হুমায়ূনের মৃত্যুর পর প্রথম আঁচ করলেন, তাঁরা আর লেখকের নতুন কোনো বই পড়ার সুযোগ পাবেন না। মোস্তাফিজ বলেন, ‘তখন যেন ভেতরাটায় শূন্যতা অনুভব করলাম। প্রথম বুঝলাম হুমায়ূন আহমেদের প্রতি মুগ্ধতা। বুঝলাম, অজান্তেই একজন লেখক কত বড় আসন দখল করে রেখেছেন।’

সেই লেখকের জন্য নিজেদের ভালোবাসা প্রকাশ করলেন রাহাত জামিল। ফেসবুকে ‘হ‌ুমায়ূনের ভুবন থেকে’ নামে নিজের ওয়ালে পোস্ট করতে থাকলেন নানা লেখা ও ছবি। প্রতিবছর লেখকের জন্ম ও মৃত্যু মাসজুড়ে এমন পোস্ট করতেন তিনি। ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। রাহাত বলেন, ‘আমার ব্যক্তিগত প্রোফাইল থেকে পোস্ট না করে বেশি মানুষকে যুক্ত করতেই পেজ চালু করলাম। এখনো তা চলছে। আমি প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা সময় বরাদ্দ রাখি হুমায়ূন আহমেদের জন্য।’

এ উদ্যোগের পরই বুঝলেন, হুমায়ূন আহমেদের লেখাগুলো হয়তো মানুষ তাঁর বইয়ে পাবেন। কিন্তু লেখককে নিয়ে বিশেষ করে তাঁর মৃত্যুর যা লেখা হয়েছে, সেসব মানুষের কাছে পৌঁছানো দরকার। হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য, চলচ্চিত্র, নাটকসহ সব সৃষ্টি সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে কৌতূহলী করে তোলা।

রাহাত বলেন, ‘আমরা সেই রসদের জোগান দিচ্ছি।’

হুমায়ূনের ভুবন যে গবেষকদেরও নজরে থাকা, তা বোঝা গেল নরসিংদী সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও হুমায়ূন সাহিত্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনকারী মো. ছাইদুর রহমানের কথা। তিনি বলছিলেন, নতুন পাঠকের কাছে পৌঁছানোর জন্য হুমায়ূনের ভুবন খুব ভালো একটি উদ্যোগ। তাঁরা এমন অনেক কিছু পেজে দেন, যেগুলো মানুষকে কৌতূহলী করে তোলে।’

ছাইদুর রহমান উদাহরণ দিয়ে বললেন কোথাও কেউ নেই নাটকের কথা। এ নাটক নিয়ে সে সময় যে ঘটনা ঘটেছিল, পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল, তা হয়তো এ প্রজন্মের অনেকের অজানা। যখন সে সময়ের পেপার কাটিং তাঁরা দেখে, তা নতুনভাবে ভাবায়। হুমায়ূন পাঠে আগ্রহী করে তোলে। রাহাত আর মোস্তাফিজ হয়তো এখানেই সার্থকতা খুঁজে পান।